লাইফস্টাইল

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে হালকা উপসর্গ, ঝুঁকিতে বৃদ্ধ-শিশুরা

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে হালকা উপসর্গ, ঝুঁকিতে বৃদ্ধ-শিশুরা

নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের আরও এক রূপ। আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিলেও মানুষের মধ্যে প্রশ্নের শেষ নেই। এই ভ্যারিয়েন্ট কতটা সংক্রামক? উপসর্গই বা কেমন? আবারও কি ফিরছে লকডাউনের ছায়া? এমনই এক সময় করোনাভাইরাসের নানান বিষয় নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আয়েশা আক্তারের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ।

Advertisement

সাম্প্রতিক এই করোনাভ্যারিয়েন্টের প্রকৃতি, বিস্তার, প্রতিরোধ এবং করণীয় নিয়ে ডা. আয়েশা আক্তার দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ও পরামর্শ। ডা. আয়েশা আক্তারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের সহ-সম্পাদক জান্নাত শ্রাবণী।

জাগো নিউজ: করোনার নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে শোনা যাচ্ছে। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।

আয়েশা আক্তার: সম্প্রতি করোনার নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারি যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, তা সারা বিশ্বের জন্যই ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করেছি। টিকা নেওয়ার ফলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছিল সংক্রমণ। তবে এটা মনে রাখতে হবে করোনা পুরোপুরি চলে যায়নি। ২০২৫ সালে এসেও আমরা দেখছি, উন্নত দেশগুলোতে আবার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশেও সংক্রমণ কমাতে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

Advertisement

আরও পড়ুন করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ ‘জ্বর হলেই ভয় লাগে, ডেঙ্গু-করোনার আতঙ্কেই হাসপাতালে আসছি’ করোনার চেয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি, প্রতিরোধের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের করোনায় একজন মারা গেছেন, শনাক্ত আরও ৮

জাগো নিউজ: নতুন এ ভ্যারিয়েন্টটি কতটা মারাত্মক? বাংলাদেশে এর সংক্রমণ কেমন?

আয়েশা আক্তার: করোনাভাইরাসের অনেক রকম ভ্যারিয়েন্ট আছে। ওমিক্রন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টির মতো সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে। সর্বশেষ যেসব ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে সেগুলো অতটা মারাত্মক না হলেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা রয়েছে। বিশেষ করে যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন-বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী নারী কিংবা দীর্ঘদিনের অসুস্থ রোগী, তাদের মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

জাগো নিউজ: এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যখাতে আমাদের কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

আয়েশা আক্তার: আমি বলব, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, কিন্তু অবশ্যই সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য সংস্থা আবার সক্রিয় হয়েছে। আমরা সবাই জানি, করোনা ছাড়াও এখন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাজেই আমাদের উচিত, যে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

Advertisement

জাগো নিউজ: করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে কী কী উপসর্গ দেখা যাচ্ছে?

আয়েশা আক্তার: বর্তমানে আক্রান্তদের মধ্যে হালকা উপসর্গই বেশি দেখা যাচ্ছে। যেমন: হালকা জ্বর, শুকনো কাশি, গলা খুসখুস, মাথাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।

এ উপসর্গগুলো মূলত ‘আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে’ সীমাবদ্ধ থাকছে। তবে আগে যেমন ‘লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট’ অর্থাৎ ফুসফুসে সমস্যা দেখা যেত, এখন তা খুব কম। তাই মনে হচ্ছে ভ্যারিয়েন্টটি তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ, তবে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য এখনো বিপজ্জনক হতে পারে।

আরও পড়ুন বিশেষ ব্যবস্থায় নেওয়া হলো করোনা আক্রান্ত শিক্ষার্থীর পরীক্ষা দিনাজপুরে এবার ভাই-বোন করোনা আক্রান্ত হাত স্যানিটাইজ করলেও মাস্ক পরতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা এইচএসসির সব কেন্দ্রে তৎপর থাকবে মেডিকেল টিম

জাগো নিউজ: অনেকে তো আগেই চার ডোজ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন। নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্য কি আবার নতুন টিকার প্রয়োজন হবে?

আয়েশা আক্তার: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমরা জানি, বেশির ভাগ মানুষ তিন বা চার ডোজ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন। কিছু মানুষ টিকা নেননি বা অল্প নিয়েছেন, বিশেষ করে যারা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগেছেন।

নতুন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে, এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আলাদা টিকার কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে গবেষণা চলছে। ভবিষ্যতে যদি দেখা যায়, নতুন ভ্যারিয়েন্টে বিদ্যমান টিকার কার্যকারিতা কম, তখন হয়তো নতুন টিকা বা বুস্টার প্রয়োজন হতে পারে।

জাগো নিউজ: অনেকে টিকা নিয়েছেন অনেক আগে। এতদিন পরেও টিকার কার্যকারিতা থাকে কি?

আয়েশা আক্তার: হ্যাঁ, যারা প্রথম তিনটি ডোজ নিয়েছেন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে। তবে সময়ের ব্যবধানে টিকার কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, বিশেষ করে এক বা দুই বছর পর। তাই টিকা নেওয়ার পাশাপাশি আমাদের জীবনযাপনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেমন-পর্যাপ্ত ঘুম, বিশুদ্ধ পানি পান, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এগুলো রোগ প্রতিরোধে অনেক সাহায্য করে।

আরও পড়ুন করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন রোগীরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিট শেষ, করোনা পরীক্ষা বন্ধ এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে মাস্ক-স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করোনা ও ডেঙ্গুর সঙ্গে ভোগাচ্ছে চিকুনগুনিয়াও

জাগো নিউজ: অনেকে আক্রান্ত হওয়ার পর দেরি করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এতে কি সমস্যা হয়?

আয়েশা আক্তার: অবশ্যই সমস্যা হয়। অনেকে ভাবে বাসায় থেকেই ভালো হয়ে যাবেন, আবার কেউ কেউ খুব দেরিতে হাসপাতালে আসেন। এতে রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। যদি সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে না। কিন্তু দেরিতে এলে তখন রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে এবং তখন চিকিৎসা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তিনি নির্ধারণ করবেন রোগীর হাসপাতালে ভর্তি দরকার কি না, নাকি বাসায় আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া যাবে।

জাগো নিউজ: আপনি বারবার বলছেন আতঙ্ক নয়, সচেতনতা দরকার। এই বার্তাটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আয়েশা আক্তার: আতঙ্কিত হলে মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক সময় দেখা যায়, জ্বর-কাশি হলে মানুষ হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় বসে থাকে, আবার কেউ কেউ হোমিওপ্যাথি বা ভেষজ চিকিৎসা শুরু করে। কিন্তু এটা ভুল। আমাদের বুঝতে হবে, উপসর্গ যেটাই হোক ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা না কি কোভিড-ঠিকমতো পরীক্ষা না করে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটা জরুরি।

জাগো নিউজ: সচেতনতার জন্য নতুন করে আমরা জনগণকে কী কী বার্তা দিতে পারি?

আয়েশা আক্তার: আমার বার্তা খুব পরিষ্কার ‘আতঙ্ক নয়, সচেতনতা হোক প্রধান হাতিয়ার।’ করোনা বা যে কোনো

আরও পড়ুন এইচএসসিতে বসছেন সাড়ে ১২ লাখ পরীক্ষার্থী, স্বাস্থ্যবিধিতে কড়াকড়ি টাঙ্গাইলে চাহিদার তুলনায় কম করোনা পরীক্ষার কিট সরবরাহ নষ্ট করোনা পরীক্ষার মেশিন, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না ট্রাকচালকরা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কয়েকটি সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে যেমন-

>> হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা।>> বাইরে থেকে এসে বা খাবার আগে ভালোভাবে হাত ধোয়া।>> ভিড় এড়িয়ে চলা এবং প্রয়োজন হলে মাস্ক পরা।>> অসুস্থ বোধ করলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।>> টিকা নেওয়ার যোগ্য হলে অবশ্যই টিকা নেওয়া।>> সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, উপসর্গ দেখা দিলে নিজেকে আইসোলেট করা এবং অন্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

জাগো নিউজ: মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভ কামনা।

আয়েশা আক্তার: আপনাকে ধন্যবাদ।

জেএস/এমএমএআর/এমএফএ/জিকেএস