ক্রিকেট সব সম্ভবের খেলা, অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ। যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ঘটে যায়ও। তারপরও ৫ রানে ৭ উইকেটের পতন ঘটে কী করে? উত্তর খুঁজে পাওয়া কঠিন। হিসেব মেলাতে গেলে হিমশিম খেতে হবে।
Advertisement
ক্রিকেটার, পেস বোলার, অলরাউন্ডার, অধিনায়ক, কোচ, ম্যানেজার, টিম ডিরেক্টর- নানা পরিচয়ে দুই যুগের বেশি সময় জাতীয় দলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা খালেদ মাহমুদ সুজনও মেলাতে পারছেন না, কেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন করুণ পরিণতি হলো বাংলাদেশের।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘আসলে ৫ রানে ৭ উইকেট পতনের ঘটনা খুব কম হয়। সচরাচর হয় না। হয়তো ১০০ ইনিংসে একবার হয়।’
কেন এমন হলো? সুজনের জবাব, ‘তার কারণ আমি ঠিক বলতে পারব না। ড্রেসিংরুমের অবস্থা কী, তাতো আর আমি ঢাকায় বসে বলতে পারবো না। কিন্তু প্যানিকড হওয়ার মত পরিস্থিতিতে আমরা ছিলাম না। শান্ত যখন আউট হলো, তখন আমাদের রান মনে হয় ২ উইকেটে ১০০। সেখান থেকে ১৪৫ রান ছিল জেতার জন্য। হাতে পর্যাপ্ত ওভারও বাকি ছিল। কোনো চাপ ছিল না।’
Advertisement
‘কিন্তু যখন তানজিদ তামিম আর শান্তর জুটি ভেঙে গেলো আর লিটন দাস দ্রুত আউট হলো, আমরা মনে হয় চাপ নিয়ে নেই। আমার যেটা মনে হয়, আমরা এই চাপ নিতে পারি না। আমি দীর্ঘদিন জাতীয় দলের আশপাশে থেকেছি। নানা দায়িত্বে কাজ করেছি। ক্রিকেটারদের খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমার সে দীর্ঘদিনের দেখা বলে দেয়, আমরা চাপ নিতে পারি না। কঠিন চাপ সামলাতে গিয়ে উল্টো ভেঙে পড়ি।’
খালেদ মাহমুদ সুজনের অনুভব, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন চাপ সামলাতে হয় না। ঘরোয়া আসরগুলোয় আগের মত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই।জমজমাট লড়াই গেছে কমে। মাঠের বাইরে গ্যালারিতে দর্শকদের কোলাহলও কম। উত্তেজনার বালাই নেই। এতে করে ক্রিকেটাররা আগের মত মাঠ, ড্রেসিংরুম আর মাঠের বাইরের চাপ অনুভব করে না। যেটা ৮০-৯০ দশক আর বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দিকে খুব ছিল।’
সুজনের ব্যাখ্যা, ‘আমার মনে হয় ঘরোয়া ক্রিকেটে মাঠ ও মাঠের বাইরে কঠিন চাপ সহ্য করার অভ্যাসটাও অনেক কমে গেছে আমাদের ক্রিকেটারদের। আমাদের প্লেয়িং লাইফে দেখেছি ঢাকা লিগে নান্নু ভাই, বুলবুল ভাই, আকরাম ভাইরা প্রেশার সিচুয়েশনে একদম হিমালয়ের দৃঢ়তায় অবিচল থাকতেন। ভয় ডর ছিল না। তারা শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে নানামুখী চাপ সহ্য করে কত ম্যাচ জিতিয়েছেন।’
‘তাদের মতো অত না হলেও আমরাও অনেক লড়াই সংগ্রাম করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছি। ঢাকা লিগের তখন কি রমরমা দিন ছিল! একটা বিগ ম্যাচে ২০-৩০ হাজার দর্শক মাঠে উপস্থিত থাকতো। তাদের মুহুর্মুহু করতালি, হৈ চৈ, শোরগোল, চিৎকার আর উত্তেজক আচরণ ও কথা বর্তার মধ্যে খেলে খেলে কেটেছে আমাদের দিন। ৮০-৯০ দশকের পুরো সময় এবং বর্তমান শতাব্দীর প্রথমভাগেও ঢাকা লিগে জমজমাট লড়াই হতো।’
Advertisement
সুজন যোগ করেন, ‘এমনকি আবাহনী ক্লাব সংলগ্ন ধানমন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একটা বড় দলের গ্রুপ ম্যাচেও ৫ থেকে ৭ হাজার দর্শক খোলা মাঠে খেলা দেখতেন। তাদের তাৎক্ষণিক রিয়্যাকশনটা আমরা টের পেতাম। আর একটা বিগ ম্যাচের পরতে পরতে ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আমাদের পূর্বসূরী নান্নু ভাই, বুলবুল ভাই আর আকরাম ভাইরা ওই সব প্রেশার সিচুয়েশনে কি নির্বিকার থাকতেন! কীভাবে একা গ্যালারির উত্তেজনা আর প্রতিপক্ষ বোলিং সামলে দল জেতাতেন। একের পর এক ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দিতেন। সেটাই আমাদের ও তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাজে লেগেছে। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটারদের এখন আর ঘরোয়া ক্রিকেটে অমন প্রেশার সিচুয়েশন সামলাতে হয় না। তাই তাদের প্রেশার সামলানোর ক্ষমতাই কমে গেছে। তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গিয়ে চাপ নিতে পারছে না।’
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম