বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে অনেক কমবয়স্কদের শরীরেও দেখা দিচ্ছে এই রোগ। রোগীর সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওষুধের সংখ্যাও। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায় আছে প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্রে?
Advertisement
এখন অনেকেই আধুনিক ওষুধের বদলে বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে চান। এমনই একটি বহু পুরনো ভেষজ উপাদান হলো জামের বীজ। রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে জামের বীজের গুঁড়া বহু শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জামের বীজের গুঁড়া আসলে কী করে?
এই বীজে রয়েছে জাম্বোলিন ও জাম্বোসিন নামে দুটি সক্রিয় উপাদান, যেগুলি ইনসুলিনের প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং অতিরিক্ত গ্লুকোজ শোষণ রোধ করে। যদিও এটি কখনোই ইনসুলিন বা অন্যান্য ডায়াবেটিসের ওষুধের বিকল্প নয়, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করলে এটি কার্যকর একটি সহায়ক উপাদান হতে পারে।
Advertisement
১. রক্তের গ্লুকোজ ব্যবস্থাপনা: পাচনতন্ত্রে খাবারের শর্করা থেকে গ্লুকোজে রূপান্তর প্রক্রিয়া ধীর করে জাম্বোলিন, ফলে খাবারের পর রক্তে হঠাৎ করে চিনি বেড়ে যাওয়া থামাতে পারে। আর জাম্বোসিন ইনসুলিনের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া বাড়ায় এবং অগ্ন্যাশয়কে ইনসুলিন তৈরি করতে সাহায্য করে।
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ: জাম বীজের গুঁড়া শরীরের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। এটি লিভার ও কিডনির কার্যকারিতাও রক্ষা করে; বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের জন্য।
৩. ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে: এই বীজের গুঁড়া ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ায়্ এর ফলে যার শরীর প্রয়োজনের তুলনার কম ইনসুলিন তৈরি করে তারও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিলযন্ত্রণে থাক। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৪. গ্লুকোজ স্পাইক রোধ করে: খাবার খাওয়ার পর রক্তে চিনির আচমকা বৃদ্ধি রোধ করে এই গুঁড়াটি। সেই সঙ্গে এটি খাবারের শর্করা বিপাক ও শোষণে বাঁধা দেয়, ফলে রক্তে গ্লুকোজের হঠাৎ বৃদ্ধির আশঙ্কা কমে।
Advertisement
৫. অগ্ন্যাশয়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, জাম বীজের উপাদান অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষের পুনর্জন্মে সাহায্য করতে পারে।
৬. লিভার ও কিডনিকে সুরক্ষা দেয়: ডায়াবেটিসের ফলে যে অঙ্গগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেমন- লিভার, কিডনি চোখ ইত্যাদি, তাদের রক্ষা করে জাম বীজের গুঁড়া।
৭. ডায়াবেটিক জটিলতা কমাতে সাহায্য করে: যেমন স্নায়ুর ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি), কিডনি সমস্যা (নেফ্রোপ্যাথি), ও চোখের সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি) প্রতিরোধে সহায়ক এই উপাদানটি।
কীভাবে খাবেন?
জাম বীজের গুঁড়া দিনে ১ থেকে ২ চা চামচ খাবেন। তবে ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
খাওয়ার উপায়-
১. হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খাবারের আগে খেলে বেশি উপকার পাবেন।
২. স্মুদি, দই বা সালাদের উপর ছিটিয়ে নিয়ে খেতে পারেন।
৩. গুঁড়ার তিক্ত স্বাদ যাদের সহ্য হয় না, তারা ক্যাপসুল আকারেও খেতে পারেন।
কখন খাবেন-
খাবারের আগে বা সঙ্গে খেলে খাবারের গ্লুকোজ শোষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে এই ভেষজ। তবে খালি পেটে খেতে পারেন, কিছু আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের মতে এতে হজমে ও গ্লুকোজ শোষণে সাহায্য হয়।
যদিও বেশিরভাগ মানুষের জন্য এটি নিরাপদ, তবুও ভুলভাবে বা অতিমাত্রায় খেলে কিছু সমস্যা হতে পারে। ইনসুলিন বা অন্য ডায়াবেটিস ওষুধের সঙ্গে খেলে রক্তে চিনি খুব কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে যেতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার যাদের বীজজাত দ্রব্যে অ্যালার্জি থাকে তাদের বাড়তি সাবধানতা নেওয়া উচিত।
এটি অন্য ওষুধের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া করতে পারে। তাই খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। সেই সঙ্গে গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী মা এবং যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
জাম বীজের গুঁড়া একটি সহজলভ্য ও গবেষণাভিত্তিক ভেষজ উপাদান যা রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এটি কোনওভাবেই ডায়াবেটিসের ওষুধের বিকল্প নয়। সঠিক ডায়েট, ব্যায়াম, নিয়মিত চেকআপ এবং চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি এটি একটি কার্যকর প্রাকৃতিক সহায়ক হতে পারে।
সূত্র: টাইমস্ অব ইন্ডিয়া
এএমপি/জিকেএস