দেশজুড়ে

বেসরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা

বেসরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা

নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয় ঘটায় বেসরকারি কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না বরিশাল অঞ্চলের শত শত শিক্ষার্থী। তবে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ২০ নম্বর দিয়ে ভর্তিতে সুযোগ দানে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের আইএসিআইবি নার্সিং ইনস্টিটিউটে এবার ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সে ৫০ আসনের বিপরীতে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি হননি। অন্যদিকে পটুয়াখালীর ড. জাফর নার্সিং কলেজে ৫০ আসনের বিপরীতে মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।

শুধু এই দুই প্রতিষ্ঠান নয়, বিভাগের ১৬টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটেই শিক্ষার্থী ভর্তিতে এবছর ধস নেমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে প্রস্তুতি নিতে না পারা এবং অটোপাসের কারণে নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয়ের মূল কারণ।

বাংলাদেশ প্রাইভেট নার্সিং ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কলেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, নার্সিং শিক্ষার প্রসার ঘটাতে বিভাগে বেসরকারিভাবে ১৬টি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠে। এর মধ্যে বরিশালে ১০, পটুয়াখালীতে তিন এবং ঝালকাঠি, বরগুনা ও পিরোজপুরে একটি করে রয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫০ থেকে ৯০টি আসন আছে। আগে এই আসন পূরণের পর আরও শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তদবির চলত। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে।

Advertisement

সারাদেশে ১৬ মে নার্সিং ভর্তি পরীক্ষা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তির সুযোগের পর কমপক্ষে ৪০ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরাই কেবল বেসরকারি কলেজে নার্সিং শিক্ষার সুযোগ পান। এবছর আসন অপেক্ষা কম পাস করায় শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে।

পটুয়াখালীর জহির মেহেরুন নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ কাজল রানী কর্মকার জানান, তার এখানে ডিপ্লোমা কোর্সে আসন ৬০টি হলেও ভর্তি হয়েছে ১০ শতাংশ। তিনি ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীও পাননি। তার মতে, পাস নম্বর ৩৫-এর মধ্যে রাখলে সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে।

বরিশাল নগরীর রাজধানী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ সেলিনা আক্তার বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে প্রস্তুতি নিতে না পারা এবং অটোপাসের কারণে এবার ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। যে কারণে বেসরকারি কলেজগুলো ভর্তিতে অর্ধেক কোটাও পূরণ করতে পারেনি। এ অবস্থায় পাস নম্বর কমিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ না দিলে বেশিরভাগ কলেজ পাঠদান শুরু করতে পারবে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট নার্সিং ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কলেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মুরাদ হোসেন বলেন, বিগত সময়ে নার্সিংয়ে ভর্তিতে এক লাখ ২০ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়তো। পরীক্ষায় অংশ নিতেন লক্ষাধিক। তাদের মধ্যে পাস করতেন ৯০ শতাংশ। কিন্তু এবার তা ৫৪ শতাংশ।

Advertisement

ডিপ্লোমা নার্সিংয়ে সারাদেশে মোট আসন ২০ হাজার ৭১৫টি। এরমধ্যে বেসরকারি ৩৫৮টি প্রতিষ্ঠানে আসন ১৭ হাজার ৮৩৫টি। এবছর পাস করা ২৪ হাজার ২৬৭ জনের মধ্যে প্রায় তিন হাজার পরীক্ষার্থী সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ২১ হাজারের অর্ধেকই আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বেসরকারি কলেজে ভর্তি হবেন না। তাছাড়া একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতবছর পাস করেছিলেন ৪৫ হাজার ৬০৬ জন। পাসের হার ছিল ৮৪ শতাংশ। সরকার করোনাকালে ভর্তি পরীক্ষায় ১০ নম্বর অতিরিক্ত দিয়েছিল। এবছর ২০ নম্বর অতিরিক্ত দিয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন কলেজ সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার বলেন, এ কোর্সে কোটা রয়েছে ৩৫ হাজার কিন্তু পাস করেছেন ২৪ হাজারের মতো। ভর্তির সময় এখনো যায়নি। বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষরা আবেদন দিলে নার্সিং ভর্তি কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

শাওন খান/এসআর/এএসএম