মতামত

মেয়েটি কেন পরীক্ষা দিতে পারলো না?

মেয়েটি কেন পরীক্ষা দিতে পারলো না?

১০০ মার্কসের আনসার লিখবো না পরিস্থিতির কারণে পাস মার্কসও জীবনে জরুরি প্রয়োজন! শিক্ষক বা সিস্টেম কেন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে প্রবেশের সুযোগ দেবেন না? শিক্ষকের জবাবহিদিতা চাইবেন প্লিজ! জীবনের জন্য সিস্টেম! সিস্টেমের জন্য জীবন নিশ্চয়ই নয়। তবে কেন মেয়েটি হলে প্রবেশের সুযোগই পেলো না? মেয়েটির প্রতি আজ বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫-একবিংশ শতকে এসে যে অন্যায় হলো সেই সিস্টেম ও শিক্ষককের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্র?

Advertisement

আহারে মা! খবরটি দেখার পর অস্তিত্বের সংকটে ভুগেছি। আমার মেয়ের সমবয়সী। আমার বুকে এত বাজছে মেয়েটির কান্না কোথাও স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছি না। শেষে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কাঁদলাম- তাও বুকের মধ্যে দলা পেকে আছে!

এ কেমন সিস্টেম, পরীক্ষার্থী হিসেবে আমি পরিস্থিতির কারণে ১০০ শতাংশ উত্তর লিখলাম না। বরং তবে কখনো কখনো পাস মার্কস তো শিক্ষার্থীর জন্য জীবন মরণের কাছাকাছি পুলসেরাত পারের ন্যায়। তবে কেন শিক্ষার্থীরা দেরির দায়ে পরীক্ষা দেওয়ারই সুযোগ পাবে না? কেন কার বানানো এমন নিয়ম? আজ এইচএসসি পরীক্ষায় এই যে মেয়েটি অংশ নিতে পারলো না এর পরের ধাপের মেয়েটি ও তার পরিবারকে কতগুলো জটিল প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে, যার আর্থিক ও মনোদৈহিক এবং সামাজিক বিরূপ প্রভাব ও পরিস্থিতির ধারাবাহিক সমস্যা আছে, যা মেয়েটিকে এককভাবে এবং পরিবারকেও কতটা বইতে হবে ভেবেছেন কেউ?

বিশেষ করে শিক্ষা নামের কলঙ্ক এক নারী শিক্ষক? শিক্ষক এবং নারী তিনি হবেন সংবেদনশীল, মায়ের মতো স্পর্শকাতর অল্পতেই যিনি সন্তানসম শিক্ষার্থীদের সব বুঝবেন। যেখানে বাবাহীন মেয়েটি মাকে হাসপাতালে দিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে গেছে?

Advertisement

এই মেয়েটিকে বুঝতে না পারা শুধু শিক্ষক হিসেবে লজ্জার নয়। নারীত্বেরও লজ্জা। যিনি একবার ভাবলেন না এদেশে মেয়েরা কত প্রতিবন্ধকতায় চলে। মেয়েটির বাবা নেই তার মানে আর্থিক অবস্থাও খুব ভালো হবে না তা ধারণা করা কঠিন কিছু না। আবার মেয়েটির মা স্ট্রোক করে, হাসপাতালে কি অবস্থা জানি না। এবার পরীক্ষা না দিলে আবার আরেক শিক্ষাবর্ষে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গাদা গাদা টাকার সংস্থান করাটা এক বিষয় আছে। পরীক্ষায় অংশ নিতে ফর্ম ফিলাপসহ আনুষঙ্গিক খরচের টাকার সংস্থান না হওয়ায় আমাদের কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে নারী শিক্ষক হয়ে তিনি জানেন না?

প্রতি বছর এদেশে ১৫ লাখ শিক্ষার্থী রেজিট্রেশন করে। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নেয় ১০ থেকে ১২ লাখ মানে ৩-৫ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে এর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। কেননা মেয়েদের সামাজিক নানান ইস্যুতে নিরাপত্তাহীনতায় অভিভাবকরা ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার এই সময়টায় বিয়ে দিতে বাধ্য হন। অনেকের আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার। এমন এক পরিস্থিতিতে শিক্ষক আরও সংবেদনশীল হয়ে নিজের তদারকিতে আজকের এই মেয়েটিকে পরীক্ষায় হলে নিয়ে পাশে বসে সময়ের হিসাবে যতটা পারে লেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন! ধর্মের বিধান আমরা আজ পোশাকের ফেরিতে ওজন করছি কিন্তু সরাসরি ভালো কাজ, দায়িত্ব পালন, মজলুম বা অসুস্থ বা কান্নারত একটি ফুলের মতো শিশুর পাশে দাঁড়ানো কি ধর্মের বিধান না। বরং এত হজ করার চেয়ে নিকটে আর সাদকায়ে জারিয়ার মর্যাদাযোগ্য কাজ হতে পারতো যদি শিক্ষক আজ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কন্যাশিশুকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতেন। হতে পারতো একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা৷ শিক্ষকের নামে আমরা জয়ধ্বনি দিতাম। সেই সুযোগ তিনি নিজে নিলেন না। বরং একটি অনাথ এতিম মেয়ের স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ হলেন?

ভবিষ্যতে আার্থিক সীমাবদ্ধতা মানসিক আঘাত আর মায়ের শারীরিক অবস্থার ওপর এই মেয়েটির পরবর্তী শিক্ষাজীবন নির্ভর করছে। কেন মেয়েটিকে এমন অমানবিক পরিস্থিতিতে দাঁড় করালেন সেই কথিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আবেদন করছি! কেউ দেখবেন কি মেয়েটি আজ পরীক্ষা দিতে না পারার মানসিক আর্থিক ক্ষতির প্রতীকার পায়।

দেরিতে কেন্দ্রে আসার পেছনে মেয়েটির কোনো অপরাধ ছিল না। সর্বোপরি মা অসুস্থ তার সুস্থতার ওপর নির্ভর করছে পরের অনেক কিছু! একজন শিক্ষক কেন সন্তানসম শিক্ষার্থীকে সব শুনে মাথায় হাত বুলিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে নিলেন না?

Advertisement

পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশের সাথে একজন শিক্ষার্থীর ভালো মন্দ মানে রেজাল্টের ফলাফলে শিক্ষার্থীর স্বার্থ জড়িত! রাষ্ট্র বা সমাজের উত্থান পতনের বা মহাভারত বিগ্ন হয়ে যেত বা যাবে কি তবে কেন এমন নিয়ম। আর যেখানে মেয়েটি তার অসুস্থ মাকে হাসপাতালে রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে গেছে সেই মেয়েটির প্রতি নারী কথিত শিক্ষকই বরং কাকে কোথায় কি বললে মেয়েটি পরীক্ষায় বসতে পারবে সেই উদ্যোগ উদ্যোগে নিজের দায়িত্ব পালন করবেন সেটা না করে কেন্দ্রে একজন শিক্ষার্থীর এত দিনের স্বপ্ন ও একগুচ্ছ টাকা পানিতে ফেলার দায়ে এই শিক্ষককে অভিযুক্ত করার আবেদন জানাচ্ছি! কেন তিনি কন্যাসম নারী শিক্ষার্থীর প্রতি সদয় হলেন না সেই জবাবদিহিতার আওতায় আনার কি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কেউ সরব হবেন প্লিজ! মেয়েটির যে ক্ষতি হলো তার দায় ভবিষ্যতেও থাকবে! শিক্ষাবিদ, লেখক সাংবাদিক তথা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের মেয়েটির পাশে দাঁড়াতে আকুল আবেদন করছি! কারণ ভবিষ্যতে আার্থিক সীমাবদ্ধতা মানসিক আঘাত আর মায়ের শারীরিক অবস্থার ওপর এই মেয়েটির পরবর্তী শিক্ষা জীবন নির্ভর করছে। কেন মেয়েটিকে এমন অমানবিক পরিস্থিতিতে দাঁড় করালেন সেই কথিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আবেদন করছি! কেউ দেখবেন কি মেয়েটি আজ পরীক্ষা দিতে না পারার মানসিক আর্থিক ক্ষতির প্রতিকার পায়।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক।

এইচআর/জেআইএম