কৃষি ও প্রকৃতি

কেঁচো সারে স্বাবলম্বী মাদারীপুরের রাশিদা

কেঁচো সারে স্বাবলম্বী মাদারীপুরের রাশিদা

পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মাদারীপুরের রাশিদা বেগম। সারের সাথে উৎপাদিত কেঁচোও বিক্রি করছেন তিনি। তাকে দেখে মাদারীপুরের অনেক নারী উৎসাহ পাচ্ছেন। রাসায়নিক সারের চেয়ে এই জৈব সার বেশি উপকারী হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে চাহিদা।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর এলাকার আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের স্ত্রী রাশিদা বেগম (৪৫)। তার চার সন্তান। দুই মেয়ে শিরিনা আক্তার শিখা ও শিউলি আক্তারকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে হারুন-অর-রশিদ মাদারীপুর সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়েন। ছোট ছেলে রায়হান হাওলাদার খোয়াজপুরের সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

স্বামী সৌদি আরবে গিয়ে কাগজপত্র ঠিক করতে না পারায় আবার দেশে চলে আসেন। দেশে এসে নিজের জমিতেই কৃষিকাজ করে সংসার চালান। দিন দিন সন্তানদের পড়াশোনার খরচ বেড়ে যাওয়া ও সংসারের জন্য একটু আয় করার চিন্তা থেকেই রাশিদা বেগম প্রথমে সবজির বাগান করেন। লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ডাটা, শসা, ঢ্যাঁড়শসহ নানা ধরনের সবজি বাড়ির পাশেই জমিতে চাষ শুরু করেন।

এ সময় সারের প্রয়োজন হলে নিজ উদ্যোগেই শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। প্রথমে মাদারীপুর কৃষি অফিস থেকে ট্রেনিং নেন। এরপর স্বামীর সহযোগিতায় প্রায় ৩ বছর আগে বাড়ির পাশেই একটি টিনের চালা দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন। সেখানে ৬টি সিমেন্টের রিং বসিয়ে কেঁচো সার উৎপাদনের ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে সার উৎপাদন ভালো হওয়ায় আরও তিনটি বাড়িয়ে ৯টি রিং বসানো হয়েছে। নিজের পালিত ২টি গাভি আছে। সেই গাভির গোবর থেকেই কেঁচো সার উৎপাদন করেন তিনি।

Advertisement

প্রথমে গোবর মাটির নিচে গর্ত করে রাখা হয়। এরপর রিংয়ের মধ্যে রাখেন। এভাবেই ২৫-৩০ দিনের মধ্যে তৈরি হয় কেঁচো সার। একটি রিংয়ে ১ মণ করে সার উৎপাদন হয়। এক মণ সার ৬০০ টাকা ও এক কেজি কেঁচো ১৫০০ টাকা করে বিক্রি করেন। মাদারীপুর কৃষি অফিসের জৈব সার প্রয়োজন হলে রাশিদা বেগমের কাছ থেকে কিনে নেন। এ ছাড়া তার তৈরি সার এলাকার মানুষও কিনে নেন।

দিনে দিনে এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাশিদা এখন স্বপ্ন দেখছেন সার তৈরির ঘরটি আরও বড় করে রিং বাড়িয়ে উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়াবেন। তার এ কাজে স্বামীও সহযোগিতা করেন। প্রতি মাসে তিনি সার, কেঁচো, গরুর দুধ ও সবজি বিক্রি করে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করেন। সেই টাকা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার ব্যাপারে সহযোগিতা করেন।

আরও পড়ুন

হাঁস পালনে নারীদের রোল মডেল খোকসার শিরিনা বাণিজ্যিক পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা

নারী উদ্যোক্তা রাশিদা বেগম বলেন, ‘সার বিক্রি করে আয় হবে তা কোনো দিন ভাবিনি। কৃষি অফিস থেকে ট্রেনিং নিয়ে এ কাজ শুরু করেছি। তারা যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। এখনো করছেন। কেঁচো সারটি প্রকৃতিভাবে তৈরি হয়। তাই গুণগত মান অনেক ভালো। আমার উৎপাদিত সার মাদারীপুর কৃষি অফিস কিনে নেয়। এলাকার মানুষও কিনে নেয়। এই সারের চাহিদা অনেক বেশি। আগামীতে সারের উৎপাদন বাড়াবো। যাতে সবার চাহিদা মেটাতে পারি। পাশাপাশি যেন বড় আয় করতে পারি।’

Advertisement

রাশিদার স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রী প্রায় ৩ বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করছে। আমি তাকে সহযোগিতা করি। জৈব সার ফসলের জন্য ভীষণ উপকারী। তাই বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেশি।’

রাশিদার প্রতিবেশী তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘রাশিদা আপাকে কেঁচো সার বানাতে দেখে আমরাও উৎসাহ পাচ্ছি। তাই ভাবছি ঘরে বসে না থেকে নিজেই এ সার উৎপাদন করার চেষ্টা করবো। এতে নিজে স্বাবলম্বী হওয়া যাবে; আয়ও করা যাবে।’

মাদারীপুরের উন্নয়ন সংস্থা দেশগ্রামের নির্বাহী পরিচালক এবিএম বজলুর রহমান খান বলেন, ‘সামান্য পুঁজি দিয়েই এ সার উৎপাদন করা সম্ভব। দেশের কৃষিখাতের জন্য এ সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেইসাথে বিষমুক্ত সবজি ফলানো সম্ভব। তাই কৃষিতে বিষমুক্ত উৎপাদনের জন্য এ সারের ব্যাপক প্রসার প্রয়োজন।’

মাদারীপুর সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাবরিনা আক্তার বলেন, ‘রাশিদা ৩ বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। আস্তে আস্তে উৎপাদন বাড়াচ্ছেন। তার সবজি বাগান আছে। নিজেই সার উৎপাদন করে নিজের চাহিদা পূরণ করে আবার বিক্রিও করছেন। এতে তিনি আয় করে স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন। তাকে দেখে আরও নারী এ কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন। আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসইউ/এমএস