চোখের আলো হারিয়ে গেলেও সিদ্দিকুর রহমানের মনোবল অনেক বেশি। এই মনোবল দিয়ে তিনি ঘুরে দাঁড়াতে চান। তবে এজন্য প্রয়োজন সরকারিভাবে সহায়তা ও স্থায়ী চাকরি।
Advertisement
সোমবার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সিদ্দিকুরের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজেকে ঘুরে দাঁড় করানোর কথা জানান তিনি।
সিদ্দিকুর বলেন, ‘আমি চোখের আলো হারিয়ে ফেলেছি। তাই বলে জীবনের সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে নিজের মনোবল দিয়ে আমি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে একদিন অনেক বড় মানুষ হব। আমার চোখের আলো কেড়ে নেয়ায় সে স্বপ্ন কিছু সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিল। আমি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাই। তাই সরকারের কাছে আমি একটি স্থায়ী চাকরি ও পুনর্বাসনের দাবি করছি।
Advertisement
সিদ্দিকুরের মা সুলেখা খাতুন জানান, সিদ্দিকুর নিয়মানুযায়ী খাওয়া-দাওয়া করছে। সে দিনে-রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছে। ইচ্ছে হলে সঙ্গে কাউকে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। তবে আজ সকাল থেকে সিদ্দিকুর শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল অনুভব করছিল। তাই দুপুরে ডাক্তার এসে দেখে গেছেন।
সিদ্দিকুরের চিকিৎসক ড. জাহিদ হাসান মেনন জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল রোববার আমরা (বোর্ড সদস্যরা) দু দফায় সিদ্দিকুরকে দেখেছি। চোখের আলো ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাওয়া যায়নি। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আজ ও মঙ্গলবার সরকারি ছুটি থাকায় বুধবার আবারও সিদ্দিকুরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সিদ্দিকুরের চোখের চারপাশে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চোখের ক্ষত স্বাভাবিক হলে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হতে পারে।
গত ২০ জুলাই সকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে নীতিমালা প্রণয়নসহ সাত দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে যান।
Advertisement
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার পর পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ হঠাৎ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানকে (২৩) ঢাকা মেডিকেল থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তখন সেখানকার চিকিৎসকরা বলেন, সিদ্দিকুর চোখে আলো দেখার সম্ভাবনা কম। এরপরই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিদ্দিকুরকে চেন্নাই পাঠানো হয়। সেখানে শংকর নেত্রালয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফিরে আসেন।
২০ জুলাইয়ের ঘটনার পরদিনই রাতে ১২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। মামলা নং ২৬।
সিদ্দিকুরের চোখ নষ্ট হওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ তদন্তে গত ২২ জুলাই রমনা বিভাগ পুলিশ পৃথক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রধান রমনা বিভাগের এডিসি (প্রশাসন) নাবিদ কামাল শৈবাল।
একই ঘটনায় ২৩ জুলাই ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপস) মীর রেজাউল আলমকে প্রধান করে পৃথক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ ও রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আশরাফুল আলম। তদন্তে পুলিশের গাফিলতির বিষয়টি উঠে আসে।
এমএইচএম/এমআরএম/জেডএ/এমএস