প্রায় ১ মাস আগে শুরু হয়েছিল সংঘাত। এর জেরে নিহত হয়েছেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের প্রায় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা। বাংলাদেশেও পালিয়ে এসেছেন লাখ চারেক রোহিঙ্গা। তবে এখনও শেষ হয়নি সহিংসতা জ্বালাও-পোড়াও। এখনও জ্বলছে রাখাইন রাজ্য। পুরো রাখাইন যেন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার রাখাইনের তমব্রু সীমান্ত এলাকা ঘুরে এসেছেন জাগো নিউজের ফটো সাংবাদিক বিপ্লব দিক্ষিৎ। সীমান্তে অবস্থানরত কয়েকজন রোহিঙ্গার অনুরোধে সেই বর্বর চিত্র ধারণে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ওপারে যান তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের আরেকটি অনলাইন পত্রিকার এক প্রতিবেদক।
সেখানে দুই ঘণ্টা অবস্থান করে ফিরে এসে বিপ্লব দিক্ষিৎ জানান, মানবতা আর সংবাদ সংগ্রহের জন্য ভেতরে ঢোকার আগ্রহ হয়। যদিও মনে ভয় কাজ করছিল। ভেতরে ঢুকে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো সব লণ্ডভণ্ড অবস্থায় দেখেছি। কোথাও কাপড়, কোথাও পোড়া মোটরসাইকেল আর পরিত্যাক্ত ট্র্যাক্টর। একটি ঘরে গিয়ে দেখলাম কোরআন শরীফ পড়ে আছে। ঘরের দেয়ালে কাপড় ঝুলতে দেখলাম। দেখে বোঝা যাচ্ছিল সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের সময় পড়নের কাপড়েই পালিয়েছিল রোহিঙ্গারা। আর কিছুই নিতে পারেনি।
প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে বিপ্লব দিক্ষিৎ জানান, সীমান্তের পাশ দিয়ে অনেক লোককে হেঁটে যেতে দেখেছি। তবে তাদের চোখে মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। আমরা কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছি। কথা বলার সময় ছোটখাটো কোনো শব্দ হলেই আঁতকে উঠেন তারা। এদিক ওদিক তাকাতে থাকেন। সীমান্ত জুড়ে ছিল লাশের গন্ধ।
Advertisement
বিধ্বস্ত রাখাইন রাজ্যের ঘরগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, সীমান্তে একটি ঘরে আমরা তালা দেখতে পাই। বাকি সবগুলোতেই ছিল জরাজীর্ণ অবস্থা। ভেতরে পোড়া গন্ধ। সব ঘর খালি। জিনিসপত্র নেই। সব লুট হয়েছে। গোয়াল ঘর শূন্য, গরুগুলো চুরি হয়ে গেছে।
রাখাইন গ্রাম এখন শুধুমাত্র লাশ পোড়া গন্ধ আর ধ্বংসস্তূপ বলে জানাচ্ছে সদ্য বাংলাদেশে ঢোকা রোহিঙ্গারা। নাসিমা খাতুন নামে এক রোহিঙ্গা জানান, আমাদের ও আমার বোনের পাঁচটি ঘরে মগ ও সেনাবাহিনী আগুন দিয়েছে। বাড়ি থেকে কিছু আনতে পারিনি। চোখের সামনে ঘর পুড়ছে, দাঁড়িয়ে দেখছি। কিছুই করার ছিল না।
গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন আর ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। একমাস হলেও এখনও আতঙ্কে কাটছে না মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে।
এআর/জেএইচ/আইআই
Advertisement