জাতীয়

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স কীভাবে পাওয়া যায়, ব্যবহারের নিয়ম কী

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স কীভাবে পাওয়া যায়, ব্যবহারের নিয়ম কী

দেশের প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কেউ আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে বা বহন করতে পারেন না। এটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। ব্যক্তিগত কিংবা ব্যবসায়িক নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক নাগরিক লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারেন। ছোটবড় যে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে হলে তার জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়, অর্থাৎ অস্ত্র কেনার জন্য আগে লাইসেন্স করতে হয়।

Advertisement

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে আবেদন, যাচাই-বাছাই, পুলিশি তদন্ত, জেলা প্রশাসকের সুপারিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। এই ধাপগুলো সম্পন্ন হওয়ার পরই একজন ব্যক্তি অস্ত্র বহনের অনুমতি পান। তবে অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও রয়েছে কড়াকড়ি নিয়ম। যার ব্যত্যয় ঘটলে বাতিল হতে পারে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স।

কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হন তাহলে তিনি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না। কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি আদালতে চূড়ান্তভাবে সাজা বা দণ্ডপ্রাপ্ত হলে দণ্ড শেষের পাঁচ বছরের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাবেন না

ব্যক্তিপর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স কারা পান

ক. আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। খ. ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সের উপযুক্ত ব্যক্তিকে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্স দেওয়া যাবে। গ. আবেদনকারীকে ব্যক্তি শ্রেণির আয়করদাতা হতে হবে। ঘ. আবেদনকারীকে আবেদনের আগের তিন কর বছরে ধারাবাহিকভাবে পিস্তল, রিভলবার ও রাইফেলের ক্ষেত্রে তিন লাখ টাকা এবং শটগানের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। আবেদনকারীর পরিশোধিত আয়করের পরিমাণ উল্লেখসহ এনবিআর কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

Advertisement

ঙ. প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিকের ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সের জন্য আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে ধারাবাহিকভাবে সর্বশেষ তিন বছরে প্রতিবছর ন্যূনতম ১২ লাখ টাকা করে রেমিট্যান্স পাঠানো এবং বিদেশে আয়কর দেওয়ার প্রমাণপত্র থাকতে হবে। রেমিট্যান্সের অর্থ শুধু যেসব সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে সেসব ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে।

আবেদনকারীর শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য, আবেদন করা অস্ত্র ও সেটির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে তার জ্ঞান এবং অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা হয়

সর্বোচ্চ লাইসেন্স ও আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা

ক. ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ একটি এনপিবি পিস্তল বা রিভলবার এবং একটি শটগান বা এনপিবি রাইফেলের লাইসেন্স দেওয়া যাবে। অর্থাৎ, একজন যোগ্য ব্যক্তিকে দুটির বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। আবেদনকারীর আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত তথ্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ঘোষণাপত্র হিসেবে দিতে হবে।

শুধু আত্মরক্ষা ও টার্গেট প্র্যাকটিসের উদ্দেশে গুলি ব্যবহার করা যায়। আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে গুলি ব্যবহারের পরপরই সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করতে হবে। টার্গেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদিত ফায়ারিং রেঞ্জ এবং বাংলাদেশ শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের নির্দিষ্ট অনুশীলন কেন্দ্র ছাড়া প্র্যাকটিস করা যাবে না

Advertisement

খ. তবে যাদের এরই মধ্যে দুটির বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে তা বহাল থাকবে। দুটির বেশি কোনো আগ্নেয়াস্ত্র থেকে বিক্রি, হস্তান্তর বা হারানোর মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্র হস্তচ্যুত হলে তার পরিবর্তে নতুন কোনো লাইসেন্স দেওয়া হবে না।

গ. নিবন্ধিত শ্যুটারদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শ্যুটারকে সর্বোচ্চ তিনটি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া যাবে।

আরও পড়ুন মিসাইল সঙ্গে রাখলেও আমি আপনি নিরাপদ নই: আসিফ মাহমুদ আমার লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র আছে: আসিফ মাহমুদ কড়া বার্তায়ও থামছে না ‘মব’, ১০ মাসে হত্যা ১৭৪ অযোগ্যতা

ক. কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হন তাহলে তিনি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না।

খ. কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি আদালতে চূড়ান্তভাবে সাজা বা দণ্ডপ্রাপ্ত হলে দণ্ড শেষের পাঁচ বছরের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাবেন না।

পাঁচ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এসব লাইসেন্সের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দলটির সমর্থক ব্যবসায়ীদের নামে করা

লাইসেন্স দেওয়া হয় যেভাবে

নীতিমালা অনুযায়ী, সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের আগ্নেয়াস্ত্র শাখায় সংশ্লিষ্ট জেলার ইস্যু করা সব আগ্নেয়াস্ত্রের রেকর্ড সংরক্ষিত থাকে।

ব্যক্তিপর্যায়ে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র পেতে আবেদনকারীকে অবশ্যই স্থায়ী ঠিকানায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (জেলা প্রশাসক) কাছে আবেদন করতে হয়। এজন্য নির্ধারিত ফরম আছে। আবেদন করার পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের মাধ্যমে আবেদনকারীর প্রাক-পরিচয় যাচাই করেন। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নেন। আবেদনকারীর শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য, আবেদন করা অস্ত্র ও সেটির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে তার জ্ঞান এবং অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, শটগানের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যোগ্য বিবেচিত হতে হয়। এরপর তিনি লাইসেন্স ইস্যুর নির্দেশ দেন। পিস্তল বা রিভলবারের ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন যোগ্য বিবেচিত হলে সুপারিশ সহকারে সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় অনাপত্তি দিলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লাইসেন্স ইস্যু করবেন।

দীর্ঘ এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুমতি পেলে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার তারিখ থেকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দপ্তরে তা লিপিবদ্ধ করতে হয়। তবে ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে পূর্বসূরির লাইসেন্স লিপিবদ্ধ করার তারিখ থেকে এই সময় গণনা করা হয়।

প্রতিষ্ঠানে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাবেন যেভাবে

ক. সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি বা অংশীদারি প্রতিষ্ঠান, লিমিটেড কোম্পানি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নির্বাহী প্রধানের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া যাবে।

খ. ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মালিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করে তার নামে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা যাবে।

গ. আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সব পরিচালকের জীবনবৃত্তান্ত আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

ঘ. বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারি প্রতিষ্ঠান/লিমিটেড কোম্পানি/করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ন্যূনতম ১০ কোটি টাকা হতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের আগ্নেয়াস্ত্রের সীমা

ক. প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় দুটি ১২ বোর শটগানের লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার গুরুত্ব, নগদ অর্থ লেনদেনের পরিমাণ, ভৌগোলিক অবস্থান, প্রতিষ্ঠানের ধরন এবং বার্ষিক ক্রমবর্ধমান আয় বিবেচনা করে শটগানের লাইসেন্সের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু এ লাইসেন্সের সংখ্যা কোনোভাবেই ৬টির বেশি হবে না।

খ. সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উপ অনুচ্ছেদ ‘ক’ এ বর্ণিত আগ্নেয়াস্ত্রের সর্বোচ্চ সীমা প্রযোজ্য হবে না। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিভিতে আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যার সর্বোচ্চ সীমা শিথিলযোগ্য হবে।

গ. আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যার এই হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সুপারিশ করার আগে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন।

গুলি কেনা ও ব্যবহারের শর্ত

আইন অনুযায়ী, লং ব্যারেল (বন্দুক/শটগান/রাইফেল) আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ১০০টি গুলি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়। শর্ট ব্যারেলের (পিস্তল/রিভলবার) ক্ষেত্রে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৫০টি গুলি কেনার অনুমতি দেওয়া যায়। এর বাইরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ইস্যু করা প্রতিটি অস্ত্রের বিপরীতে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫০টি গুলি কেনা যায়।

লাইসেন্সের নিয়ম অনুযায়ী, শুধু আত্মরক্ষা ও টার্গেট প্র্যাকটিসের উদ্দেশে গুলি ব্যবহার করা যায়। আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে গুলি ব্যবহারের পরপরই সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। টার্গেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদিত ফায়ারিং রেঞ্জ এবং বাংলাদেশ শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের নির্দিষ্ট অনুশীলন কেন্দ্র ছাড়া টার্গেট প্র্যাকটিস করা যাবে না।

টার্গেট প্র্যাকটিসে গুলি ব্যবহারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ফায়ারিং রেঞ্জ বা বাংলাদেশ শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। পরে নতুন গুলি কেনার আগে ব্যবহৃত গোলাবারুদের প্রত্যয়নপত্র এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জিডির অনুলিপিসহ ব্যবহৃত গুলির হিসাব জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে হয়।

নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যাচাই করে ব্যবহার করা গুলির সমান সংখ্যক গুলি কেনার অনুমতি দিতে পারেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রত্যয়নপত্র ছাড়া কোনো ডিলার লাইসেন্সধারীর কাছে গুলি বিক্রি করতে পারবেন না। নিবন্ধিত শ্যুটারদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের অনুমোদন নিয়ে গুলি সংগ্রহ করতে হবে।

আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স নবায়ন ফি

পিস্তল ও রিভলবার প্রতিটি তিন হাজার টাকা; দোনলা ও একনলা বন্দুক, শটগান বা রাইফেল প্রতিটি এক হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য অস্ত্রের নবায়ন ফি প্রতিটি ৪০০ টাকা। পিস্তল, রিভলবার ও বন্দুকের ডিলিং লাইসেন্স ও মেরামতি লাইসেন্স প্রতিটি ১৫০০ টাকা; রাইফেল ডিলিং লাইসেন্স ও রাইফেল মেরামতি লাইসেন্স ফি প্রতিটি ১৫০০ টাকা এবং সেফ কিপিং লাইসেন্স প্রতিটি এক হাজার টাকা।

ডুপ্লিকেট এবং লাইসেন্স বাতিল হলে

ক. আগ্নেয়াস্ত্রের মূল লাইসেন্স হারিয়ে গেলে, নষ্ট হলে, পাঠ অযোগ্য হলে অথবা নবায়নের উদ্দেশে স্বাক্ষর এবং সিল মোহরের জায়গা না থাকলে সংশ্লিষ্ট ইস্যুকারী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে ডুপ্লিকেট লাইসেন্স সংগ্রহ করা যাবে।

খ. লাইসেন্স হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে জিডির কপিসহ আবেদন করতে হবে।

গ. ডুপ্লিকেট লাইসেন্স ইস্যু করলে আগের লাইসেন্স বাতিল করে তা ডাটাবেসে অ্যান্ট্রির পর নষ্ট করতে হবে।

ঘ. আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি, হস্তান্তর, স্বত্বত্যাগপূর্বক জমাদান করলে ওই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। আগ্নেয়াস্ত্র নষ্ট ও মেরামত অযোগ্য হলে লাইসেন্সধারী তার আগ্নেয়াস্ত্রটি লাইসেন্স ইস্যুকারী সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেবেন। লাইসেন্স ইস্যুকারী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একই সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রটির লাইসেন্স বাতিল করে আগ্নেয়াস্ত্রটি বাজেয়াপ্ত করবেন।

চ. এছাড়া অস্ত্র ব্যবহারের শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন না করলে বা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে কোনো লাইসেন্স বাতিল করতে পারবেন।

ছ. বাতিলকৃত লাইসেন্স পুনর্বহাল করা যাবে না। তবে অন্য কোনো কারণে বাতিল হলে পুনরায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনকারীর নামে নতুন লাইসেন্স ইস্যু করতে পারবেন।

আরও পড়ুন পুলিশের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ হস্তান্তর সেনাবাহিনীর দেশ নিয়ে আসিফের চেয়ে দ্বিতীয় কেউ বেশি ভাবে না: হান্নান মাসউদ ওয়ারিশ সূত্রে আগ্নেয়াস্ত্র প্রাপ্তির ক্ষেত্রে

ক. বার্ধক্যজনিত বা শারীরিক অক্ষমতাজনিত কারণে ওয়ারিশের অনুকূলে অস্ত্র হস্তান্তরে ইচ্ছুক লাইসেন্সধারী অস্ত্রের ধরন অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে অস্ত্র হস্তান্তর করতে পারবেন।

খ.বার্ধক্যজনিত বলতে ৭০ বছরের অধিক বয়সের ব্যক্তিকে বোঝাবে। শারীরিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ব্যক্তিগতভাবে লাইসেন্সধারীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর অক্ষমতার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

গ. আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারীর মৃত্যুর ১৫ দিনের মধ্যে তার ওয়ারিশরা অথবা কোনো বৈধ ওয়ারিশ না থাকলে তার নিকটাত্মীয় (আইন মোতাবেক সম্পত্তির অংশীদার) নিকটস্থ থানার ওসি বরাবর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেবেন। অন্যথায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যথানিয়মে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করবেন।

ঘ. মৃত্যুজনিত কারণে আইনানুগ ওয়ারিশের অনুকূলে অস্ত্রের মালিকানা পরিবর্তন করা যাবে।

ঙ. ওয়ারিশসূত্রে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই আয়কর প্রদান ছাড়াও লাইসেন্স পাওয়ার মতো অন্যান্য যোগ্যতা থাকতে হবে।

চ. যোগ্যতা না থাকলে ওয়ারিশরা অস্ত্রটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে আগ্নেয়াস্ত্রের বৈধ ডিলার বা বৈধ লাইসেন্সধারীর কাছে বিক্রি বা সরকারি মালখানায় স্বত্বত্যাগ করে জমা দেবেন।

ছ. ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র অকেজো হলে বা বিক্রি করে নতুন অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হলে আবেদনকারীকে আয়করের শর্তাবলিসহ অন্য শর্তগুলোও পূরণ করতে হবে।

বাতিল হচ্ছে পাঁচ হাজার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া পাঁচ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এসব লাইসেন্সের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দলটির সমর্থক ব্যবসায়ীদের নামে করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে জমা পড়া ও জমা না পড়া অস্ত্রের লাইসেন্সের তথ্য যাচাইয়ে এগুলোর কাগজপত্রে অসঙ্গতি পাওয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অস্ত্র জমা না দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে।

সূত্র বলছে, সব লাইসেন্স স্থগিত করে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনো সাত হাজারের বেশি লাইসেন্সের অস্ত্র জমা পড়েনি। বাড়ি বাড়ি গিয়েও পুলিশ এসব লাইসেন্সধারী বা লাইসেন্সের বিপরীতে থাকা অস্ত্র পায়নি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী গাঢাকা দিয়েছেন। তাদের অনেকে চলে গেছেন বিদেশে।

টিটি/এমকেআর/জিকেএস