জাতীয়

ছাদে ছাগলের হাট

মধ্য বয়সী মো. আকরাম আলী পরিবারের পচ্ছন্দ অনুযায়ী এবার কোরবানি দেবেন ছাগল। তাই ছাগল কিনতে রাজধানীর গোলাপবাগ অস্থায়ী পশুর হাটে যান। হাটে গিয়েই বাধল বিপত্তি। পুরো হাট চক্কর দিয়েও কোথাও কোনো ছাগলের দেখা পেলেন না তিনি।

Advertisement

প্রথমে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাশের গেট দিয়ে ঢোকেন হাটে। ঢুকেই ডান-বামে দেখেন শুধু গরু আর গরু। কোথাও ছাগল চোখে পড়ছে না। অথচ মাইকে বারবার বলা হচ্ছে বিশাল গরু-ছাগলের হাট।

পুরো হাট ঘুরে কোনো ছাগল দেখতে না পেয়ে একপর্যায়ে এক গরু ব্যবসায়ীর কাছে ছাগল কোথায় বসেছে জানতে চান আকরাম আলী। উত্তরে ওই ব্যবসায়ী তাকে বলেন, ‘মামা ওই গেট (গোলাপবাগ চৌরাস্তা সংলগ্ন গেট) দিয়ে যান। এ পাশে ছাগল পাবেন না, সব গরু।’ এরপর সেদিক দিয়ে বের হয়ে আকরাম আলী গোলাপবাগ চৌরাস্তা সংলগ্ন গেট দিয়ে হাটে প্রবেশ করেন। গেট দিয়ে প্রবেশ করেই হাতের ডান পাশে দেখতে পান মঞ্চ তৈরি করে পুলিশ সদস্যরা বসে রয়েছেন এবং বাম দিকে হাটের বিষয়ে যারা মাইকিং করছেন তারা মঞ্চ তৈরি করে বসে আছেন।

গেট দিয়ে প্রবেশ করে বেশকিছু দূর গিয়েও কোনো ছাগল দেখতে না পেয়ে, যারা মাইকিং করছেন তাদের কাছে ফিরে আসেন আকরাম আলী। জানতে চান ছাগলের হাট কোথায় বসেছে? উত্তরে মঞ্চ থেকে একটি গলি দেখিয়ে বলা হয়, এই দিক দিয়ে সামনে যান ছাগল দেখতে পাবেন।

Advertisement

এবার তাদের দেখানো পথে হাঁটতে থাকেন ওই মধ্য বয়সী। কিন্তু গলির শেষ মাথায় পৌঁছেও কোনো ছাগল পেলেন না। এ পরিস্থিতিতে গলির শেষ মাথায় গরু নিয়ে বসা এক ব্যবসায়ীর কাছে ছাগলের হাট কোথায় বসেছে জানতে চান। উত্তরে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ছাগলের হাট ‘ছাদে’।

উত্তরটা বুঝতে একটু বিড়ম্বনায় পড়েন আকরাম আলী। ফলে আবার তাকে প্রশ্ন করেন ভাই কোথায় বললেন। এবার ওই ব্যবসায়ী সামনের বিল্ডিংয়ের ছাদ দেখিয়ে বললেন ওই ছাদে যান, ওখানে ছাগলের হাট। হাট থেকে বের হয়ে মেইন রোডে যান ছাদে ওঠার সিঁড়ি দেখতে পাবেন। তারপর হাট থেকে বের হয়ে মেইন রোড ধরে কিছুদূর এগুতেই ছাদে ওঠার গেট দেখতে পান আকরাম আলী। চারজন ব্যবসায়ী মাত্র ২৩টি ছাগল নিয়ে বসে আছেন। এর মধ্যে মাত্র একটি বড় ছাগল। বাকি সবগুলোই দেখতে বাচ্চার মত। হাটের এ চিত্র দেখে ছাগলের আর দাম না করেই, সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন আকরাম আলী।

বুধবার ছাদের হাট থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের কাছে ছাগলের হাট নিয়ে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন আকরাম আলী। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ছাগলের হাট কি এখানে। উত্তরে তিনি ওই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন।

এরপর ছাদে গিয়ে দেখা যায়, ২৩টি ছাগল নিয়ে ছাদের ওপর চারজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন এসেছেন সিরাজগঞ্জ থেকে এবং একজন মাগুরা থেকে।

Advertisement

সিরাজগঞ্জ থেকে হাটটিতে ছাগল নিয়ে আসা ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, তারা তিনজন মিলে ১৮টি ছাগল বুধবার ভোরে হাটটিতে নিয়ে এসেছেন। ছাগল আনার পর দু-একজন এসে ঘুরে দেখছেন কিন্তু কেউ দরদাম করছে না।

এ হাটে কীভাবে আসলেন জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, আমরা কমলাপুর হাটে যাব বলে সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছি। কিন্তু রাস্তার মধ্যে থেকে এক নারী জোর করে এখানে ধরে এনেছে। আমাদের বলা হয়েছে, এখানে অনেক বড় হাট বসে। বিক্রিও বেশি হয়। কিন্তু এখন দেখি হাটে ছাগলই নেই।

এরপর হতাশার সুরে ওই ব্যবসায়ী বলেন, বাবা এখানে ছাগল বিক্রি করতে পারব তো। এ হাটে মানুষ আসবে তো।

শহিদুল ইসলামের কাছে ছাগলের দাম জানতে চাইলে সব থেকে বড় ছাগলটি দেখিয়ে তিনি বলেন, এটা ৩৫ হাজার টাকা হলে বিক্রি করব। ছাগলটি আমার কেনাই পড়েছে সাড়ে ২৫ হাজার টাকায়। এরপর ছাগলের খাওয়ানো এবং ঢাকায় আনতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি না করতে পারলে লাভই হবে না।

এমএএস/জেএইচ/এমএস