জাগো জবস

প্রকৌশল ছেড়ে বিসিএস ক্যাডার হলেন তানভীর

প্রকৌশল ছেড়ে বিসিএস ক্যাডার হলেন তানভীর

তানভীর রহমান সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার সন্তান। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) মেকাট্রনিক্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন। পড়াশোনা শেষে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন বদলে চাকরির প্রস্তুতিতে লেগে ছিলেন। সম্প্রতি ৪৪তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার ৪৪তম বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—তানভীর রহমান: আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলায়। বাজারে বাবার দোকান ছিল, মা ছিলেন গৃহিণী। পরিবারের ছোট ছেলে হিসেবে ছিলাম সবার আদরের। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে অন্যসব গ্রামের ছেলের মতোই। মাঠে-ঘাটে-পুকুরে দুরন্তপনায়। ক্রিকেট-ফুটবল খেলতে পছন্দ করতাম। স্কুল ফাঁকি দিয়েও হরহামেশা করা হয়েছে এ কাজ। তবে নবম শ্রেণিতেই এ ধারায় ছেদ পড়ে। পড়াশোনা করতে চলে যেতে হয় রাজশাহীর স্কুল হোস্টেলে। বলা যায়, এখানেই আমার বেড়ে ওঠার শুরু। পরে রাজশাহী-ঢাকা-চট্টগ্রামের নানা রকমের নানা মানুষের সাথে জীবনের গল্প ভাগ করতে করতে বড় হওয়া। অবশ্যই বলতে হয়, জীবনের এ পথচলায় হারানোর চেয়ে পেয়েছি বেশি।

জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে বলুন—তানভীর রহমান: অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নিজ উপজেলা তাড়াশেই পড়াশোনা করেছি। তবে এসএসসি দিয়েছি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল রাজশাহী থেকে। পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি–তিনটিতেই বোর্ড স্কলারশিপ পেয়েছি। এরপর নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিক্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করি। ছোটবেলা থেকেই মধ্যম সারির ছাত্র ছিলাম। তবে পাবলিক পরীক্ষাগুলো দৈবভাবে সব সময়ই ভালো হতো।

জাগো নিউজ: বিসিএস দেবেন এমন ভাবনা মাথায় এলো কীভাবে?তানভীর রহমান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে বিদেশে উচ্চশিক্ষা এবং সরকারি চাকরি; এ দুয়ের দ্বিধার মধ্যে বিদেশে উচ্চশিক্ষাকে বেছে নিই। তবে করোনা মহামারিতে এ সিদ্ধান্ত বদলে যায়। মূলত করোনার পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ক্রান্তিলগ্নে বিসিএস নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করি।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?তানভীর রহমান: চুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে চট্টগ্রামেই পুরো চাকরির প্রস্তুতি নিয়েছি। যেদিন থেকে বিসিএস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি; সেদিন থেকে আর ক্যারিয়ার নিয়ে অন্য চিন্তা করিনি। আমার বিসিএস যাত্রার সবথেকে কঠিন অধ্যায় ছিল বিসিএসের পড়া শুরুর প্রথম ৩-৪ মাস। প্রিলিমিনারির এত বড় সিলেবাসের কোনো কূল-কিনারা করতে পারতাম না। কোচিংয়ে পরীক্ষা দিয়ে খারাপ মার্ক আসতো; তখন হতাশ হয়ে পড়তাম। কয়েক মাস পর যখন আবিষ্কার করলাম, কেউ চাইলে দিনে ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে পারে, সেদিন থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিদিন ২টি টিউশনি করিয়েও পড়ার অ্যাভারেজ সময় ১০ ঘণ্টা রাখার চেষ্টা করতাম। পাশাপাশি লাইব্রেরিতে যেতাম প্রতিদিন। কোচিংয়ের পরীক্ষাগুলো সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। পিএসসির সিলেবাস ধরে প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য আমার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল। আমার দুর্বলতা এবং শক্তির দিক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল। আমি বিসিএস প্রস্তুতির জন্য ১ বছরের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম এবং এ সময়ে অন্য কোনো দিকে মনোযোগ দিইনি। আলহামদুলিল্লাহ, পরিকল্পনায় সফলও হয়েছি।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পেতে যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন বিদেশে পড়তে যাওয়ার পর যেসব বিষয় জানা জরুরি

জাগো নিউজ: ৪৪তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, অনুভূতি কেমন?তানভীর রহমান: ৪৪তম আমার প্রথম বিসিএস। এ পর্যন্ত আমি তিনটি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। প্রত্যেকটিতেই আমার প্রথম পছন্দ বিসিএস পুলিশ। এ ক্যাডারে সুপারিশ পাওয়া আমার কাছে অনেকটা স্বপ্নপূরণ হওয়ার মতোই। যদিও গত ২ বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকায় সেই ৪ বছর আগের মতো আবেগ আর নেই। তবে লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় সন্তুষ্টি অনুভব করছি।

জাগো নিউজ: বিসিএস জার্নিতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?তানভীর রহমান: প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যুদ্ধ করাই বিসিএস জার্নিতে আমার প্রধান প্রতিবন্ধকতা। স্বভাবত আমি একটু অলস প্রকৃতির। এক জিনিসে বেশিদিন মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না। তবে এই বিসিএস জার্নিতে আমি একটি নির্দিষ্ট লাইফস্টাইল লিড করেছি একটি দীর্ঘসময়। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠা, লাইব্রেরিতে যাওয়া, টিউশন করা, রাতে বাসায় পড়া। কোনো ব্রেক নেই, কোনোদিন ছুটি নেই। এই ক্লান্তিকর সময় পার করেছি এক বছরেরও বেশি সময়। আমার প্রথম চাকরি হওয়ার দিন পর্যন্ত। মাঝে মাঝে ক্লান্তি চলে আসতো, বিরক্ত হয়ে যেতাম। কিন্তু নিজের সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছি। ফলাফল পেতেও আমার খুব বেশি সময় লাগেনি। আমার জীবনে অংশগ্রহণ করেছি এরকম মাত্র ১টি প্রিলিমিনারি ফেল করেছি। অংশগ্রহণ করা প্রথম তিনটি লিখিত পরীক্ষার মধ্যে তিনটিতেই চাকরি পেয়েছি। নিজের সাথে করা এ যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ফলেই এ ফলাফলে এতটা খুশি।

Advertisement

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?তানভীর রহমান: সবাই বলে বিসিএস অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি ‘The harder you work, The luckier you get’। নতুনরা বিসিএস প্রস্তুতি নিতে চাইলে অসীম ধৈর্য ও অমানসিক পরিশ্রম করার মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। লেগে থাকতে হবে জীবনের অন্য সবকিছু উপেক্ষা করে। এগোতে হবে নিজস্ব পরিকল্পনামতো, কৌশল ঠিক করতে হবে নিজের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়ে। সম্পূর্ণভাবে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজের সাথে সব সময় সৎ থাকতে হবে। নিজেকে কোনোভাবেই ফাঁকি দেওয়া যাবে না।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?তানভীর রহমান: এখনই ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘ কোনো পরিকল্পনা করিনি, বর্তমানকে উপভোগ করছি। তবে প্রজ্ঞাপন হয়ে জয়েন করতে পারলে চেষ্টা থাকবে নিজেকে ভেঙেচুড়ে একজন প্রকৃষ্ট জনগণের সেবক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে প্রস্তুত করতে। আয়নায় নিজেকে কখনো নিজের কাছে যেন ছোট না মনে হয়, সে চেষ্টা থাকবে জীবনভর।

এসইউ/এমএস