আদালতের আদেশে স্বামীকে ফিরে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বিশিষ্ট লেখক, কবি ও সাংবাদিক ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার।
Advertisement
আদালত চত্বরে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আদালতের ‘নিজ জিম্মায়’ যাওয়ার অনুমতি প্রদানে আমরা ভীষণ খুশি। এখন তাকে নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরতে পারব।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ৩৭ ঘণ্টা বয়োবৃদ্ধ মানুষটির সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে পুরো পরিবার। অসুস্থ মানুষটিকে নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ ছিল না। অবশেষে তাকে ফিরে পেয়েছি। এরচেয়ে আনন্দ আর কী হতে পারে।
আদালত চত্বরে এ সময় ফরহাদ মজহারের মেয়ে সমতলী হক, পারিবারিক বন্ধু গৌতম দাসসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
প্রসঙ্গত, সোমবার ভোরে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। নিখোঁজের ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগর থেকে তাকে উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তাকে প্রথম আদাবর থানা এবং পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিন্টো রোডে অবস্থিত গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়।
পরবর্তীতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৩টায় তাকে আদালতে নেয়া হয়। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আহসান হাবিবের খাস কামরায় বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তিনি জবানবন্দি দেন। একই আদালতে ‘নিজ জিম্মায়’ যাওয়ার আবেদনের ওপরও শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে বিচারক মো. আহসান হাবিব ফরহাদ মজহারকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি নিজ জিম্মায় যেতে চান? ‘হ্যাঁ’ বোধক সম্মতি জানালে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় আবেদন মঞ্জুর করেন।
বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে ফরহাদ মজহার আইনজীবীদের সঙ্গে আদালত থেকে বের হয়ে আসেন।
Advertisement
ফরহাদ মজহারের ‘নিজ জিম্মায়’ যাওয়ার আবেদনের ওপর শুনানি করেন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, জয়নাল আবেদিন মেজবাহ ও জিয়াউদ্দিন জিয়া।
ফরহাদ মজহারের নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার রাতে স্ত্রী ফরিদা আক্তার বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ০৪। এর আগে তিনি জিডি করেছিলেন। জিডি নং- ১০১।
ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার এবং পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ মজহার আমাদের জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই একদল দুর্বৃত্ত তাকে ধরে চোখ বেঁধে একটি সাদা মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায়।’
তিনি স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বের হয়েছিলেন, না কি ফোন করে তাকে বাসার বাইরে আনা হয়েছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি (ফরহাদ মজহার) আমাদের জানিয়েছেন, ওষুধ কেনার জন্য তিনি বাসা থেকে বের হন। তাকে কেউ ফোন করেননি। বাসা থেকে বের হওয়ার পরই তাকে জোর করে অপহরণ করা হয়।’
স্ত্রীর দায়ের করা ‘অপহরণ’ মামলা প্রসঙ্গে আব্দুল বাতেন বলেন, অপহরণ মামলার বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
ডিবির এ কর্মকর্তা আরও জানান, নিখোঁজের পর উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত- পুরো বিষয়টি জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। এ কারণে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার রাতে যশোরের অভয়নগরের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের পর মঙ্গলবার সকালে তাকে নেয়া হয় আদাবর থানায়। সেখান থেকে তেজগাঁওয়ের ডিসি কার্যালয়ে নেয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করতে পরে তাকে নেয়া হয় মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে।
সোমবার ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আদাবর থানায় এ সংক্রান্ত একটি অপহরণ মামলা হয়েছে বলে ডিসি বিপ্লব জানালেও পরিবার দাবি, তারা এখনও কোনো মামলা দায়ের করেননি। শুধু লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সোমবার ভোরে শ্যামলীর রিং রোড ১ নং হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রীকে মোবাইলে ফোনে জানান, কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাকে মেরেও ফেলা হতে পারে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়বার ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে মোবাইল ট্রাকিং করে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগরের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
জেএ/এমএআর/আরআইপি