প্রহসনের নির্বাচনের অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিএনপি। দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান বাদী হয়ে গত ২২ জুন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এ মামলা করেন।
Advertisement
এ মামলায় এরই মধ্যে বুধবার মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়াল ও গত ২২ জুন উত্তরা থেকে নূরুল হুদাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৩ জুন) নূরুল হুদার চারদিন এবং বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) কাজী হাবিবুল আওয়ালের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বিএনপির করা এ মামলায় প্রথমে দণ্ডবিধি আইনের সাতটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পরে এর সাথে আরও তিনটি ধারা যুক্ত করা হয়। এসব ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহ, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে দণ্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে সাবেক নির্বাচন কমিশনাররাসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে।
এ ধারায় সর্বনিম্ন ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে তাদের। এছাড়াও মামলাটিতে দণ্ডবিধি আইনের ৪০৬ ধারায় বর্ণিত অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় হয়েছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। মামলায় দণ্ডবিধির ৪২০ ধারাটিও যুক্ত করা হয়েছে। প্রতারণার সংক্রান্ত এ ধারাটির অভিযোগ মামলার বিচারে প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের সাজা হতে পারে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনারদের।
Advertisement
আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ধারাগুলোর মধ্যে ১৭১(খ) ধারায় নির্বাচনী অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ লেনদেনের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। ১৭১(ঘ) ধারায় বর্ণিত জালভোট প্রদান ও এতে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে নির্বাচন আসামিদের বিরুদ্ধে।
পরে আরও ১২৪ (ক), ৪০৬ ও ৪২০ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২৪ (ক) ধারাটিতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে। এ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
এছাড়া ১৭১(ছ) ধারায় বর্ণিত নির্বাচন সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে। এ ধারাটিতে বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নির্বাচনের ফল প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত চরিত্র বা আচরণ সম্পর্কে সত্য ঘটনা বলে এমন কোনো বিবৃতি দান বা বিবরণ প্রকাশ করে যা মিথ্যা এবং যা সে মিথ্যা বলে জানে বা বিশ্বাস করে কিংবা সত্য বলে বিশ্বাস করে না, তবে সেই ব্যক্তি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।” নির্বাচন সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার এ ধারায় শুধু অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
আরও পড়ুন
Advertisement
মামলাটিতে দণ্ডবিধির ১৭১(জ) ধারায় বর্ণিত নির্বাচনে অবৈধ অর্থ প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। এ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা হতে পারে নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য আসামিদের।
দণ্ডবিধির ১৭১(ঝ) ধারায় বর্ণিত নির্বাচনী হিসাব না রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। বিচারে এ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্বাচনে কারচুপিতে জড়িত আসামিদের সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনে নির্বাচন সংক্রান্ত জালিয়াতির ১৭১ ধারায় এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়াও এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ১২০(খ) ধারায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেই বিধিতে বলা হয়েছে, “কেউ যদি দুই বছরের অধিক বা যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করে, আর এই অপরাধ সংঘটনের জন্য কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে, তাহলে সে ব্যক্তিও সমান সাজা পেতে পারেন।”
এ ধারাটির দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি যদি দণ্ডসমূহের দণ্ডনীয় অপরাধ (সাজা হওয়ার মতো অপরাধ) সংঘটনের জন্য পরিকল্পিত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ছাড়াই অন্য কোনোরূপ অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে (যে অপরাধে সাজা হয় না) শরিক হয়, তবে সেই ব্যক্তিকে অনধিক ছয় মাস পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে অথবা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত করা যাবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ মামলার ধারাগুলোতে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজার বিধান রয়েছে। মামলায় অধিকাংশ ধারা জামিনযোগ্য হলেও কিছু জামিন অযোগ্য ধারাও রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে করা এ মামলায় প্রথমে দণ্ডবিধির সাতটি ধারা ছিল। প্রতিটি ধারাই জামিনযোগ্য ছিল। এসব ধারায় তাদের সর্বোচ্চ ছয়মাসের সাজা হতে পারতো। তবে পরে আরও ১২৪ (ক), ৪০৬ ও ৪২০ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২৪ (ক) ধারাটিতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে। এ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।’
মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো- নির্বাচনে জালভোট প্রদান, নির্বাচনী হিসাব না রাখা, নির্বাচনে কোনো প্রার্থী সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া ইত্যাদি। ঢাকায় বসে নির্বাচন কমিশনাররা এসব অপরাধের সঙ্গেই কোনোভাবেই জড়িত থাকতে পারেন না। এছাড়াও তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো ভুল করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে বর্তায় না। ফলে বিচারে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন তো এজাহারে কিছু ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটির তদন্তকালে তাদের বিরুদ্ধে আরও অপরাধের তথ্যপ্রমাণ বের হয়ে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও ধারা বাড়বে।’
নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা দায়ের হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। অভিযোগ প্রমাণের বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব ধারার অভিযোগ রয়েছে, তা প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করবো। চেষ্টা থাকবে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার জন্য।’
এ মামলায় গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে ‘মব’ তৈরি করে আটক করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত সাবেক এ সিইসিকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় জনতা। পরে তাকে উত্তরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওইদিন রাতেই তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরদিন সোমবার আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আমি স্বীকার করছি- আমি ডামি নির্বাচন করেছি। রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবে একতরফা নির্বাচন হয়েছে। তবে এখানে আমাকে পয়সা দেওয়ার কোনো প্রশ্ন আসেনি। আমার জীবনে কেউ আমার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি।- কাজী হাবিবুল আওয়াল
এজলাসে থাকাকালে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা আদালতকে বলেন, ‘নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। এরজন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করার সুযোগ নেই।’
এছাড়াও বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানিকালে আরেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল আদালতকে বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি- আমি ডামি নির্বাচন করেছি। রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবে একতরফা নির্বাচন হয়েছে। তবে এখানে আমাকে পয়সা দেওয়ার কোনো প্রশ্ন আসেনি। আমার জীবনে কেউ আমার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি।’
প্রহসনের নির্বাচনের অভিযোগে বিএনপির করা ২২ জুনের মামলায় আসামি হিসেবে যে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাবেক তিন সিইসি ছাড়াও রয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তারা।
এছাড়া ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ ও তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সচিবসহ প্রধান নির্বাচন কমিশন অফিসের অন্য কর্মকর্তা।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে একই সময়ে দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত), জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত) এবং পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল আলমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে মামলায় আসামিদের তালিকায় ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমানসহ তৎকালীন নির্বাচন সচিবেরও নাম আছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৯ সালে তৎকালীন সামরিক শাসকদের সহায়তায় অবৈধভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাসহ তার সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর নেতাকর্মীদের অপহরণ, গুম, গুরুতর জখম, হত্যা ও বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন শুরু করে। এ নির্বাচনে তাকে ক্ষমতায় বসাতে কাজ করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
আরও পড়ুন
সাবেক সিইসি নূরুল হুদা ৪ দিনের রিমান্ডে এক রাতে সাবেক সিইসি-এমপিসহ ৮ রাজনৈতিক নেতা গ্রেফতার মব সৃষ্টি করে নূরুল হুদাকে লাঞ্ছনা, অভিযুক্তরা চিহ্নিত২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আসামি কে এম নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করেন। এ কমিশন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে থাকেন। বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে শেখ হাসিনা তখন অঙ্গীকার করেন যে, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার তিনি তা-ই করবেন।
শেখ হাসিনার এ আশ্বাসে বিএনপিসহ সব দল ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপিসহ বিভিন্ন দল মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গেলে অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের বাধার সম্মুখীন হয়। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা প্রচারণায় বের হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ক্যাডারদের দ্বারা আক্রমণের শিকার, গুরুতর জখম, গাড়ি ভাঙচুর ও ভোটের প্রচারণায় বাধার মুখে পড়েন।
ওই নির্বাচনে দলীয় সমর্থক ও নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে তাদের ওপরও আক্রমণ, গুরুতর জখম, হত্যা, অপহরণ, গুম শুরু হয়। একই কৌশলে সারাদেশে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা তৈরি করে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়। কোনো প্রকারেই ভোটের প্রচারণায় বের হতে না পারায় বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য এবং এসব ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিএনপি মহাসচিবের সই করা চিঠির মাধ্যমে তৎকালীন সিইসি নূরুল হুদার কাছে আবেদন করা হয়।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, নূরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা তথা নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সে সময় কোনো প্রকার আইনি পদক্ষেপ নেয়নি।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, তৎকালীন অবৈধ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাসহ নির্বাচন কমিশনাররা পূর্ণ সহায়তা করে অবৈধভাবে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন সমাপ্ত করার পরিকল্পনা করে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্ত্বেও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ২০১৮ সালের নির্বাচনে সম্পূর্ণভাবে জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সংবিধানের পরিপন্থি কাজ করে ও নির্বাচন আচারণবিধি লঙ্ঘন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিতদের দিয়ে দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বক্স ভর্তি করে রাখে।
এভাবেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করে এবং বিএনপির ৬ জন সংসদ সদস্যকে বিজয়ী ঘোষণা করে একাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে। নূরুল হুদা তার একক নির্দেশে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে বিএনপি, ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দেন। এ কাজের জন্য তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, একই ভাবে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য আসামিরা আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
এমআইএন/এমকেআর/এএসএম