রাজনীতি

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান, বিএনপির ভবিষ্যৎ কোন পথে?

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান, বিএনপির ভবিষ্যৎ কোন পথে?

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে তুমুল আলোচনা।

Advertisement

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে পরিকল্পিতভাবে একটি ষড়যন্ত্র চলছে, যার পেছনে দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে স্লোগানের পেছনে শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতা নয়, দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, খুন, ধর্ষণ ও হত্যা—এ ধরনের গুরুতর অভিযোগও একটি বড় ভূমিকা রাখছে।

স্লোগানের উৎস ও বিতর্কের গভীরতা

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান এসেছে ইসলামপন্থি দল, বিএনপির প্রাক্তন শরিক, শিক্ষার্থীদের একাংশ এবং কিছু অসন্তুষ্ট রাজনৈতিক অংশ থেকে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দেশের বাইরে থেকেও কয়েকজন ব্যক্তি এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, খুন, ধর্ষণ ও হত্যাসহ গোষ্ঠীগত সহিংসতার মতো নানান অভিযোগ রয়েছে, যা সরাসরি এই স্লোগানের উৎস হিসেবে কাজ করছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

‘তারা প্রতি মাসে দুই লাখ করে টাকা চায়, না দেওয়ায় মেরেই ফেললো’ মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যা: ছাত্রদল-যুবদলে পদত্যাগের হিড়িক ‘আজীবনের জন্য ছাত্রদল-বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম’ বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ নেতাকর্মীদের অব্যাহত অপকর্ম ও দলের ভাবমূর্তি

বিভিন্ন সূত্র বলছে, দলের অভ্যন্তরে কেউ কেউ নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিক পদ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের জমি-জমা দখল, ব্যবসায়িক চাঁদাবাজি ও স্থানীয় প্রতিপক্ষকে হত্যাসহ নানান অপরাধে জড়িত। এ অভিযোগের পেছনে অনেক সময় তারেক রহমানের সান্নিধ্য বা তার দলের ক্ষমতার অপব্যবহারকে দায়ী করা হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলছে। ওই দলটির চরিত্র সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ জানে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তারা আলবদর, আলশামস গঠন করেছিল। তারা জানে বিএনপি একটি বড় দল, নির্বাচন হলে সরকার গঠন করবে। এ কারণেই বদনাম করছে।’

এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘যেহেতু রাজনীতি করি, রাজনৈতিকভাবে সামাল দেবো।’

Advertisement

আরও পড়ুন

বিএনপির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচারের অভিযোগ ফখরুলের বিএনপি থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে যা বললেন মনির খান বিএনপি কারও উসকানিতে পা দেবে না: জাহিদ হোসেন রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ‘টকিং হেডসের’ ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘এটা মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ হিসেবে করা হচ্ছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অশ্লীল স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। সংঘাত ইনভাইট করা হচ্ছে। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা কোনো ফাঁদে পা দেবো না।’

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আরও যোগ করেন, ‘আমাদের নেতাকর্মী যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছে, তাদের কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত। কিন্তু আমাদের ইমেজ সংকট হবে কেন? বিএনপি মহাসাগরের মতো একটা দল। এই দলের যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে, আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন সেভাবে দেখছে না। প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য থেকে একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে নির্বাচন বানচালের।’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি মো. আমিনুল হক অভিযোগ করেন, ‘এটা ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার। যারা দেশে নির্বাচন চায় না, তারা বিদেশিদের সহযোগিতায় দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ে ইসলামিক দলগুলোকে নিয়ে এগুলো করছে।’

আমিনুল হক আরও বলেন, ‘আমাদের ইমেজ সংকট নেই। ব্যবসায়িক বিষয় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় এখন: আলাল নির্বাচন বানচাল করতেই পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে: দুদু বিএনপি এখন চাঁদাবাজদের দলে পরিণত হয়েছে: নাহিদ ইসলাম মিটফোর্ডের ঘটনায় তাবেদার শক্তির এদেশীয় ধারকবাহক জড়িত: রিজভী অঙ্গসহযোগী সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ‘একটি দেশি-বিদেশি চক্র মিলে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। জুলাইয়ের পক্ষশক্তিগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে উসকে দিতে চাইছে। বিএনপি-ছাত্রদল সবচেয়ে বড়ো বাধা হওয়ায় আমাদের টার্গেট করেছে। কিন্তু সাময়িক লাভের আশায় জামায়াত ও এনসিপির অনেকেই না বুঝে এতে শামিল হচ্ছে। আমরা এই গভীর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সজাগ রয়েছি।’

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় রাজনৈতিক গতিপথ পরিবর্তনের জন্য এটা সংঘাত সৃষ্টির ষড়যন্ত্র যাতে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়।’

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, ‘এটা তো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড। দেশের মধ্যে যাতে অস্থিরতা তৈরি হয়, অস্থিতিশীল হয়, স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয় সেই অপচেষ্টা চলছে। এটা পতিত আওয়ামী লীগ চাইছে, তাদের অভিভাবক পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র চাইছে। সেখানে আমার কাছে মনে হয়েছে কিছু ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক দলও তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে।’

আরও পড়ুন

মিটফোর্ডের ঘটনায় ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ করবে বিএনপি প্রবাসীর কাছে চাঁদা চেয়ে কারাগারে বিএনপি নেতা নির্বাচনে বাধাগ্রস্ত করা দল ‘রাজনৈতিক দল’ নয়: আমীর খসরু বিএনপির অর্থ সহায়তা পেলো নিহত সোহাগের পরিবার

‘বিএনপি সব সময় অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে বিএনপি সোচ্চার থাকে, প্রশাসনকে সহযোগিতা করে। সুতরাং বিএনপি সবকিছু রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবে।’ বলেন রাজিব আহসান।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, ‘যাদের জনপ্রিয়তা নেই, তারা তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পায়ে পাড়া দিয়ে আমাদের আবেগের জায়গায় আঘাত করছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে এটা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। ১৫ তারিখে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবো।’

আরও পড়ুন

একটি মহল তারেক রহমানের চরিত্রহননের দুঃসাহস দেখিয়েছে: ফখরুল মিটফোর্ডে বর্বরতার দায় বিএনপিকেই নিতে হবে: ইসলামী আন্দোলন ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিএনপির ওপর দায় চাপানো নোংরা রাজনীতি চাঁদা না দিলেই দোকান বন্ধ, ব্যবসায়ীদের মারধর ভবিষ্যৎ কোথায়?

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির ওপর ‘অন্তর্ঘাত’, ‘গোষ্ঠিত্ব’ ও ‘বিশৃঙ্খলা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘ইমেজ সংকটের চেষ্টা হচ্ছে। বিএনপি সব সময় মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। ভোটের মাধ্যমে স্পষ্ট হবে বিএনপির ইমেজ সংকট কি না।’

কেএইচ/এমএমএআর/এমএফএ/এমএস