আজ ২৪ জুন। ১৯৮৭ সালের এই দিনে লাতিন আমেরিকায় উদিত হয়েছিল ফুটবলের নতুন সূর্য। যে সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়েছে পুরো ফুটবলবিশ্ব। সেই নক্ষত্রের নাম লিওনেল মেসি।
Advertisement
১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন মেসি। সে হিসেবে আজ মঙ্গলবার ৩৮ বছরে পা রেখেছেন ফুটবল জাদুকর। ভালোবাসার মানুষ, বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে আজ তিনি উদযাপন করছেন ৩৮ তম জন্মদিন।
মেসির সাফল্যময় জীবনের শুরুটা ভালো ছিল না। যদিও মাত্র ৪ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাব গ্রান্ডোলিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যে গ্রোথ হরমোনের ঘাটতিতে আক্রান্ত হন মেসি। যা তার স্বাভাবিক শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় শুরুতে মেসিকে দলে নিতে চায়নি কোনো ক্লাব। ওই সময় কিছু ফুটবল প্রতিভা প্রকাশ পেলেও বিশাল অংকের অর্থ খরচ করে মেসির চিকিৎসার জন্য ঝুঁকি নেয়নি স্থানীয় ক্লাবগুলো। এমনকি পরিবারেরও অর্থ সামর্থ্য ছিল না। সে সময় এক রকম অবহেলার পাত্রে পরিণত হন মেসি।
Advertisement
কঠিন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও মাত্র ১৩ বছর বয়সে সাহসিকতার সঙ্গে ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন মেসি। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই কিশোর স্বপ্ন পূরণে রোসারিও থেকে স্পেনের দিকে পা বাড়ান এবং সেখানকার নামকরা ক্লাব বার্সেলোনায় যোগ দেন। স্প্যানিশ এই ক্লাবই মেসির চিকিৎসার খরচ বহনের দায়িত্ব নেয়।
২০০০ সালে প্রথমবার বার্সার হয়ে মাঠে নামেন মেসি। এরপরই জীবনের মোড় ঘুরে যায় আর্জেন্টাইনের। ২০০৪ সালের ক্লাবের সিনিয়র দলে জায়গা পাওয়ার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মেসিকে।
একের পর এক রেকর্ড গড়েন এবং ক্লাব ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মোট ৪৫টি ট্রফি জিতে ক্যারিয়ারকে ঐশ্বর্যপূর্ণ করে তোলেন। এক সময়ের নিন্দিত মেসি হয়ে ওঠেন বিশ্ব ফুটবলের নন্দিত তারকা, হৃদয়ে জায়গা করে পরিণত হন কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎসে।
লিওনেল মেসির ক্লাব ক্যারিয়ার
Advertisement
২০০৮-০৯ মৌসুমে বার্সার হয়ে ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মেসি। ক্লাবটিতে এক টানা ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ৬৭২টি গোল করেছেন তিনি। ২০২১ সালে ক্লাব ছাড়ার আগ পর্যন্ত জিতেছেন ১০টি লা লিগা ও ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।
বার্সেলোনার ক্যারিয়ার শেষে ২০২১-২৩ মৌসুমে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি) যোগ দেন মেসি। সেখানে দুটি লিগ ওয়ান শিরোপা জয় করেন। এরপর ইন্টার মিয়ামিতে যোগ দেন এবং ক্লাবটিকে তাদের প্রথম লিগস কাপ ও সাপোর্টার্স শিল্ড ট্রফি জয় করান।
আর্জেন্টিনা জার্সিতে মেসি
২০০৫ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে অভিষেক হয় মেসির। তার প্রথম ম্যাচ ছিল পেরুর বিপক্ষে এবং প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে।
২০০৬ বিশ্বকাপে বদলি হিসেবে নেমে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ খেলার ও গোল করার রেকর্ড গড়েন মেসি।
এরপর শুরু হয় তার অন্যতম গৌরবময় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, যেখানে তিনি জিতেছেন ২০২১ এবং ২০২৪ কোপা আমেরিকা, ২০২২ সালের ফাইনালিসিমা এবং বহুল কাঙ্ক্ষিত ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৩ ম্যাচে ১১২ গোল করেছেন মেসি।
মেসির অর্জন ও রেকর্ড
মেসির উজ্জ্বল ক্যারিয়ার নানা অর্জন ও রেকর্ডে ভরপুর। ফুটবলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সম্মাননা ব্যালন ডি’অর জিতেছেন সর্বোচ্চ ৮ বার। ক্লাব পর্যায়ে বার্সার হয়ে তার ৬৭২টি গোল একক কোনো ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ।
ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মিলিয়ে মেসির গোলসংখ্যা ৮০০-র বেশি। এর মধ্যে ফিফা টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২৫টি গোল এবং দক্ষিণ আমেরিকান হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১০৬টি গোল রয়েছে এই কিংবদন্তির।
এমএইচ/