স্বাস্থ্য

১১শ’ টাকায় ডায়ালাইসিস!

রাজধানীর ধানমন্ডিতে অচিরেই চালু হচ্ছে একশ শয্যাবিশিষ্ট গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টার। এটি চালু হলে অপেক্ষাকৃত কম খরচে আন্তর্জাতিক গুণগতমানের চিকিৎসা প্রদান করা হবে। এখানে সর্বনিম্ন এক হাজার একশ টাকায় ডায়ালাইসিসের সুযোগ থাকবে রোগীরা।

Advertisement

চলতি মাসের যেকোনো দিন সেন্টারটির উদ্বোধন করা হতে পারে বলে জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে হাসপাতালের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দেশের সর্ববৃহৎ এই কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারটিতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ডায়ালাইসিসের সুযোগ থাকবে। প্রতিদিন বিভিন্ন শিফটে গড়ে পাঁচশ কিডনি বিকল রোগী ডায়ালাইসিসের সুযোগ পাবেন।

এখানে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সর্বনিম্ন এক হাজার একশ টাকা থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকায় রোগীরা এ ইউনিটে ডায়ালাইসিস চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। হতদরিদ্র কিডনি বিকল রোগীদের জন্য পাঁচটি বেডে বিনামূল্যে ডায়ালাইসিস করা হবে। সেন্টারটিতে ১০ শয্যার একটি আধুনিক কিডনি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) থাকবে।

Advertisement

গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের সমন্বয়ক ও গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক ডা. মহিব উল্লা খন্দকার জাগো নিউজকে জানান, ইতোমধ্যে জার্মানি থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি জানান, দেশের সর্ববৃহৎ এ ডায়ালাইসিস ইউনিটটি সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য অ্যাপোলো হাসপাতালের খ্যাতনামা কিডনি বিশেষজ্ঞ, আইসিডিডিআরবির ল্যাবরেটরি সাবেক প্রধান, একাধিক চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

এ মাসের যেকোনো দিন সেন্টারটি উদ্বোধনের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সেন্টারটি দেশের কিডনি বিকল রোগী বিশেষ করে দরিদ্র ও হতদরিদ্র রোগীদের কাছে অন্ধকারে আশার আলো হিসেবে কাজ করবে।

কিডনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ঘণ্টায় মারা যাচ্ছেন পাঁচজন লোক। সাধারণত ৭৫ ভাগ মানুষ কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে বুঝতে পারেন না তিনি ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত।

Advertisement

বিশেষজ্ঞরা জানান, কিডনি যখন বিকল হয়ে যায় তখন বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন। কিন্তু সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে এখনও কিডনি ডায়ালাইসিসের সুবিধা খুবই অপ্রতুল। সরকারি হাসপাতালে তুলনামূলকভাবে খরচ অল্প হলেও মেশিনের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল বিধায় শত শত রোগী সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষায় থাকেন।

ফলে অধিকাংশ দরিদ্র রোগী ডায়ালাইসিস করতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। বেসরকারি পর্যায়ে বেশকিছু ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপিত হলেও রোগীর চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল ও খরচও বেশি।

এ বিষয়ে কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়াম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ সম্প্রতি এক সেমিনারে জানান, দেশে বিপুলসংখ্যক কিডনি রোগীর তুলনায় ডায়ালাইসিস সেন্টার খুবই কম। মাত্র ৯৬টি সেন্টারে ১৮ হাজার রোগী সপ্তাহে দুইবার করে ডায়ালাইসিস সেবা পান। এজন্য বেসরকারি সেন্টারগুলোতে সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা রাখা হয়।

গনস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের সমন্বয়ক ডা. মহিব উল্লা খন্দকার আরও জানান, ব্যক্তি আয় ও সামাজিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে মোট চারটি ক্যাটাগরি- উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও হতদরিদ্র রোগীদের ডায়ালাইসিসের ফি ধরা হয়েছে। প্রতিবার ডায়ালাইসিসের জন্য শতকরা ৬০ ভাগ দরিদ্র রোগীদের মাত্র এক হাজার একশ, শতকরা ৩০ ভাগ মধ্যবিত্ত রোগীদের এক হাজার পাঁচশ টাকা, শতকরা পাঁচ ভাগ উচ্চবিত্ত রোগীদের তিন হাজার টাকা ও হতদরিদ্রদের মধ্যে শতকরা পাঁচ ভাগ রোগী বিনামূল্যে ডায়ালাইসিসের সুযোগ পাবেন। তবে নির্ধারিত ফির বাইরে কোনো টাকা দিতে হবে না বলে তিনি জানান।

এমইউ/এসআর/জেআইএম