আঁখি খাতুন যখন বাংলাদেশের ফুটবল ছেড়ে চীনে পাড়ি জমালেন, তখন জাতীয় দলের রক্ষণে বড় একটা ফাটল আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। আঁখির চলে যাওয়া ও মাসুরা পারভীনের পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়ার পর রক্ষণে ভরসার নাম হয়ে উঠছিলেন জুনিয়র দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার প্রান্তি।
Advertisement
বিদ্রোহী ফুটবলারদের বাদ দিয়ে ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার যখন একটি তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলেন দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে, তখন অধিনায়কের দায়িত্বটা দিয়েছিলেন আফঈদার কাঁধে।
কোচ ভরসা রেখেছিলেন আফঈদার ওপর। সংবাদ সম্মেলনে পিটার বলেছিলেন, ‘আফঈদার মধ্যে অধিনায়কের সব গুণ আছে। মাঠে সে ভালো নেতা হতে পারবে ভবিষ্যতে।’
তাই তো বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলারের মধ্যে কোচ যখন ১৩ জনকে ফিরিয়ে আনলেন এবং সেখান সিনিয়র মারিয়া, মনিকা, শামসুন্নাহার, ঋতুপর্ণাদের মতো ফুটবলার থাকলেও অধিনায়ক তিনি রাখলেন আফঈদাকেই। এমন কি এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের মতো বড় আসরেও।
Advertisement
মিয়ানমার যাওয়ার আগে আফঈদা একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন জাগো নিউজকে। সেই সাক্ষাৎকারে তাকে এমন একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে কোয়ালিফাই করার লক্ষ্য আপনাদের। আমরা তো আগে কখনো এই প্রতিযোগিতায় একটি ম্যাচও জিততে পারিনি। তাহলে কি কোয়ালিফাই করা সম্ভব?’
আফঈদার জবাব ছিল, ‘আমরা তো চেষ্টা করবো। মানুষ চাইলে অনেক কিছুই পারে। আমরা ইন্দোনেশিয়া-জর্ডানের সাথে খেলেছি। এ পর্যায়ের দেশের বিপক্ষে আমাদের খেলা কম হয়। এই দলগুলো সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণাই ছিল না। এখন ধারণা হয়েছে। এশিয়ার যে দেশগুলো বিশ্বকাপ, অলিম্পিক কিংবা এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে নিয়মিত খেলে তারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে শক্তি ও সামর্থ্যে। তবে বাকি যে দেশগুলো আছে সেগুলোর মধ্যে তেমন পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। উনিশ-বিশ আরকি। মিয়ানমারে এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করতে পারলেই আমি সন্তুষ্ট হবো।’
রক্ষণের খেলোয়াড় হলেও আফঈদার গোলের নেশাও আছে। তবে তিনি বুধবার মিয়ানমারের বিপক্ষে শুধু রক্ষণেই মনযোগ রেখেছিলেন। কারণ, মিয়ানমার কাগজ-কলমে বাংলাদেশের চেয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা দল। শামসুন্নাহার, শিউলি আজিমদের নিয়ে তিনি দারুণভাবে সামলিয়েছেন রক্ষণ। মিয়ানমারের যে ফরোয়ার্ডরা তছনছ করে দিয়েছিলেন তুর্কমেনিস্তানের রক্ষণ, সেই ফরোয়ার্ড খেই হারিয়েছেন আফঈদাদের সামনে গিয়ে।
২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া ম্যাচ যখন ২-১ হয়েছিল, তখন খেলার বাকি ইনজুরি সময়সহ মিনিট পাঁচেক। ওই সময়টুকু বাংলাদেশের সমর্থকদের কয়েক ঘণ্টার মতো মনে হয়েছিল। আর তখন আফঈদার নেতৃত্বে বাংলাদেশের রক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে দেশকে নিয়ে যেতে থাকেন স্বপ্নপূরণের দিকে। শেষ পর্যন্ত হাসিটা ফুটেছে আফঈদাদের মুখেই।
Advertisement
আফঈদা সব সময়ই বলেন, ‘কোচ যেভাবে খেলতে বলেন, আমরা সেভাবেই খেলার চেষ্টা করি।’ অর্থাৎ মিয়ানমারের বিপক্ষে আফঈদা কোচের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে নিজের নামটি লেখাতে পেরেছেন ইতিহাস গড়া অধিনায়ক হিসেবে।
ম্যাচ জয়ের পর আফঈদা বলেন, ‘এমন জয়ের জন্য আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া। সবার দোয়ায় আমরা সাফের গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি। দেশবাসীর দোয়া ও সমর্থন ছাড়া কখনো সম্ভব ছিলো না। স্বাগতিক মিয়ানমারের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল- যেভাবে হোক, জয়লাভ করতে হবে। আমরা সেই দিনক্ষণের অপেক্ষা শেষ করে এশিয়ান মঞ্চে খেলবো।’
সতীর্থদের অবদান ও দোয়া চেয়ে আফঈদা বলেন, ‘ঋতুপর্ণা আপুর অসাধারণ দুটি গোলে আমরা জয় ছিনিয়ে এনেছি। জয়ের পুরো কৃতিত্ব আমার টিমমেট, কোচিংস্টাফ ও যারা গ্যালারিতে বসে দেশের পতাকা নিয়ে আমাদের সাহস দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ দেখা হবে আবারও নতুন কোনো স্বপ্নে। সবার দোয়া ও সমর্থন পেলে আমরা আরও ভালো করবো। সবাই দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’
আরআই/এমএইচ/