অর্থনীতি

প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি নিয়ে ‘লুকোচুরি’

প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি কমানোর কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত আগের বছরের তুলনায় এক হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে।

Advertisement

শুধু তাই নয়, ভর্তুকি সংক্রান্ত তথ্যাদি নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় লুকোচুরিও করা হয়েছে। বাজেটের সংক্ষিপ্তসারেও ভর্তুকির সমুদয় তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমালোচনা এড়াতে ভর্তুকি বরাদ্দের তথ্যে লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মধ্যে ভর্তুকি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। ২০২১ সালের পর শুধুমাত্র কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সেটি আবার সরাসরি অর্থ না দিয়ে কৃষকদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে কৃষির সরঞ্জাম সরবরাহের পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এরপরও প্রতি বছর বাজেটে ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

Advertisement

প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্যে চার হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৮২০ কোটি টাকা। কৃষি খাতে নয় হাজার কোটি টাকা, চলতি বছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় সমপরিমাণ অর্থ।

প্রস্তাবিত বাজেটে রফতানি খাতে প্রণোদনা হিসেবে চার হাজার কোটি টাকা, চলতি বাজেটে এ খাতে সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। পাটজাত পণ্যে প্রণোদনা হিসেবে ৫০০ কোটি টাকা, চলতি বছরেও এ খাতে সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জন্য (পিডিবি) প্রস্তাবিত বাজেটে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, চলতি বছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ছয় হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে অন্যান্য খাতে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে রাখা হয়েছে। চলতি বছরে এসব খাতে রাখা হয় চার হাজার ৪০৯ কোটি টাকা।

Advertisement

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি খাত উল্লেখ করা সত্ত্বেও ‘অন্যান্য’ খাতের নামে আলাদা সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা অস্বচ্ছতার শামিল। ভর্তুকির অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় হয় কিনা- তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা। আর খরচ হয়েছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যয় আলোচ্য অর্থবছরের জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যৌক্তিক খাতে ভর্তুকি থাকতে হবে। তবে ভর্তুকি বরাদ্দের অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় হচ্ছে কিনা- সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

এছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে সহায়তা দিতে এবং কৃষকদের সহায়তায় ভর্তুকি রাখা খুবই যৌক্তিক বলে মত দেন তিনি। তবে সেটা হতে হবে সুনির্দিষ্টভাবে।

এমইউএইচ/এমএআর/পিআর