লাইফস্টাইল

মায়ের চুমু শুধু ভালোবাসা নয়

মায়ের চুমু শুধু ভালোবাসা নয়

সন্তানের গালে মায়ের একটি ছোট্ট চুমু — যেন পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিময় দৃশ্যগুলোর একটি। অনেক সময় শিশুর কষ্ট বা কান্না থামাতে মায়েরা আদর করে কপালে বা হাতে চুমু খান। জেনে অবাক হবেন যে, মায়ের এই চুমু শুধু আবেগ নয়, শরীরকে এক অনন্য সিগন্যাল পাঠায়।

Advertisement

এই ছোট্ট ভালোবাসার ছোঁয়া শিশুর মানসিক প্রশান্তি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, এমনকি ব্যথা কমাতে পর্যন্ত সাহায্য করে। বিজ্ঞানও আজ স্বীকার করে নিয়েছে যে, মায়ের স্পর্শ ও চুমু শিশুর বিকাশে এক অমূল্য সম্পদ।

কীভাবে কাজ করে মায়ের চুমু?

শিশুর প্রতি মায়ের স্নেহের এক স্পর্শেই বদলে যায় শরীরের রাসায়নিক ভাষা। বিষয়টা একটু সহজ করা যাক।

১. অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণযখন মা শিশুকে আদর করেন বা চুমু খান, তখন উভয়ের শরীরেই অক্সিটোসিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। একে ভালোবাসার হরমোনও বলা হয়ে থাকে। এই হরমোনের প্রভাবে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস, নিরাপত্তাবোধ ও মানসিক প্রশান্তি তৈরি হয়। যা শিশুকে আনন্দে রাখতে ও শান্ত করতে কাজ করে।

Advertisement

২. স্ট্রেস হরমোন কমে যায়মায়ের কোলে গেলেই শিশুর কান্না থেমে যায় কেন? কারণ মায়ের গায়ের ঘ্রাণ ও আদরে কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোন কমে যায়। চুমু বা গালে আদরের স্পর্শে শিশুর ভয়ের প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসে। নবজাতক নিজেকে নিরাপদ বোধ করে। কারণ জন্মলগ্ন থেকে যার কাছে তার সব প্রয়োজন পূরণ হয়, তখন সে ওই মানুষটার সবচেয়ে কাছেই আছে। এ সময় শিশু মায়ের হৃদস্পন্দনও শুনতে পায়, যা তাকে গর্ভে থাকাকালীন পরিস্থিতির অনুভূতি দেয়।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করেগবেষণায় দেখা গেছে, শিশুকে নিয়মিত আদর করলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও সক্রিয় হয়। মায়ের ঠোঁট বা চুমুর মাধ্যমে শিশুর শরীর সামান্য কিছু জীবাণুর সংস্পর্শে আশে, যা তার প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মায়ের শরীরের ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে শিশুর শরীর পরিচিত থাকায় এটি ক্ষতিকর হয় না। তবে অন্যদের বেলায় বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। মা ছাড়া নবজাতককে অন্য কেউ চুমু খাওয়া উচিত নয়।

৪. ব্যথা কমায়অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ২০১৩ সালে ন্যাশনাল ব্রেস্টফিডিং জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মায়ের চুমু শিশুর ব্যথার অনুভূতি অর্ধেকের বেশি কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে টিকা দেওয়ার সময় বা পেটব্যথায় এই প্রভাব বেশি লক্ষ করা গেছে।

৫. শুধু শরীর নয়, মনেরও সুরক্ষামায়ের চুমু শুধু শিশুর শরীর নয়, মনের ওপরেও গভীর প্রভাব ফেলে। শিশুর মনে নিজেকে নিয়ে নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে এই ছোট্ট একটু আদর।

Advertisement

এটি মা ও শিশুর সম্পর্ক গভীর করে এবং শিশুর ভাষাগত বিকাশেও ভূমিকা রাখে। এমনকি যারা নিয়মিত মায়ের স্পর্শ ও ভালোবাসা পায়, তারা ভবিষ্যতে আরও সামাজিক, আত্মনির্ভর ও সুখী মানুষ হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞান আরও যা বলে:

>> হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, শিশু মায়ের আদরের স্পর্শ পেলে তার মস্তিষ্কে নিউরোনাল সংযোগ বাড়ে, যা শিশুর শেখার ক্ষমতা বাড়ায়।

>> মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে, প্রিম্যাচিউর শিশুদের দিনে অন্তত ১৫ মিনিট আদর করলে তাদের ওজন, ঘুম ও খাবার গ্রহণের উন্নতি হয়।

মায়ের একটি চুমুতে যা থাকে, তা কোনো ওষুধেও নেই। কারণ এতে আছে ভালোবাসা, নিরাপত্তা আর একরাশ শান্তি। এই চুমু শুধুই আবেগ নয়, একটি প্রাকৃতিক থেরাপি, যা শিশুর শরীর ও মনের সুস্থতা বজায় রাখে। আপনার ভালোবাসা তার প্রথম ও সবচেয়ে শক্তিশালী ওষুধ।

সূত্র: ফ্রন্টিয়ার্স, পাবমেড, মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল ব্রেস্টফিডিং জার্নাল

এএমপি/আরএমডি/জেআইএম