দেশজুড়ে

হেভিওয়েট নেতায় ভরসা বিএনপির, আসন উদ্ধারে মরিয়া জামায়াত

হেভিওয়েট নেতায় ভরসা বিএনপির, আসন উদ্ধারে মরিয়া জামায়াত

উত্তরের জেলা দিনাজপুরের (বিরামপুর, হাকিমপুর, নবাবগঞ্জ এবং ঘোড়াঘাট) চার উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলার বৃহত্তম এ আসন। এবার এ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় ভোটের সমীকরণ উল্টে যেতে পারে। তবে দিনাজপুর-৬ আসনে দুবার নির্বাচিত হওয়া জামায়াত আসন উদ্ধারে জোরালো ভূমিকা পালন করছে।

Advertisement

এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন এই এলাকায় বেশ জনপ্রিয় নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। সেইসঙ্গে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও আস্থাভাজন।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এরই মধ্যে দলকে সংগঠিত রাখতে এ আসনের চার উপজেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। নেতাকর্মীরা মনে করছেন তিনি এই আসন থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন।

আরও পড়ুন বগুড়াসহ তিন আসনে লড়তে পারেন খালেদা জিয়া বিএনপি-জামায়াত লড়াইয়ের সম্ভাবনা

আসন পুনরুদ্ধারে একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম। গত ৪ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের রোকনদের এক সভায় তার নাম ঘোষণা করা হয়। একক প্রার্থী হওয়ায় তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারও জনসমর্থন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী আনোয়ারুল ইসলাম।

Advertisement

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এরই মধ্যে দলকে সংগঠিত রাখতে এই আসনের চার উপজেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। নেতাকর্মীরা মনে করছেন তিনি এ আসন থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এ আসনে প্রার্থী দিয়েছে অন্য ইসলামি দলও। তাদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের দিনাজপুর দক্ষিণ জেলা সভাপতি ডা. নুর আলম সিদ্দিক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলা শাখার সহ-সভাপতি মুফতি নুরুল করিম ও এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সানী আবদুল হক উল্লেখযোগ্য।

এ আসনে এবার নতুন ভোটার ২৭ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে নবাবগঞ্জে ১২ হাজার ৩৫৩, বিরামপুরে ৬ হাজার ১৬৪, হাকিমপুরে ৩ হাজার ৭৮৬ এবং ঘোড়াঘাটে ৪ হাজার ৯২৩।

আরও পড়ুন ৪২ শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারই নির্ধারণ করবে জয়-পরাজয় ফখরুলের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের দেলাওয়ার, আছেন স্বতন্ত্ররাও

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর এবং ঘোড়াঘাট এই চার উপজেলার মোট ভোটার ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৯। এর মধ্যে বিরামপুরে ১ লাখ ৭০ হাজার ৪০২, নবাবগঞ্জে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৮৪, হাকিমপুরে ৮৫ হাজার ৩৩৬ এবং ঘোড়াঘাটে ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৭ জন ভোটার আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

Advertisement

এই আসন থেকে কখনো নির্বাচিত আবার কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় জামায়াত নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীকে আবারো নির্বাচিত করতে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন।

বিগত নির্বাচনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এই আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী মো. আজিজুর রহমান চৌধুরী বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনে বিএনপি থেকে আতিউর রহমান জয়ী হন, একই বছরের জুন মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মোস্তাফিজুর রহমান জয় লাভ করেন।

আরও পড়ুন নবীন-প্রবীণে ভোটের লড়াইয়ের প্রস্তুতি নতুন প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণা

২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানকে পরাজিত করে জামায়াতের প্রার্থী মো. আজিজুর রহমান চৌধুরী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে জামায়াতের প্রার্থী মো. আনোয়ারুল ইসলামকে পরাজিত করে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজিজুল হক চৌধুরী। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত তিন নির্বাচনে টানা তিনবার জয়ী হন আওয়ামী লীগের শিবলী সাদিক।

১৯৯১ সাল থেকে জামায়াত দুবার, বিএনপি একবার ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাঁচবার এই আসনে নির্বাচিত হন।

ভোটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে জামায়াত দুবার, বিএনপি একবার ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাঁচবার এই আসনে নির্বাচিত হন।

আরও পড়ুন দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেলো জামায়াত ‘শাপলা’ নিয়ে এনসিপি-নাগরিক ঐক্যের টানাটানি

নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে প্রার্থী দেওয়া নিয়েও মেরুকরণে পরিবর্তনের তথ্যও বেরিয়ে আসছে। তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন, বিএনপি থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য চিকিৎসক নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক আস্থাভাজন ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এই আসন থেকে নির্বাচন না করলে বিএনপির প্রার্থীর জয় পাওয়া কষ্টকর হবে।

এদিকে জামায়াত তাদের মনোনীত প্রার্থীর নাম অনেক আগেই ঘোষণা করেছে। জাতীয় পার্টি, এনসিপির কোনো কাঠামো নেই বললেই চলে। বাম ও ইসলামি এবং নতুন নতুন দলের প্রার্থী কিংবা নেতাকর্মীদের কোনো সাড়াশব্দ শোনা যাচ্ছে না। তবে এখানে লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনটি পৌরসভা আর একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি উত্তরবঙ্গের মধ্যে বড় আসন। অন্যবারের মতো ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়ার কারণে বিএনপির হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী এখান থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ফলে এবারের চিত্রটা একটু আলাদা। তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন, বিএনপি থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য চিকিৎসক নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার খবরে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে।

এদিকে, বরাবর এ আসন থেকে কখনো নির্বাচিত আবার কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীকে আবারো নির্বাচিত করতে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন।

এমএআরএইচ/এসএইচএস/এমএফএ/এএসএম