কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, সেচ সঙ্কট, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের কারণে চলতি মৌসুমে আমনের আবাদ নিয়ে হতাশায় দিন কাটছে কৃষকের। অনেক কৃষক ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তারা সবজি কিংবা অন্য ফসল আবাদে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাদ করা জমি থেকে প্রায় ৫ লাখ ৩৪ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন আমন উৎপাদন সম্ভব। সূত্র জানায়, বছরে তিন ধরনের ফসল আবাদ কার্যক্রম চালু থাকায় আমনের মৌসুমে সারাদেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়ে সেচ সঙ্কট দেখা দেয়। সেচ সঙ্কটের কারণে সময় মতো জমিতে পর্যাপ্ত পানি দিতে না পেরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান আবাদ এখন হুমকির মধ্যে পড়েছে।কৃষকরা জানান, পানি দেয়ার প্রধান মাধ্যম গভীর নলকূপের ওপর কৃষকরা নির্ভরশীল হলেও নানা জটিলতায় বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ে অধিকাংশ গভীর নলকূপ অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ এই সময়টিতেই গভীর নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় আমন চাষে চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।ঠাকুরগাঁও সেচ সঙ্কটের কারণ হিসেবে জানা যায়, প্রায় লক্ষাধিক হেক্টর জমি আবাদের জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে মাত্র এক হাজার ২০০টি গভীর নলকূপ। কাগজে-কলমে এই সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি গভীর নলকূপ থাকলেও মাঠের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালু করার উপযোগী এসব গভীর নলকূপের মধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে মাত্র প্রায় ৭০০ টির মতো। বিআরডিবি, কৃষি বিভাগ, বিএডিসিসহ সরকারের বিভিন্ন নলকূপ থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতায় জেলার এ সকল গভীর নলকূপ বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয়েছে সেচ সঙ্কট। বিভিন্ন বিভাগের আওতাধীন অধিকাংশ গভীর নলকূপই চালানো হয় মাঠ পর্যায়ে সমিতির মাধ্যমে।সমিতিগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংক ঋণসহ নানা ধরনের সঙ্কটে জেলার অনেক গভীর নলকূপ বর্তমানে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়া জেলার প্রায় ১৫ হাজার অগভীর নলকূপ থাকলেও তার মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। অধিকাংশ অগভীর নলকূপ ডিজেলচালিত হওয়ায় খরচ পোষাতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষকরা। সব মিলিয়ে অপর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা আর সেচ সংকটের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ে চলতি মৌসুমে বোরো ফসল আবাদ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।সদর উপজেলা গড়েয়া এলাকার কৃষক সামশুল হকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ধান চাষে অব্যাহত লোকসান কাটিয়ে উঠতে কৃষকরা তাদের আবাদ তালিকায় পরিবর্তন অব্যাহত রেখেছেন। এরপরও সামাল দিতে পারছেন না। ধান চাষে তারা অব্যাহতভাবে মার খেয়েই চলছেন। সব কিছুর বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও ধানের বাজার কমতির দিকেই থেকে যাচ্ছে। ফলে কৃষক তার উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। তাই লোকসান কাটিয়ে উঠতে তারা আমন বা বোরোর জমিতে আলু, সরিষা, ভুট্টাসহ চলতি মৌসুমের রকমারি ফসল চাষ ও পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এসব ফসল থেকে তারা গেল রোপা-আমনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী জানান, জেলায় ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা কমে যাচ্ছে ঠিক তেমনটা না। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের তুলনায় কৃষক ধান চাষের থেকে অন্যন্যা ফসলের প্রতি ঝুঁকছেন। কৃষক যদি সময় মতো ধানের ন্যায্য মূল্য পায় তাহলে ধান চাষে সুদিন ফিরে আসবে। রবিউল এহসান রিপন/এসএস/এমএস
Advertisement