স্বপ্নের মত একটা দিন অতিবাহিত করলাম। গতকাল শুরুটা তামিম এবং মুমিনুল দেখিয়েছিল। সাকিব এবং মুশফিকের পার্টনারশিপে সেটা পূর্ণতা পেলো। তাদের এই পার্টনারশিপের চেয়ে বড় কথা হলো, কিভাবে টেস্টে খেলতে হয়, কিভাবে প্রতিপক্ষের বোলিংয়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে হয়, কিভাবে পরিস্থিতি সুন্দরভাবে সামলাতে হয়- সেটা আমাদের দেখিয়ে দিলেন সাকিব এবং মুশফিক। বিশেষ করে সাকিবের ইনিংসটি ছিল দুর্দান্ত। কেননা আমরা সাধারণত তার গায়ে টি-টোয়েন্টির একটা প্রলেপ মেখে দিয়ে থাকি। সেখান থেকে বের হয়ে এসে সাকিব প্রমাণ করেছে, সে সব ফরম্যাটের জন্যই সেরা খেলোয়াড়। তার স্ট্রোক মেকিং, বল সিলেকশন, টেম্পারমেন্ট ছিল অসাধারণ। মুশফিকের ইনিংসটার চেয়ে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বেশ কয়েকদিন ধরে আমরা বলছিলাম, ব্যাটসম্যানদের রোলের কথা, সে রোলটা কিভাবে পালন করতে হয়, সেটা মুশফিক দেখিয়ে দিয়েছে।সাকিব আর মুশফিক মিলে ৩৫৯ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে ফেলেছে। এটা সত্যি অসাধারণ। ভাষায় বোঝানোর মত নয়। বাংলাদেশ যে সত্যি ধীরে ধীরে টেস্ট ফরম্যাটে নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে এটা তার প্রমাণ। একই সঙ্গে বলবো, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম কন্ডিশন বলে জয় পাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে নিন্দুকেরা যে সমালোচনা করছিল, তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে সাকিব-মুশফিক দেখিয়ে দিয়েছে, ওটা হোম অ্যাডভান্টেজের কারণে নয়, যোগ্য দল হিসেবেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। সাকিবের কথা আবার বলবো, তার স্ট্রোক মেকিং, বল সিলেকশন ছিল অসাধারণ, অতুলনীয়। একটা সত্যিকার টেস্ট ইনিংস যেভাবে খেলা উচিত, সেভাবে দেখিয়ে দিল সাকিব। তার গায়ে আমরা যে টি-টোয়েন্টির লেভেল লাগিয়ে দিয়েছিলাম, সেখান থেকে সে বের হয়ে এসেছে এবং একই সঙ্গে বলবো, তিন ফরম্যাটেই যে সে সেরা খেলোয়াড়, তার প্রমাণ সে রাখলো। বাংলাদেশের রান তোলার গড় ৪-এর ওপর। এটাকে অনেকেই আক্রমণাত্মক বলছে। তবে আমি বলবো, এটা আক্রমণাত্মক নয়। যে বলটি যেভাবে খেলা উচিৎ সেভাবে খেলেছি আমরা। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের দুর্বলতার চেয়ে আমি বলবো আমাদের ব্যাটিংটা ছিল একেবারে সলিড। বাংলাদেশ এখন এমন একটা জায়গায় এখন দাঁড়িয়ে আছে, যে জায়গাটায় বাংলাদেশ জেতার চিন্তা ছাড়া অন্য কিছু ভাবাই উচিত না। যেখানে টেস্টের দুইদিন পর এখন বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে ওপরে। আজকের দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ পুরোপুরি এগিয়ে রয়েছে। এই অবস্থা থেকে বাংলাদেশের জেতার জন্য টেস্ট ম্যাচটি খেলা উচিত। আমরা জানি বেসিন রিজার্ভের এই উইকেটটায় হয়তো কালকে বিকাল থেকে স্পিনাররা সহায়তা পেতে শুরু করবে। তারপরও এটা পুরোপুরি ব্যাটিং নির্ভর একটি উইকেট। এই উইকেটে যদিও আমরা মাত্র ২ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তিন পেসার মাঠে নামিয়েছি, তবুও আমার বিশ্বাস, আমরা ভালো বোলিং করতে পারবো। একই সঙ্গে দুই স্পিনার মিরাজ এবং সাকিবের ওপর পুরোপুরি আস্থা এবং বিশ্বাস রয়েছে। তাদের ওপর আমি পুরোপুরি নির্ভরশীল। আমাদের বোলাররা যদি তাদের স্বাভাবিক বোলিংটাও করতে পারে, তাহলে আমার বিশ্বাস তাদের ওপর পুরো চাপ সৃষ্টি করতে পারবো।আগামীকাল আপাতত লক্ষ্য হওয়া উচিত, যতক্ষণ ব্যাটিং করা যায়। কেননা তৃতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করার চেয়ে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করে ফেলা অনেক ভালো। কারণ, এই ইনিংসে যতটা আমরা এগিয়ে থাকবো, ততটা চাপ সৃষ্টি করতে পারবো তাদের ওপর। মনে রাখতে হবে, এখনও অন্তত ২৭০ ওভার, অর্থ্যাৎ তিনদিনের খেলা বাকি রয়েছে। আমরা জানি কোন কারণে আধা ঘণ্টা খারাপ খেললেই টেস্টের চিত্র পাল্টে যেতে পারে। সুতরাং, বাকি তিনদিনে আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে এবং এই টেস্টটা জেতার জন্যই খেলতে হবে। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, আমরা যে কয়টা টেস্ট জেতার জন্য খেলতে গিয়েছি, সেগুলোর কোনো কোনোটাতে হয়তো জিতেছি, আবার অধিকাংশগুলোতেই জিততে জিততে হেরে গিয়েছি। আবার যখনই আমরা ড্র’র মনোভাব নিয়ে নেমেছি, তখনই ইনিংসের ব্যবধানে কিংবা অনেক বাজেভাবে হেরেছি। সুতরাং, এখানে আমাদের জয়ের চিন্তাটাই সবার আগে করতে হবে।সর্বশেষ আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিলো, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্ট। এই দুই টেস্টেই আমরা জয়ের জন্য খেলতে নেমেছি। জিততে জিততে একটাতে জিতেছি, আরেকটাতে হেরে গিয়েছি। শেষ পর্যন্ত সিরিজ ড্র করেছি। এই টেস্টে এখন আমাদের মনোভাব হওয়া উচিত জেতার জন্য খেলা। সেই শক্তি এখন আছে এবং সেই সুযোগটাও আমাদের কাছে চলে এসেছে। এ জন্য পুরোপুরি কৃতিত্বটাই দিতে চাই আমাদের ব্যাটসম্যানদের। তাদের ওপর আমরা এতদিন অনেকটাই নাখোশ ছিলাম কিংবা ব্যর্থতার জন্য দোষ দিয়েছি। সেখান থেকে তারাই আবার আমাদেরকে টেস্ট ম্যাচে জেতার জন্য একটা পথ খুলে দিয়েছে। এখন বাকি কাজটা বোলারদের ওপর নির্ভর করবে। ইনশাআল্লাহ আমরা এই টেস্টে একটা ভালো অবস্থানে থেকে শেষ করতে পারবো। সে জন্য দলের প্রতি শুভ কামনা রইল।আইএইচএস/
Advertisement