বিশেষ প্রতিবেদন

যমুনা টানেল নির্মাণে সমীক্ষা ব্যয় ১৩২ কোটি টাকা

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের পর এবার যমুনা নদীর তলদেশে দ্বিতীয় টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

Advertisement

১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেল হবে কর্ণফুলী নদীর প্রস্তাবিত টানেলের প্রায় চারগুণ। এ টানেল নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা ব্যয় ১৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ধরে তা অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন পেলে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করবে তারা। অর্থ মন্ত্রণালয় ও সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (প্রকল্প ও উন্নয়ন) মো. আবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্প এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এর সমীক্ষা পরিচালনার জন্য অর্থছাড় চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠান হয়েছে। অর্থছাড় পেলেই সমীক্ষা চালান হবে। সমীক্ষার পর মূল টানেল নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৫-২৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে আগ্রহ দেখায় দেশটি। এ প্রকল্পসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান সরকারের ঋণ প্রদানের বিষয়ে যৌথ ইশতেহারও স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা অর্থায়ন করবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ কারণে অর্থায়নের বিকল্প উৎস খোঁজা হচ্ছে।

Advertisement

যমুনা টানেল নির্মিত হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের অগ্রাধিকার এবং বাংলাদেশের অগ্রাধিকার একসঙ্গে মিলে গেলে তারা সাধারণত সহায়তা দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাংকের কাছে এখনও ছয় বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া আছে। সেখান থেকে প্রতি বছর তারা সর্বোচ্চ দুই বিলিয়ন ডলার দেয়। সে হিসাবে অনেক প্রকল্প পাইপলাইনে জমা হয়। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও সেরকম কিছু হতে পারে।

তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বিশ্বব্যাংক বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সূত্র জানায়, যমুনা নদীর তলদেশে দ্বিতীয় টানেল নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩৪ কোটি ডলার (প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা)। সব প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

প্রকল্প প্রস্তাবে সেতু বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। এ তিন নদী দেশকে ভৌগোলিকভাবে উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল- এ চারভাগে বিভক্ত করেছে। যমুনা নদী ভারত থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রথমে পদ্মা এবং পরে মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যমুনার প্রশস্ততা অনেক বেশি। বর্ষাকালে ৮ থেকে ১৩ কিলোমিটার প্রশস্ত হয় নদীটি। এ নদী দিয়ে গড়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয় এবং ৬০০ মিলিয়ন টন পলি বহন করে। পলি বহনের বিবেচনায় যমুনা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং পানি প্রবাহের দিক থেকে বৃহত্তম নদী।

পলি জমার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেতুর পরিবর্তে টানেল নির্মাণ সুবিধাজনক হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে বালাশী ও বাহাদুরাবাদের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে টানেলের প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এদিকে ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল এক ডিও (আধা-সরকারিপত্র) পত্রে মুখ্য সচিব উল্লেখ করেন, বাস্তবে যদি রেলপথ রাখার কারণে নির্মাণ ব্যয় অনেক বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে রেলপথ বাদ দিয়ে শুধু সড়কপথ নির্মাণ করা যৌক্তিক হবে।

অন্যদিকে ২০১৪ সালের ৬ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গাইবান্ধা জেলার বালাশীঘাট এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ঘাটে সংযোগ টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত দেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এমইউএইচ/এমএআর/জেআই্এম