মতামত

বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে নতুন অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে নতুন অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাবনা

২০২৫ সালের এপ্রিল। ঢাকার এক পোশাক কারখানার মালিক তুষার সাহেব মেইলের মাধ্যমে জানতে পারলেন, তার পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।দেশের বহু উদ্যোক্তার মতো তিনিও পড়লেন চরম দুশ্চিন্তায়। গণমাধ্যমে খবরটা ছড়িয়ে পড়তে সময় নিল না: যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশি পণ্যের উপর অতিরিক্ত ৩৭% 'পারস্পরিক শুল্ক' আরোপ করেছে, যা পূর্বের গড় ১৫% থেকে বেড়ে মোট ৫২% এর কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। এটি বাংলাদেশের রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতির জন্য এক গভীর সংকট তৈরি করবে। এই সংবাদ বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য এক বিরাট ধাক্কা। কিন্তু কেন এই শুল্ক? এর প্রভাবই বা কী? চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

Advertisement

দেশের একজন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ বলছেন: "এটা শুধু অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, এখানে রাজনীতিও জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়, তাই বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতেও চাপ তৈরি করছে।" যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্য মতে, বাংলাদেশ আমদানিকৃত মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪% শুল্ক আরোপ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় তারা রিসিপ্রোকাল (পাল্টা) শুল্ক আরোপ করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো-বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও বাণিজ্য বিশ্লেষকদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের গড় আমদানি শুল্কহার ৮-১০ শতাংশের বেশি নয়।

প্রাথমিক ধাক্কা,

প্রাথমিক ধাক্কায় সাভারের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিক সুমি আক্তার গত মাসে তার চাকরি হারিয়েছে। "ফ্যাক্টরি মালিক বললেন, অর্ডার কমে যাচ্ছে, তাই ১০০ জনকে ছাঁটাই করতে হচ্ছে," সুমি কেঁদে ফেললো। শুধু সুমি নয়, এভাবে হাজারো শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছে।

নরসিংদীর পাটকল শ্রমিক জাহাঙ্গীরের গল্পও প্রায় একই রকম। "আমাদের কারখানার ৩০% উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে," তিনি জানালেন। মার্কিন ক্রেতারা এখন পাটের ব্যাগের বদলে সস্তা অন্য পণ্য কিনছে।

Advertisement

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে যা রপ্তানি করে,

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে, যার একটি বড় অংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে-দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে। ২০২৪ সালে এই বাজার থেকে আয় হয় প্রায় ৮.৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে তৈরি পোশাকের বাইরেও বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতভিত্তিক পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ধীরে ধীরে বৈচিত্র্য আনতে শুরু করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য, ওষুধ, প্লাস্টিক, মনোহারি পণ্য। প্রতিবছর বাংলাদেশ মার্কিন বাজারে ৮-১০ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য, ২-৩ কোটি ডলারের ওষুধ, ১-২ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য ও মুদি পণ্য রপ্তানি করে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে যা আমদানি হয়,

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যভান্ডারে দেখা যায়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল রয়েছে ২৯ কোটি ডলারের এছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের পণ্য এসেছে ২৬২ কোটি ডলারের। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা বা স্ক্র্যাপ, এলপিজির উপাদান বিউটেন, সয়াবিন বীজ, বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), হুইস্কি, গাড়ি, গম, উড পাল্প, পুরোনো জাহাজ, সয়াকেক, কাঠবাদাম ইত্যাদি।

ভবিষ্যতের রূপরেখা কি হতে পারে;

দক্ষিন এশিয়ায় শ্রীলঙ্কার পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশর উপর সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করেছে যেখানে ভারত, পাকিস্তানকেও বাংলাদেশর হতে কম হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রসাশন বলছে, বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হতে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর ৭৪% শুল্ক আরোপ করে (সূত্র : বিবিসি বাংলা) । কিন্ত হিসাব কষে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরোপিত শুল্কের পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি নয়। পরামর্শ দিচ্ছেন:১. কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোঃ শুল্ক পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনা চালিয়ে যাওয়া।• বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে প্রায় ১০০টি মার্কিন পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বাতিলের প্রস্তাব করা।• যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, গম এবং সয়াবিনের মতো প্রধান পণ্য আমদানি বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করা।২. বাজার বাড়ানো: ইউরোপ, চীন, জাপানে রপ্তানি বাড়াতে হবে।৩. পণ্যের মান উন্নয়ন: সস্তা পণ্যের বদলে উচ্চমানের পণ্য তৈরি করতে হবে।৪. সরকারি সহায়তা: রপ্তানিকারকদের জন্য ভর্তুকি ও কর ছাড় দরকার।

আসুন এবার দেখি সংকট নাকি সুযোগ?

কি আশার আলো আমাদের সামনে;তবে এই সংকটে কিছু উদ্যোক্তা নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন। ঢাকার একজন ফ্যাশন ডিজাইনার রুমানা ইসলাম এখন ইউরোপের বাজারে জোর দিচ্ছেন। "ইউরোপে আমাদের জিএসপি+ সুবিধা আছে। আমরা সেখানে অর্গানিক কটনের পোশাক পাঠাচ্ছি," তিনি বললেন। খুলনার এক চিংড়ি চাষি মো. সেলিম এখন তার পণ্য চীনে পাঠাচ্ছেন। "যুক্তরাষ্ট্রে দাম কম পাচ্ছি, কিন্তু চীন ভালো দাম দিচ্ছে," তিনি জানালেন।

Advertisement

রপ্তানি আয় কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ হ্রাস পাবে। বর্তমানে যখন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকারে নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়া রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাকে আরও দুর্বল করে তুলবে। এর ফলে টাকার মান আরও অবমূল্যায়ন হতে পারে, যা আমদানি ব্যয় বাড়াবে এবং সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করবে।

এই শুল্ক বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ইতিহাস বলে, বাংলাদেশ বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে গেছে। হয়তো এই সংকটই আমাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে, নতুন পণ্য তৈরি করতে শেখাবে। যেমনটা অর্থনীতিবিদরা বলছেন: "প্রতিটি সংকটই নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। আমাদের সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।" এই গল্পের শেষ এখনো লেখা হয়নি। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের এই নতুন অধ্যায় কীভাবে লেখা হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চিংড়ি রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ৮.৪০ বিলিয়ন ডলার আয় করে। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির খসড়া প্রকাশিত হওয়ায় বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই শুল্কের প্রভাব শুধু রপ্তানিতে সীমাবদ্ধ নয়, এটি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ তৈরি করতে পারে। তবে এই সংকটকে একটি সুযোগ হিসেবেও নেওয়া যায়-বাংলাদেশ যদি তার বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্ক নীতিগত পরিবর্তন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জগতে এক নতুন বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে। বিশ্বায়নের চর্চা যেখানে বহু দশক ধরে উন্মুক্ত বাজার ও বহুপাক্ষিক চুক্তির নীতিতে প্রবাহিত হচ্ছিল, সেখানে আজ আমরা দেখছি এক বিপরীতধর্মী ধারা-যেখানে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো ক্রমেই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ, জাতীয়তাবাদী অবস্থান এবং আদর্শিক বিবেচনায় প্রভাবিত হচ্ছে। এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুনভাবে আরোপিত আমদানি শুল্ক, যা সরাসরি বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প-যা থেকে বার্ষিক প্রায় ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয় আসে, যার একটি বড় অংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। এমন বাস্তবতায় দেশটি যখন নতুন শুল্ক আরোপ করে, তখন সেটি নিছক ব্যবসায়িক বিষয় থাকে না; এটি হয়ে ওঠে একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ। শুল্ক বাড়লে বাংলাদেশি পণ্যের মূল্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়বে, ফলে প্রতিযোগী দেশ যেমন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মেক্সিকো কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।

শুল্ক বৃদ্ধির ফলে পোশাক, হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও হালকা প্রকৌশল খাতে অর্ডার কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে-বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর প্রভাব শুধু শ্রমবাজারেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা ছড়িয়ে পড়বে দেশের সামগ্রিক ক্রয়ক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ বাজার এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপরও।

রপ্তানি আয় কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ হ্রাস পাবে। বর্তমানে যখন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকারে নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়া রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাকে আরও দুর্বল করে তুলবে। এর ফলে টাকার মান আরও অবমূল্যয়ন হতে পারে, যা আমদানি ব্যয় বাড়াবে এবং সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করবে। এই পরিস্থিতি দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

আরেকটি বড় ঝুঁকি হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ (FDI)। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে অবস্থানরত বড় ব্র্যান্ডগুলো যদি বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ বাজার হিসেবে বিবেচনা করে, তবে আমাদের ইপিজেড বা হাইটেক পার্কভিত্তিক বিনিয়োগের গতি শ্লথ হয়ে পড়বে। যে বাংলাদেশ এতদিন ধরে "চীন-প্লাস ওয়ান" কৌশলের অংশ হিসেবে রপ্তানিকারক ও উৎপাদন ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল, সেই ভাবমূর্তি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুল্ক আরোপকে অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন “অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিক ও আদর্শিক প্রয়োজনে গৃহীত পদক্ষেপ।” এটি এখন একটি বৈশ্বিক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে-যেখানে WTO-এর মতো বহুপাক্ষিক কাঠামোর নিয়মনীতি উপেক্ষিত হচ্ছে, এবং বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলো একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশকে তার কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

আমাদের নীতিনির্ধারকদের এখনই কার্যকর অর্থনৈতিক কূটনীতি চালু করা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য সংলাপ জোরদার করতে হবে, যেখানে GSP সুবিধা পুনর্বহালের পাশাপাশি একটি দীর্ঘমেয়াদি শুল্ক সুবিধার দাবি জানানো যেতে পারে। একইসাথে রপ্তানি বাজারের বহুমুখীকরণ অপরিহার্য-ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবেশাধিকার জোরদার করতে হবে।

অন্যদিকে, আমাদের অভ্যন্তরীণ শিল্প নীতিকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে উচ্চমূল্য সংযোজনসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও প্রযুক্তিনির্ভর খাতগুলোতে রপ্তানির সক্ষমতা তৈরি হয়। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বৈদ্যুতিক পণ্যের মতো খাতগুলোর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি আমাদের জন্য এক গভীর বার্তা বহন করে-বিশ্ব বাণিজ্য এখন আর কেবল অর্থনৈতিক যুক্তির উপর নির্ভর করছে না, বরং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও কৌশলগত প্রতিযোগিতায় প্রভাবিত হচ্ছে। এই নতুন বাস্তবতায় আমাদের চ্যালেঞ্জ শুধু তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধান নয়, বরং একটি টেকসই, বহুমাত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য কৌশল গ্রহণ করা, যা আমাদের অর্থনীতিকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারবে। চ্যালেঞ্জ বড়, তবে সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষ মানবসম্পদ ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে-এই সংকটই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের মাইলফলক।

লেখক : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক বিশ্লেষক।

এইচআর/জেআইএম