মাহমুদ নোমান
Advertisement
জ্যোতির্ময় ধর পেশায় একজন প্রকৌশলী। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিষয়াদিতে রাশিয়া-জামার্নি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। রাশিয়ায় অধ্যয়নের সুবাদে নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী যোরেস ইভানোভিচ আলফারভের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। অথচ নিজে একজন সৌখিন পর্বতারোহী হয়ে ক্ষান্ত হননি; সম্পাদনা করছেন ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের পত্রিকা ‘জিওগ্রাফিকা’। আমি যতদূর দেখেছি, শুধু সম্পাদনা নয়; ভ্রমণের টানে ছুটে চলা মানুষ নিয়ে এক সুহৃদ বলয় সৃজনে এবং এ সেক্টরে কী কী করলে সমৃদ্ধ ইতিহাস রচিত হবে—এ সাধনায় মগ্ন জ্যোতির্ময় ধর।
তিনি একাধারে বিজ্ঞানমনস্ক ও সমাজসচেতন লেখকও। ব্লগিং করেছেন দীর্ঘদিন। মুক্তমনা, ইস্টিশন এবং সামহোয়্যারইন ব্লগের প্রথম দিককার প্রতিশ্রুতিশীল লেখক। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ক্লাব আন্দোলনের বলিষ্ঠ উদ্যোগী প্রাণ। চট্টগ্রামের বিজ্ঞান পরিষদের একনিষ্ঠ অনুধ্যানে ড. জামাল নজরুলসহ অনেক স্বনামখ্যাত ব্যক্তিত্বের কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য হয়েছে কিশোরবেলা থেকে।
সম্প্রতি এ মহৎপ্রাণের প্রকাশিত তৃতীয় বই ‘রাধাগোবিন্দের তারাগুলো’ পাঠ শেষে লেখকসত্তার টিউন ধরতে সচেষ্ট হয়েছি। সহজ-সরল সুপ্রকাশের বাচনিক ভঙ্গি এ গ্রন্থকে সুপাঠ্য করে তুলেছে। বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি পাঠে বিভ্রান্তি কিংবা কাঠিন্য ভাবাপন্ন বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে এ গ্রন্থ। কিশোর থেকে বৃদ্ধের বইটি পাঠে কোনো রকম বেগ পেতে হবে না।
Advertisement
বইটি মূলত রাধাগোবিন্দ চন্দ্রের জ্যোতির্বিজ্ঞানের কাজকর্ম ও জীবনকে কেন্দ্র করে। রাধাগোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বনন্দিত জ্যোতির্বিদ। বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক, বাংলার গ্যালিলিও। কিন্তু এ দেশে মৃত্যুর পরেও অনুচ্চারিত এক নাম। তাকে নিয়ে লেখাজোখাও তেমন নেই। সেখানে জ্যোতির্ময় ধরের বইটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। রাধাগোবিন্দ চন্দ্র ছিলেন সামান্য কেরানি।
ছোটবেলা থেকে আকাশ দেখার আনন্দে নির্ঘুম রাত গেছে কত। দূরবীন কেনার টাকা নেই। নিজ দেশের কেউ কিংবা সংস্থা তার পাশে দাঁড়াননি। কোন দূরের আমেরিকা সরকার তাকে দূরবীন উপহার দিয়েছিল। পরে নিজের জমি বিক্রি করেও দূরবীন কেনেন। এতে ভালো কাজে আমাদের উদাসীনতার বহু আগের রোগ এটি প্রমাণ করে। আরেকটি বিষয় রাধাগোবিন্দ চন্দ্র স্বশিক্ষিত ছিলেন। চারবার ম্যাট্রিক ফেল রাধাগোবিন্দ চন্দ্রের আত্মজীবনীতে লিখেছেন—‘শেষবার ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হইয়া বিদ্যালয় পরিত্যাগ করিলাম, কিন্তু অধ্যয়ন পরিত্যাগ করি নাই।’
যশোরের জন্ম নেওয়া জগদ্বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ রাধাগোবিন্দ চন্দ্রের জীবন-দর্শন এ দেশের কিশোরদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে একটি সূদৃঢ় উন্নত চেতনা-মানসিকতা তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জ্যোতির্ময় ধরের বইটি বহুল আলোচিত হওয়া সময়ের দাবি। ২৫ জুন এ বিজ্ঞানমনস্ক লেখক, জিওগ্রাফিকা সম্পাদক জ্যোতির্ময় ধরের জন্মদিন। উত্তর চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া এ লেখক, সম্পাদক আগামীতে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবেন এই প্রত্যাশা রাখছি।
এসইউ/এএসএম
Advertisement