দেশজুড়ে

ধান-গমের জমিতে চাষ হচ্ছে আম-লিচু-ড্রাগন

ধান-গমের জমিতে চাষ হচ্ছে আম-লিচু-ড্রাগন

মেহেরপুরে ফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে। উপযুক্ত আবহাওয়া, ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় বিভিন্ন ফলের বাগান করেছেন কৃষকরা। ধান, গম কিংবা অন্যান্য প্রচলিত ফসলের বদলে এখন জেলার অনেক কৃষক ঝুঁকছেন ফলের বাগান তৈরির দিকে। বিশেষ করে আম, লিচু, কলা, পেয়ারা, ড্রাগন ও মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এসব ফলের চাহিদা ও দামও বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় ফল চাষ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দুই হাজার ৩৩৬ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হয়। আর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আম উৎপাদন হয়েছে দুই হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমিতে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৭৬ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে চাষ হয়েছে ১০৫ হেক্টর জমিতে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দুই হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কলা চাষ হয়েছে দুই হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে।

জেলায় লিচুর চাষাবাদও বেড়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৭১৫ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৭২৫ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়। অর্থাৎ ১০ হেক্টর বেশি জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। জেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ফলের বাগান ছিল ছয় হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে। আর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বেড়ে চাষাবাদ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৪২৬ হেক্টর জমিতে।

আরও পড়ুন: মেহেরপুরে মিয়াজাকি আম চাষ, বিশ্বে কেজি ২ লাখ টাকালবণ সহিষ্ণু ও প্রোটিন সমৃদ্ধ গমের নতুন জাত উদ্ভাবনহাঁস পালনে নারীদের রোল মডেল খোকসার শিরিনা১৫ দেশে যাচ্ছে গাজীপুরের কাঁঠাল

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফল চাষে লাভ বেশি এবং পরিচর্যার ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় তারা ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ধান, গমসহ মৌসুমি ফসল চাষে বারবার ক্ষতির মুখে পড়েন। অথচ ফলগাছ দীর্ঘস্থায়ী ও সহনশীল হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলে।

Advertisement

‘আমি কয়েক বছর আগে ১২ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান করেছি। গতবছরে ১৮ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। চলতি বছর আর বেশি টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছি।’

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের কৃষক শাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন,‌ ‘আমি আগে শুধু ধান ও গম চাষ করতাম। গত চার বছর ধরে ছয় বিঘা জমিতে আম ও লিচুর বাগান করেছি। এখন সেখান থেকে বছরে ভালো একটা আয় হচ্ছে।’

আরেক চাষি জাহির হোসেন বলেন, ‘আগে আমি ধান ও গমের আবাদ করতাম। বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে আমের বাগান করেছি। তিন বিঘা আমের বাগানে বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হয়।’

তিনি বলেন, মেহেরপুরের হিমসাগর আম জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই আগামীতে জেলার আমের চাহিদা কয়েকগুণ বাড়বে।

Advertisement

‘আমি আগে শুধু ধান ও গম চাষ করতাম। গত চার বছর ধরে ছয় বিঘা জমিতে আম ও লিচুর বাগান করেছি। এখন সেখান থেকে বছরে ভালো একটা আয় হচ্ছে।’

মেহেরপুর হরিরামপুর গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে শুধু ধান ও গমের আবাদ করতেন। বর্তমানে দুই বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করেছেন। এতে প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়।

আরও পড়ুন:বিদেশি আঙুরসহ মিশ্র ফল বাগানে স্বপ্ন দেখছেন জিল্লুহিমসাগর আমের জিআই স্বীকৃতি, উচ্ছ্বসিত চাষিরাআম বাগানে ড্রোন ও এআইয়ের ব্যবহার, উৎপাদনও বেশি

নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মেহেরপুর জেলার ড্রাগন ফল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা রয়েছে। ড্রাগন ও মাল্টার মতো কিছু ফলের আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা তৈরি হচ্ছে। ফলে এসব বাগান কৃষকদের আর্থিকভাবে আরও স্বাবলম্বী করে তুলছে।

আমঝুপি গ্রামের মাল্টা চাষি লিটন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‌‘আমি কয়েক বছর আগে ১২ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান করেছি। গতবছরে ১৮ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। চলতি বছর আর বেশি টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছি।’

মাল্টা চাষের বিষয়ে তিনি জানান, উপযুক্ত আবহাওয়া, ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় এ ফলের আবাদ করেছেন।

একেই গ্রামের আরেক কৃষক আতিক হোসেন বলেন, ‘লাভজনক হওয়ায় ছয় বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান করেছি। গতবছর ১৬ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। চলতি বছর আরও বেশি টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।’

‘জেলার ৭৬ হেক্টর জমিতে মাল্টার বাগান, ২৫ হেক্টর জমিতে চায়না কমলার বাগান ও ৪৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন বাগানে ফল বিক্রি শুরু হয়েছে। জেলার কৃষকরা ফলের বাগানের দিকে ঝুঁকছেন। মেহেরপুর শুধু সবজিতে নয়, ফল উৎপাদনেও বিপ্লব হবে।’

আরেক চাষি কবির হোসেন জানান, চলতি বছর ছয় বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান করেছেন। আগামী বছর মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

কথা হয় মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামসুল আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, ফল বাগান বাড়ানোর জন্য সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও কম সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। অনেক এলাকায় কৃষকদের মাঝে ফলদ গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণও করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জেলার ৭৬ হেক্টর জমিতে মাল্টার বাগান, ২৫ হেক্টর জমিতে চায়না কমলার বাগান ও ৪৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন বাগানে ফল বিক্রি শুরু হয়েছে। জেলার কৃষকরা ফলের বাগানের দিকে ঝুঁকছেন। মেহেরপুর শুধু সবজিতে নয়, ফল উৎপাদনেও বিপ্লব হবে।

এসআর/জেআইএম