করোনা, চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু, এ তিন ভাইরাস বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
Advertisement
এ বছরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো নতুন দুটো সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি। যেগুলো ওমিক্রন জেএন-১ ভেরিয়েন্টের একটি উপ-শাখা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্টগুলোকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ না বলে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব মনিটরিং’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে অর্থাৎ এ বিষয়ে নজরদারির প্রয়োজন আছে। ওমিক্রনের এ সাব-ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি হলেও মারাত্মক অসুস্থতা কিংবা মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বয়স্ক ব্যক্তি, শারীরিকভাবে দুর্বল, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা এবং আগে থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত শিশু ও ব্যক্তিদের জন্য এই ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মক হতে পারে। করোনাভাইরাস সাধারণত হাঁচি-কাশি, কথা বলা, নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত ড্রপলেটের মাধ্যমে বা নাক, চোখ, মুখ স্পর্শ করলেও সংক্রমণ হতে পারে।
এ সময় চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ ও বেড়ে গেছে।চিকনগুনিয়ার সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে—গিঁটে গিঁটে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হওয়া, তীব্র ব্যথার সঙ্গে পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া ও গোড়ালিতে প্রদাহ হওয়া। বেশি অসুস্থ হলে স্নায়ুজনিত কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সঠিক চিকিৎসা হলে বেশিরভাগ শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। চিকনগুনিয়াতে মৃত্যু হয় না তেমন। কিন্তু অনেক বেশি ভোগে । তবে চিকনগুনিয়ায় সাধারণত প্লাটিলেট কমে না। সাধারণত বর্ষা মৌসুম শেষ হলে চিকনগুনিয়ার বিস্তার বেশি হতে দেখা যায়। মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডেঙ্গুর পাশাপাশি চিকনগুনিয়াও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু উভয়ই এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। ডেঙ্গুজ্বরের হালকা উপসর্গ যেমন; ৩ থেকে ৫ দিনের জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা থাকলে শিশুকে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতে বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত তরল পানীয় (স্যালাইন, ফলের রস, স্যুপ) খাওয়াতে হবে। জ্বর কমাতে শুধু প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয় । অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন এবং অন্যান্য ব্যথানাশক জাতীয় ওষুধ দেয়া উচিত না। এসব ওষুধ রক্তপাতের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। শিশুর জ্বর কমে যাওয়ার পর যদি হঠাৎ শরীর খারাপ বোধ করে, বারবার বমি হয়, পেটে তীব্র ব্যথা, রক্তপাত শুরু হয়, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, অজ্ঞান হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন তখনই প্রয়োজন হয় যখন রোগীর প্লাটিলেট সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে নামে বা অন্যান্য উপসর্গ সাথে থাকে, রক্তপাত দেখা দেয়, কোনো অপারেশন বা ইনভেসিভ প্রসিডিউরের প্রয়োজন পড়ে। শুধু প্লাটিলেট কম থাকার কারণে রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেকসময় বিপজ্জনক হতে পারে। হিমোগ্লোবিন খুব কমে গেলে বা রক্তপাতজনিত শক দেখা দিলে সম্পূর্ণ রক্ত বা রেড ব্লাড সেল ট্রান্সফিউশন দেয়া যেতে পারে যা একজন শিশু বিশেষজ্ঞই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তিনটি রোগই যেহেতু ভাইরাসজনিত তাই এদের নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তবে লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের তীব্রতা কমানো যায়।
Advertisement
শিশুটি করোনায় আক্রান্ত হলে জনসমাগমপূর্ণ স্থানে মাস্ক না পরা, হাত না ধোয়া, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার ফলে ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে, তাই ভিজুয়াল কার্ডের মাধ্যমে শিশুটিকে মাস্ক পড়ার গুরুত্ব বোঝাতে হবে, প্রয়োজনে প্রফেশনাল দের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। শ্বাসকষ্ট হলে হাসপাতালে ভর্তি ও অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে। আপডেটেড ভ্যাকসিন ও বুস্টার ডোজ গ্রহণ তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু কিংবা চিকনগুনিয়ার বিস্তার রোধে মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বিকল্প নেই। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোতে সততার সঙ্গে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করে সাথে সাথে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
যদি শিশুটি আক্রান্ত হয়ে যায় অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। সে ক্ষেত্রে শিশুটির পরিচিত ডাক্তারের কাছে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে l তারাই বুঝতে পারবেন চিকিৎসার পাশাপাশি বিশেষ শিশুটির মানসিক স্বাস্থ্য এবং থেরাপি দেওয়া কিভাবে সম্ভব। এখানে একটা মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম ওয়ার্ক থাকবে।থেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, কাউন্সিলর, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট। একটি সুস্থ স্বাভাবিক শিশুর আক্রান্ত হওয়া এবং একটি বিশেষ শিশুর আক্রান্ত হওয়া খুব বেশি পার্থক্য করা যাবে না । শুধু একটা বিযয় খেয়াল রাখতে হবে, সাধারণ শিশুটিকে বোঝানো যাবে যে ভাইরাসটা দিয়ে তার আক্রান্ত হয়েছে তার জন্য কি কি নিয়ম কানুন তাদেরকে মেনে চলতে হবে, কিন্তু বিশেষ শিশুটিকে বোঝানোর জন্য ও নিরাপদ রাখার জন্য আমাদের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা অবশ্যই থাকতে হবে।
বিশেষ শিশুটির জীবনের স্বাভাবিকতা নির্ভর করে ডক্টর, থেরাপিস্ট এবং স্পেশাল স্কুল এর কার্যক্রমের মাধ্যমে। যাতে তাদের মানসিক অস্থিরতা বেড়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে কারণ এসব প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত শিশরা সাধারণত নিয়মের বাইরে যেতে একটু অপছন্দ করে।
বিশেষ শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক বিশেষ শিশুটিকে সুস্থ রাখার জন্য এসময় খাদ্যাভাসের দিকে একটু বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি , তরল খাদ্য, ভিটামিন সি যুক্ত পুষ্টিকর খাবার তাদের খাদ্যতালিকায় রাখা খুবই প্রয়োজন যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
Advertisement
লেখক : কনসালটেন্ট, নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এন্ড পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট, বেটার লাইফ হসপিটাল।
প্রাক্তন অটিজম বিশেষজ্ঞ: ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল।
এইচআর/জিকেএস