জাতীয়

অসুস্থ সন্তান দিলে আমি কী করব?

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার জলাবদ্ধতায় নিজে বিব্রত হয়েছেন উল্লেখ করে মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, ‘অসুস্থ সন্তান আমাকে দিলে আমি কী করব? জলাবদ্ধতার সব দায়ভার আমার না, তবুও জনগণ আমাকে গালাগালি করে। এসব ড্রেন তো ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমাকে যদি দিতে চান তাহলে সুস্থ করে এরপর দেন।’

Advertisement

রোববার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নগর ভবনে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তঃবিভাগীয় তৃতীয় সমন্বয় সভা হয়। এতে উপস্থিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকা উত্তরের খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার দায়িত্ব ডিএনসিসিকে দেয়ার ঘোষণা দেন। এসময় মেয়র এসব কথা বলেন।

সভার শুরুতে ডিএনসিসির সুপারেন্ট ইঞ্জিনিয়ার শরিফ উদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি সরেজমিনে পরিদর্শন করা ডিএনসিসি এলাকার খালের চিত্রের স্লাইড প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। প্রেজেন্টেশনে জানানো হয়, ঢাকা মহানগরীতে মোট ৪৩টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার।

সভা চলাকালীন একাধিক কাউন্সিলর, মেয়র ও মন্ত্রী ঢাকার জলাবদ্ধাতার জন্য ওয়াসার এমডিকে দোষারোপ করেন।

Advertisement

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান তার বক্তব্যে বলেন, বিদ্যমান যা পেয়েছি তা রক্ষাণাবেক্ষণ করছি। দখল হয়ে যাওয়া খালে উচ্ছেদ অভিযান চলমান। আমরা প্রতিনিয়ত খাল পরিষ্কার করছি।

খাল পরিষ্কারের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াসা এমডির বক্তব্যের বিরোধিতা করেন মেয়র ও কাউন্সিলরা। মেয়র বলেন, খাল কীভাবে পরিষ্কার করেন জানি না। তবে আমাদের লোকেরা সম্প্রতি যে ছবিগুলো তুলে এনেছে তাতে খাল পরিষ্কার করার কোনো নমুনা তো আমরাসহ এখানে উপস্থিত কেউ দেখতে পেলাম না।

এসময় ওয়াসার এমডি বলেন, আশপাশের খালের অধিকাংশ দখলে নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। আর সেই বাড়ি নির্মাণের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে। এসব কারণে আমরা খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারছি না।

তিনি বলেন,ওয়াসার তত্ত্বাবধানে ১৮টি খাল রয়েছে। এই খালগুলো বর্ষার আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ময়লায় ভরে যায়। ওয়াসা এমডির এই কথার জবাবে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার বলেন, খালের ময়লা রাস্তায় ফেলে আপনারা চলে আসেন। সেই ময়লা আবার খালে চলে যায়। সে কারণে আপনারা এ সমস্যা ফেস (মোকাবেলা) করেন।

Advertisement

সভায় জানানো হয়, ঢাকা মহানগরীর খালের মূল দায়ভার ঢাকা জেলা প্রশাসনের। মহানগরীর সব খালের মালিকানায় রয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসক।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সুপারেন্ট ইঞ্জিনিয়ার শরিফ উদ্দিন আহমেদ তার প্রেজেন্টেশনে জানান, ডিএনসিসি এলাকায় ২৩টি খাল রয়েছে, যার সবগুলো দখলে চলে গেছে। ওইসব খাল দিয়ে নদী পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে পারছে না। এ কারণে রাজধানীতে অল্প বৃষ্টিতে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, খাল অবৈধ দখলকারীদের নামের লিস্ট করা হয়েছে। শিগগির পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এসময় কাউন্সিলরা বলেন, অনেক খালে চারতলা থেকে পাঁচতলা ভবন তোলা হয়েছে। যেসব খালে বেশি সমস্যা, সেখানে একত্রে অভিযান পরিচালনা করা দরকার।

এ বিষয়ে মেয়র বলেন, ওয়াসা আমাদের খাল পরিষ্কার করে দেন। আমরা গালাগালি শুনতে পারব না। একই সঙ্গে মেয়র রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে আগামী বর্ষার আগে কুড়িল ফ্লাইওভার এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য অনুরোধ জানান।

জবাবে রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কুড়িল এলাকার সমস্যার সমাধান হবে।

সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব, ঢাকা-১১ আসনের সংসদ সদস্য কে এম রহমতুল্লাহ, ডিএনসিসির কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানে প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

এএস/জেডএ/আরআইপি