রাজশাহীতে ‘আত্মহত্যা’ করা মালদ্বীপের মডেল রাউধা আথিফের বাবা মোহাম্মদ আতিফ মেয়ের মৃত্যুর জন্য থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে চান। আর এ জন্যই মেয়ের মরদেহ রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Advertisement
বৃহস্পতিবার দুপুরে মোহাম্মদ আতিফ রাজশাহীর নওদাপাড়ায় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে যান। এরপর বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
মোহাম্মদ আতিফ বলেন, ‘না, এটা নিছক আত্মহত্যা নয়। আমি একজন চিকিৎসক, আমি মরদেহ দেখেছি। আমি দেখেছি, এটা আত্মহত্যা নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ কাউকে যেন বাঁচানোর চেষ্টা করছে। অবশ্যই আমি আইনের আশ্রয় নেব। আর এ জন্যই রাউধাকে এখানে সমাহিত করা হয়েছে।’
তবে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিনি থানায় কোনো মামলা করেননি বলে জানিয়েছেন নগরীর শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মামলা করলে নেয়া হবে। এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।’
Advertisement
জানতে চাইলে রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম বলেন, রাউধার বাবা এমন একজন আইনজীবী খুঁজছেন, যিনি মালদ্বীপের ভাষা বোঝেন। এরপর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হবে বলে তিনি শুনেছেন।
গত ২৯ মার্চ ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে রাউধার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়, রাউধা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ওই দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে শাহমখদুম থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।
রাউধা আতিফ রাজশাহীর এই কলেজটির এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তবে একজন উঠতি মডেল হিসেবে তার ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি। ২০১৬ সালের অক্টোবর সংখ্যায় ভারতের বিখ্যাত ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ সাময়িকীর প্রচ্ছদে স্থান পান মালদ্বীপের নীলনয়না এই মডেল।
রাউধার মৃত্যুর পর তার মরদেহ দেখতে রাজশাহী আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং তার মা-বাবাসহ ৮-৯ জন নিকটাত্মীয়। এরপর গত ৩১ মার্চ মেডিকেল বোর্ড গঠন করে রাউধার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছেন উল্লেখ করে ওই দিন বোর্ড ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহীতে রাউধার দাফন সম্পন্ন হয়।
Advertisement
এদিকে রাউধার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গত সোমবার মালদ্বীপের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রিয়াজ ও জ্যেষ্ঠ পরিদর্শক আলী আহমেদ রাজশাহী আসেন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত তারা রাজশাহীতেই ছিলেন।
এর মধ্যে দফায় দফায় তারা রাউধার হোস্টেল পরিদর্শন করেছেন। তারা কথা বলছেন রাউধার সহপাঠী, শিক্ষক ও হোস্টেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। গত বুধবার তারা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। শুক্রবার তারা দেশে ফিরতে পারেন বলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) একটি সূত্র জানিয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তারা রাজশাহী পুলিশকে কোনো প্রতিবেদন দেননি বলে জানিয়েছেন আরএমপির মুখমাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম।
তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপের পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের লিখিতভাবে কোনো প্রতিবেদন জমা দেননি। তারা কোনো ‘পরামর্শ’ দিতে চাইলে দূতাবাসের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দিতে হবে।’
ইফতেখায়ের আলম বলেন, ‘যেহেতু রাউধা মালদ্বীপের নাগরিক, তাই সে দেশের পুলিশ নিজেদের মতো করে বিষয়টি দেখতে আসতে পারেন। এছাড়া তারা এখানে রাজশাহীতে থাকা রাউধার পরিবারের সদস্যদের সহায়তা করতে এবং মালদ্বীপের অন্য শিক্ষার্থীদের অভয় দিতে এখানে আসতে পারেন।’
এদিকে রাউধার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে মা আমিনাথ মুহাররিমাথ ও ছোট ভাইসহ চারজন বুধবার বিকেলে দেশে ফিরে গেছেন। বাকিরা এখনও আছেন রাজশাহীতে। দেশে রওনা দেয়ার আগে রাজশাহীর হজরত শাহমখদুম (র.) বিমানবন্দরে রাউধার মা আমিনাথ মুহাররিমাথ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মনে হয়নি আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ও এমন মেয়ে নয়। ও খুব শক্ত। আগের রাতেও ইন্টারনেটে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ও তখন রান্না করছিল। রাতের খাবার রান্না করে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘ওরা (হোস্টেল কর্তৃপক্ষ) বলছে, দরজা আটকে রাউধা সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়েছিল। গলায় ফাঁস দিলে পুলিশ যাওয়ার আগেই কেন মরদেহ নামানো হলো? দরজা কেন পুলিশ যাওয়ার আগে খোলা হলো? আমরা দরজার ছিটকানি ভাঙার কোনো নমুনা দেখিনি।’
এফএ/পিআর