শিক্ষা

পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে আসছে অভিনব পদ্ধতি

সৃজনশীল পদ্ধতি আয়ত্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন শিক্ষকরা। নানা প্রশিক্ষণের পরও তারা এ পদ্ধতি বুঝে উঠতে পারছেন না। সঠিকভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না সৃজনশীল পরীক্ষার উত্তরপত্র। জেলা পর্যায়ে এ সম্যসা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে নতুন পদ্ধতির কথা ভাবছে সরকার।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার খাতা ‘মডেল-উত্তর’ পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করবেন পরীক্ষকরা। পরীক্ষা শেষে বোর্ড থেকে খাতা বিতরণের সময় পরীক্ষকদের প্রশ্নের উত্তরপত্র সরবরাহ করা হবে। তা দেখে তারা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে বৈষম্য দূর করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।আজ (মঙ্গলবার) সকালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়নের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আপত্তি আছে। গবেষণায় আমরাও নম্বর প্রদানে বড় রকমের বৈষম্য পেয়েছি। দেখা গেছে, কোনো উত্তরে শিক্ষার্থী হয়তো নম্বর পাওয়ার যোগ্য নয়, কিন্তু দেয়া হয়েছে। আবার যেখানে নম্বর বেশি পাওয়ার কথা সেখানে, কম দেয়া হয়েছে। এসব নিরসনের লক্ষ্যে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।সূত্র জানায়, দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে গত ১ থেকে ২ সেপ্টেম্বর পাবলিক পরীক্ষার গুণগত সংস্কারের জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে তারা নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ীই উত্তরপত্রে সঠিকভাবে নম্বর দেয়া নিশ্চিতে ৮টি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।এগুলো হচ্ছে, যেদিন যে বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নের পরীক্ষা থাকবে সেদিন সে বিষয়ের পরীক্ষা শেষে ছয়জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান পরীক্ষককে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তিনজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান পরীক্ষক সংশ্লিষ্ট সৃজনশীল প্রশ্নের নমুনা উত্তর লিখবেন। অপর তিনজন ওই উত্তরপত্র থেকে তিন ধরনের (উত্তম, মধ্যম এবং দুর্বল মানের) উত্তরপত্র বাছাই করবেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান পরীক্ষকদের কাছ থেকে নমুনা উত্তর এবং বাছাইকৃত তিন ধরনের উত্তরপত্র বোর্ড কর্তৃপক্ষ সেদিনই পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য জমা রাখবেন। এ ব্যাপারে বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান পরীক্ষকদের প্রয়োজনীয় অনুমতি এবং সহযোগিতা প্রদান করবেন।বোর্ড কর্তৃৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের নমুনা উত্তর এবং বাছাইকৃত প্রতিটি উত্তরপত্র আমন্ত্রিত প্রধান পরীক্ষকদের সংখ্যা অনুযায়ী ফটোকপি করবেন। যেমন বাংলা বিষয়ে যদি ১০০ জন প্রধান পরীক্ষক থাকে তবে নমুনা নম্বর প্রদান কর্মশালায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান পরীক্ষকসহ মোট ২০ জন প্রধান পরীক্ষককে নমুনা নম্বর প্রদান কর্মশালায় আমন্ত্রণ জানাতে হবে।বোর্ডগুলো বিষয়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের নমুনা উত্তর এবং বাছাইকৃত তিন ধরনের ৬টি উত্তরপত্র নির্বাচিত প্রত্যেক প্রধান পরীক্ষকদের দেবেন। প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষা শেষের দুই-একদিনের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান পরীক্ষকদের নিয়ে পূর্ণদিনব্যাপী নমুনা নম্বর প্রদান কর্মশালা পরিচালনা করবেন। নমুনা এবং বাছাইকৃত তিন ধরনের যদি ৬টি উত্তরপত্র থাকে তবে প্রতিটি উত্তরপত্রের ২০টি করে ফটোকপি করতে হবে। অর্থাৎ মোট ১২০টি উত্তরপত্র ফটোকপি করতে হবে।উত্তরপত্রের সঙ্গে পূর্বে প্রস্তুতকৃত নমুনা উত্তরের ফটোকপিও প্রধান পরীক্ষকদের সরবরাহ করতে হবে। পরীক্ষকদের মাঝে উত্তরপত্র বিতরণের দিন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং নমুনা নম্বর প্রদান কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী একজন প্রধান পরীক্ষক মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ১টি সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের প্রতিটি প্রশ্নের প্রতিটি অংশের নমুনা উত্তর আলোচনা করবেন। এ জন্য বোর্ডগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধান পরীক্ষককে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।প্রশিক্ষক আহমেদ ওবাদুস সাত্তার ভূইয়া বলেন, নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিতে মূল্যায়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক বোর্ডের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছিল। তারা গড়ে প্রতি বিষয়ে ১২ জন প্রধান পরীক্ষকদের তালিকা পাঠিয়েছেন। তাদের ৭টি ব্যাচ করে তিনদিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ৫টি ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। গত এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র গবেষণা করে ২২ বিষয়ের শিক্ষককে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য এ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, বিভিন্ন বোর্ডের উত্তরপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নানা দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে। খাতা মূল্যায়নের মানোন্নয়নে এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষকদের পুরস্কার এবং তিরস্কার দুটি ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে এ কাজে আগ্রহ বাড়াতে প্রশ্ন প্রণয়ন, খাতা দেখায় সম্মানি বাড়ানো হচ্ছে। আর কাজে আগ্রহী না হলে বা ভুলের জন্য বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।এমএইচএম/বিএ

Advertisement