জাগো জবস

ভেবে-চিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে : মুক্তার ইবনে রফিক

মুক্তার ইবনে রফিক এক স্বপ্নবাজ তরুণ। অসহায় মানুষকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেসব স্বপ্নপূরণে কাজও করছেন সাধ্যমতো। ছোটবেলা থেকেই সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ পাঠের মধ্যদিয়ে বড় হয়েছেন। তবে পড়াশোনায় বরাবরই ফাঁকিবাজ ছিলেন। রোদ-বৃষ্টিতেও সারাদিন ব্যস্ত থাকতেন খেলাধুলায়!তবে বর্তমানে তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লাইটার ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছেন অসহায় মানুষের জন্য। এ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সফলতা-ব্যর্থতার কথা জানাচ্ছেন জাগো জবসকে। কথা বলেছেন রাহুল বিশ্বাস মুন্না।

Advertisement

জাগো জবস : আপনার পড়াশোনা ও সংগঠন সম্পর্কে জানতে চাই- মুক্তার ইবনে রফিক : পড়াশোনা করছি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা বিভাগে। আমার সংগঠনের নাম লাইটার ইয়ুথ ফাউন্ডেশন। বলতে পারেন আমি এ সংগঠনের গর্বিত সদস্য। আর প্রেসিডেন্ট তো কেবল একটি পদ।      জাগো জবস : কী কী কাজ করেছেন আপনারা?মুক্তার ইবনে রফিক : ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু আমাদের। মূলত অনলাইনকেন্দ্রিক প্লাটফর্ম হলেও ধীরে ধীরে আমরা ছড়িয়ে পড়েছি পুরো বাংলাদেশেই। লাইটারের সদস্য রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায়। এপর্যন্ত আমরা দু’টি স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করেছি, পাঁচজন অসহায় নারীকে সেলাই মেশিন দিয়েছি, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে রিকশা কিনে দিয়েছি, পাঁচজন বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্নপূরণ করেছি ঘর এবং মুদি দোকান করে দিয়ে। এছাড়া গত দুই বছরে ১ হাজার ১১০টি বন্যাদুর্গত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছি। শীতার্তদের পাশে সাধ্যমত কম্বল নিয়ে হাজির হয়েছি। মূলত স্পেসিফিক কোনো ক্রাইটেরিয়া নেই, আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। গতকাল ত্রাণ নিয়ে ছুটে গিয়েছি জামালপুরের ৫০০ পরিবারের মাঝে।   জাগো জবস : সংগঠনের পাশাপাশি আপনি একজন উদ্যোক্তাও। কীভাবে মেইনটেইন করছেন সব? মুক্তার ইবনে রফিক : কখনো কখনো ক্লান্ত লাগে। পরক্ষণেই নিজেকে উজ্জীবিত করি, ঝাঁপিয়ে পড়ি কাজে। আমাদের প্রতিটি মিনিটই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কাজ আর কাজ চাই! যখন আড্ডা দেই, তখনো চেষ্টা করি সেখান থেকে কিছু শিখতে। কত কিছু যে শেখার আছে, জানার আছে!  জাগো জবস : আপনার উদ্যোগ সম্পর্কে বলুন-মুক্তার ইবনে রফিক : সম্প্রতি www.egiye-cholo.com নামে একটি অনলাইন পোর্টাল লঞ্চ করেছি। গতানুগতিক ধারণা থেকে বেরিয়ে পাঠকদের কাছে নতুন একটি প্লাটফর্ম উপহার দেয়ার চেষ্টা করছি। ‘এগিয়ে চলো’কে বাংলাদেশের প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া বেইজড অনলাইন পোর্টাল বলতে পারেন। বাইরের দেশগুলোতে এরকম ধারণা চলমান থাকলেও বাংলাদেশে এটি একেবারেই নতুন। মৌলিকত্ব নিয়ে এভাবে টিকে থাকা হয়তো কঠিন, তবু দমে যাব না। অলরেডি সবার ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। অনেকেই উৎসাহ দিচ্ছেন।জাগো জবস : এ রকম উদ্যোগের ভাবনা কীভাবে এলো? মুক্তার ইবনে রফিক : আগে একটি দৈনিক পত্রিকায় কন্ট্রিবিউটর ও এপ্রেন্টিস সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তখন থেকেই এরকম একটি উদ্যোগ মাথায় আসে। দেখুন, সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু এখন আর অল্টারনেটিভ মিডিয়া নেই, একটি প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হিসেবে নিজেকে অনবরত জানান দিচ্ছে। কিন্তু সবার লেখার গন্তব্য বলতে গেলে তার নিজের ফেসবুক টাইমলাইন। সিরিয়াসলি ব্লগিং করেন, এরকম ব্লগারের সংখ্যা এখন যৎসামান্য। অথচ এত অসাধারণ সব লেখা, দারুণ সব এনালাইসিস- সেসব সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার উপায় নেই! সব ভেবেই ‘এগিয়ে চলো’র যাত্রা শুরু।জাগো জবস : একজন স্বপ্নবান তরুণ হিসেবে এ কাজ কেমন লাগছে?মুক্তার ইবনে রফিক : অসাধারণ লাগছে। অনেক কিছু জানার এবং জানানোর সুযোগ হচ্ছে। ভিন্নধর্মী কিছু পাঠকদের হাতে তুলে দেয়ায় একটা প্রশান্তি কাজ করে। এই ধারাটা যেন ধরে রাখতে পারি, এটা ভীষণ বড় একটা চ্যালেঞ্জ। সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। জাগো জবস : আপনার কাজে আয় ও সুযোগ-সুবিধা কেমন?মুক্তার ইবনে রফিক : এটা একেবারেই স্টার্টিং একটা ফেস। আপাতত আয় নিয়ে ভাবছি না। তবে খুবই প্রমিসিং একটা ফিল্ড। আপনি নিজের ভাবনায় যতটা ভ্যারিয়েশন আনতে পারবেন, টার্গেট অডিয়েন্সের পালস বুঝতে পারবেন, ততটাই সাফল্য আসবে। একটি অনলাইন পত্রিকা চালাতে গেলে ঝুঁকিও আছে বেশ কিছু। সাংবাদিকতা পেশাটাই তো ঝুঁকির! তবে একই সাথে রোমাঞ্চকর এবং চ্যালেঞ্জিংও। তবে পকেটে টাকা থাকলেই কাউকে অনলাইন পোর্টাল খুলতে বারণ করব। আপনি হয়তো অনেক অ্যাড পাবেন, টাকা ইনকাম করবেন- কিন্তু সেটা হবে ক্ষণস্থায়ী। সাংবাদিকতার বেসিক ব্যাপারগুলো না জেনে থাকলে অবশ্যই এরকম উদ্যোগ নিবেন না।জাগো জবস : আপনার মতো হতে চাইলে কী করতে হবে?মুক্তার ইবনে রফিক : আমি খুবই তুচ্ছ একজন মানুষ। তবু কেউ যদি আমার মতো হতে চান, আমি বলব- ‘Be Yourself.’ নৈতিকতা খুব বড় একটা ব্যাপার। মানুষকে ভালোবাসুন, সাধ্যমত অসহায়দের পাশে দাঁড়ান। অহংকারী হবেন না, ব্যবহারে থাকতে হবে পরিমিতিবোধ। শুধু পাঠ্যবইয়ে ডুবে থাকলে হবে না, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজে প্রচুর পার্টিসিপেশন থাকতে হবে। কত সামিট হয়, ওয়ার্কশপ হয়- সেসবে অংশ নিতে হবে। ক্যারিয়ার বেছে নেয়ার পথে ভেবে-চিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে। যেটা প্যাশন, সেটাই বেছে নিতে হবে। অনেক বাধা আসবে লাইফে, অনেক স্ট্রাগলিং পিরিয়ড আসবে। কিন্তু কখনো দমে যাওয়া চলবে না। আঁধার কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না, আলো আসবেই।জাগো জবস : সফলতা বলতে আপনি কি বোঝেন?মুক্তার ইবনে রফিক : বুড়ো বয়সে চোখের সামনে নিজের দুই জেনারেশনকে হাসিমুখে দেখতে দেখতে পেছনে রিওয়াইন্ড করে যদি তেমন বড় কোনো অতৃপ্তি না পাই, তবেই নিজেকে সফল মনে করব।এসইউ/এবিএস