লাইফস্টাইল

গাড়িতে উঠলে ঘুম আসে কেন?

গাড়িতে উঠলে ঘুম আসে কেন?

তানজিদ শুভ্রসন্ধ্যার ট্রাফিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা অথবা সকালে অফিসের দিকে ছুটতে ছুটতে গাড়িতে চোখ বন্ধ হয়ে আসার অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই আছে। আপনি হয়তো জানেন না, গাড়িতে উঠলেই কেন যেন এক ধরনের ঘুম ঘুম ভাব আপনাকে আচ্ছন্ন করে। কেউ কেউ কিছুক্ষণ পরেই গভীর ঘুমে ঢুকে পড়েন।

Advertisement

প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঘুম কি শুধুই ক্লান্তির ফল? নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর মনস্তাত্ত্বিক, শারীরিক এবং পরিবেশগত কারণ? চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কয়েকটি কারণ যার ফলে গাড়িতে উঠলে আমাদের ঘুম আসে-

গতি ও দুলুনিগাড়ি চলার সময় যে হালকা দুলুনি তৈরি হয়, সেটিই সবচেয়ে বড় ঘুম ডেকে আনার কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, এই দুলুনি আমাদের ভেস্টিবুলার সিস্টেমে প্রশান্তির সংকেত পাঠায়। আমরা দেখি ছোটদের দোলনায় দুল দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয় কিংবা মা বা দাদি কোলে দুলিয়ে ঘুম পাড়ান, গাড়ির এই দোলনও ঠিক তেমনি কাজ করে। এটি একটি স্বাভাবিক ঘুম-প্ররোচক প্রক্রিয়া।

হোয়াইট নয়েজের প্রভাবযখন একই সমান তরঙ্গ বিশিষ্ট শব্দ পুনরাবৃত্ত হয়ে বাইরের কোলাহোল থেকে আপনাকে স্বস্তি দেয়, তা হলো হোয়াইট নয়েজ। গাড়ির ইঞ্জিন, টায়ারের ঘর্ষণ, বাইরের বাতাসের শব্দ সব মিলিয়ে এক ধরনের একটানা শব্দ তৈরি হয়। এটি মনকে শান্ত করে, বাইরের বিরক্তিকর শব্দ থেকে আলাদা করে এবং ঘুমের উপযোগী এক মৃদু পরিবেশ তৈরি করে। এমন শব্দ আপনার মস্তিষ্কে অতিরিক্ত উত্তেজনা কমিয়ে ঘুমের রাস্তা প্রশস্ত করে। তাই গাড়ির এই শব্দও অজান্তেই ঘুমের বন্ধু হয়ে ওঠে।

Advertisement

অক্সিজেনের ঘাটতিআমাদের মস্তিস্ক অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি অঙ্গ এবং এটি পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছাড়া স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। অনেক সময় গাড়িতে জানালা বন্ধ থাকে। এতে গাড়ির ভিতরে হালকা অক্সিজেন স্বল্পতা তৈরি হয়, যা শরীরের ক্লান্তি বাড়িয়ে দেয়। এসময় মানসিক উদ্দীপনা কমে যায় আর মেলাটোনিনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই অবস্থা থেকে মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্রামের সংকেত পাঠায়। ফলে আপনি অলসতা অনুভব করতে থাকেন এবং ধীরে ধীরে ঘুমের জগতে ঢুকে পড়েন।

সীমিত কার্যকলাপ ও চোখের বিশ্রামযাত্রী হিসেবে যখন আপনি গাড়িতে বসে থাকেন, তখন আপনার চোখ ও মস্তিষ্ক একটানা সক্রিয় থাকে না। চারপাশের দৃশ্য প্রায় একই রকম, দ্রুত পাল্টে যেতে থাকা গাছ, বাড়ি, সড়কচিত্র। এগুলোর ওপর ফোকাস ধরে রাখা কষ্টকর ও ক্লান্তিকর। একসময় চোখ ধীরে ধীরে বিশ্রাম চায়, আর মস্তিষ্ক চোখ বন্ধ হতে দেখলেই ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন নিঃসরণ শুরু করে।

ক্লান্তি ও পূর্ববর্তী মানসিক প্রস্তুতিঅনেক সময় আমরা ভ্রমণে বের হওয়ার আগে বিশ্রাম নিতে পারি না। প্রস্তুতি, তাড়াহুড়া, দেরির ভয় সব মিলিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। গাড়িতে উঠেই যখন আমরা চেয়ার হেলিয়ে চোখ বন্ধ করি, তখন শরীর নিজে থেকেই ঘুমের চাহিদা পূরণ করতে চায়। আপনি যদি রাতে কম ঘুমিয়ে থাকেন, গাড়ির প্রশান্ত পরিবেশ তখন যেন আদর্শ বিশ্রামগৃহে পরিণত হয়।

নিরাপদ পরিবেশে বিশ্রাম প্রবণতাগবেষণা বলছে, মানুষ তখনই ঘুমায় যখন সে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করে। যদি আপনি বিশ্বাসভাজন ড্রাইভারের সঙ্গে থাকেন, বা পরিবার বা প্রিয়জনের সঙ্গে ভ্রমণ করেন, তাহলে আপনার মন আত্মবিশ্বাসী থাকে যে আপনি নিরাপদ। এই মানসিক নিশ্চয়তা শরীরকে ঘুমানোর সুযোগ দেয়।

Advertisement

গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়া শুধু ক্লান্তির ফল নয়, বরং এটি আমাদের ইন্দ্রিয়, পরিবেশ, এবং মনস্তত্ত্বের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া। গাড়ির দুলুনি, একঘেয়ে শব্দ, চোখের বিশ্রাম, মানসিক প্রশান্তি এবং শারীরিক ক্লান্তি সব একত্র হয়ে আমাদের শরীরকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। এই স্বতঃস্ফূর্ত ঘুম হয়তো ছোট কিন্তু অনেক সময় দারুণ প্রশান্তিদায়ক। এ ঘুম একেবারেই প্রাকৃতিক এবং শরীরের আপন ছন্দের প্রকাশ।

আরও পড়ুনঘরোয়া উপায়ে মাছি তাড়াবেন যেভাবেশখ বাঁচিয়ে রাখা কেন জরুরি

কেএসকে/জেআইএম