ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম ধীরগতির শহর। সীমাহীন যানজটে যেখানে প্রতিদিন নষ্ট হয় কর্মঘণ্টা। অপচয় হয় জ্বালানি, দূষিত হয় বায়ু। দূষণ, যানজট ও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর অন্যতম বাহন হতে পারে বাইসাইকেল। দরকার শুধু আলাদা লেন ও পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা। এমনটাই বলছেন সাইক্লিস্ট ও বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
সাইক্লিস্টরা বলছেন, তীব্র যানজট, বেপরোয়া গাড়িচালক, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার আধিক্য থেকে নিজেদের রক্ষা করে ঢাকার ব্যস্ত সড়কে বাইসাইকেল চালানো বেশ কষ্টসাধ্য। তবুও সাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। প্রাণ-আরএফএল, মেঘনাসহ বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাইসাইকেল তৈরি করছে। ফলে দাম হাতের নাগালে থাকায় বাড়ছে চাহিদাও।
জ্বালানি সাশ্রয় ও যানজট রোধে বাইসাইকেলের বিকল্প বাহন ঢাকা শহরে নেই। জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত বাহন পরিবেশের যেমন ক্ষতি করছে, তেমন শব্দ ও বায়ুদূষণসহ সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখল করছে। এসব ক্ষেত্রে বাইসাইকেল হয়ে উঠতে পারে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় বাহন। এতে একদিকে অর্থ সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। তবে এর আগে ঢাকা শহরে সাইকেল লেন উদ্ধার করে ঢাকার সব সড়কে লেন চালু করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে বাইসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা কম মনে হলেও এর ভয়াবহতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে সাইকেলের পক্ষে প্রচার চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, আবাসিক এলাকা ও রিকশা লেনগুলো সাইকেল ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে।
Advertisement
২০২০ সালের ৭ আগস্ট সাইক্লিস্ট রেশমা নাহার রত্নাকে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানসংলগ্ন লেকরোডে সাইক্লিং করার সময় একটি প্রাইভেটকার চাপা দিয়ে হত্যা করে। রেশমা নাহার রত্নার মতো হাজারো সাইক্লিস্ট ও পথচারী এমনিভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
পৃথিবীর সব দেশ এমনকি যে দেশ গাড়ি আবিষ্কার করছে তারাও বুঝতে পেরেছে গাড়িনির্ভরতা পরিবেশের জন্য ক্ষতি। তারা এখন সবাই সাইকেলে চলে আসছে। শুধু আমরা উল্টো গাড়িনির্ভরতা বাড়িয়েই যাচ্ছি। সাইকেলবান্ধব শহর তৈরি না করতে পারলে ভবিষ্যতে আরও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।- বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ
আফিফা আমিন নামে একজন সাইক্লিস্ট জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাইকেল চালানোর সময় সবচেয়ে বড় ভয়ের জায়গা বাস-ট্রাক আর মোটরসাইকেল। আমার কেবলই মনে হয়- এই বুঝি পেছন থেকে ধাক্কা দিলো। আসলে এখানে কেউ তো নিয়ম মানে না। আমি যতই সেফ থাকতে চাই, বাকিরা আমায় থাকতে দেয় না। তারা ধুমধাম ওভারটেক করার চেষ্টা করে। আর মেয়ে হলে তো কথাই নেই।’
পাঁচ বছর আগে পুলিশ বক্স সরিয়ে উদ্ধার হয় সাইকেল লেন২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর সাইকেল লেনের জায়গা দখল করে বসানো পুলিশ বক্স অপসারণ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অভিযান চালিয়ে সাইকেল লেনটি উদ্ধার করা হয়। তবে কিছুদিন পর আবার পুরোনো অবস্থায় ফিরে যায়। বর্তমানে দখল করে বসানো হয়েছে বিভিন্ন দোকান।
Advertisement
বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশ দূষণে দুই লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণের কারণে।
বিশ্বের বায়ুদূষণ পরিমাপক সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) তথ্য অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের ১০টি বায়ু দূষিত শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ওপরের দিকে এবং শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ সময়ে বিশ্বের বায়ুদূষণের শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান শীর্ষে। আর বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণই হলো জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত (পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন ইত্যাদি) মোটরযান।
নিরাপদ বাইসাইকেল চলাচল উদ্বুদ্ধ করতে সড়কের পাশে আলাদা সাইকেল লেন স্থাপনসহ কাঁচাবাজার, বিপণিবিতান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের অভ্যন্তরে বা প্রাঙ্গণে, সড়কের পাশে, পার্ক, স্টেডিয়াম ইত্যাদি জনসমাগম স্থানে নিরাপদ সাইকেল পার্কিং স্থাপন করা যায় তাহলে দেশের সর্বত্রই জ্বালানিবিহীন যান বাইসাইকেলের প্রসার ঘটবে। ধীরে ধীরে স্মার্ট যান হিসেবে সড়কে বাইসাইকেলের ব্যবহার বাড়লে জীবশ্ম জ্বালানির মোটরযানের সংখ্যাও কমতে থাকবে।
নেদারল্যান্ডসে মানুষের চেয়ে বাইসাইকেল বেশিসুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে নেদারল্যান্ডসের মোট জনসংখ্যার (১ কোটি ৭০ লাখ) চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা (২ কোটি ৩০ লাখ) বেশি হয়ে যায়।
সংস্থাটির গবেষণায় দেখা যায়, নেদারল্যান্ডসের মানুষ মোট ভ্রমণের চার ভাগের এক ভাগ সাইকেলে করেন। বাকি ভ্রমণগুলো তারা বাস-ট্রাম, রেল, ব্যক্তিগত গাড়িসহ অন্য যানবাহনে করেন।
আরও পড়ুন যানবাহনের কালো ধোঁয়ায় ঢাকছে ঢাকা পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু পরিবেশবান্ধব যান সাইকেলের লেন ঝুলছে শুধু ‘সাইনবোর্ডে’ বায়ুদূষণরোধে বিশেষ অভিযান, ৩৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা জরিমানা ১২ সিসা ব্যাটারি কারখানা বন্ধ করলো পরিবেশ অধিদপ্তরস্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে আমরা যে ট্র্যাডিশনাল যানবাহন ব্যবহার করছি, বিশেষ করে পুরোনো যে বাস বা অন্য বাহন আছে, সেগুলো থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে নিয়মিত। এই দূষণ থেকে রক্ষায় অন্যতম বাহন হতে পারে বাইসাইকেল। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট ২০১৭ সালে প্রটোকলের তোয়াক্কা না করে কোনো রকম নিরাপত্তা ছাড়াই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের খবর দিতে রাজপ্রাসাদে গিয়েছিলেন সাইকেলে করে। সাইকেল নেদারল্যান্ডসের প্রায় সব মানুষের কাছেই প্রিয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের ১৮টি হলের প্রতিটিতে প্রায় তিনশর বেশি সাইকেল রয়েছে। মেয়েদের হলগুলোতেও সাইকেল বাড়ছে। রোকেয়া হলে তিন মাস ধরে সাইকেল প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে নতুন ১২ জন মেয়ে সাইকেল কিনেছেন। বাকি চারটি হলেও মেয়েদের সাইকেল প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইক্লিং ক্লাবের সভাপতি মো. তাওহীদুর রহমান
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে কোনো বাইসাইকেল লেন নেই। উন্নত দেশগুলোর প্রতিটি শহরেই সাইকেল লেন রয়েছে। আমি নিজেও পিএইচডির জন্য দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। সেখানে মোটরযানের ওপর নির্ভরশীল কিন্তু সেখানেও প্রতিটি সড়কে বাইসাইকেল লেন আছে। আরেকটি বিষয় ঢাকা শহরে কোথাও বাইসাইকেল পার্কিং সুবিধা নেই।’
ফিটনেসবিহীন যানবাহনে দূষণ, সাইকেলে সমাধানএ প্রসঙ্গে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের যে ছয়টি উৎস রয়েছে তার অন্যতম ফিটনেসবিহীন যানবাহন। যানবাহনের ফিটনেস ঠিক থাকলেও ফসিল ফুয়েল বার্ন করায় বায়ুদূষণ করতেই থাকবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো কোনো যানবাহন বিআরটিএতে যাওয়ার পরে ফিটনেস সার্টিফিকেট পায়নি- এ ধরনের খবর আজ পর্যন্ত আমরা পাইনি। ঢাকায় বায়ুদূষণের মোট ১৫ শতাংশ দায়ী ফিটনেসবিহীন যানবাহন।’
পরিবেশ উপদেষ্টা হিসেবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দায়িত্ব নেওয়ার পর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২৫ বছরের বেশি পুরাতন যানবাহনগুলো বাতিল করার জন্য, প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছিল। পরবর্তীসময়ে বিভিন্ন চাপের মুখে সেটি ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়, যোগ করেন অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান।
এসব যানবাহনে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা উল্লেখ করে ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘কালো ধোঁয়া নির্গত হয় এমন যানবাহন চলাচল করছে হরহামেশাই। এতে বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী, শিশু, শ্বাসকষ্টের রোগী, ট্রাফিক পুলিশ, ফুটপাতের ব্যবসায়ী এবং সড়কের পাশে যারা বসবাস করে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
বাইসাইকেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর সব সভ্য দেশেই সাইকেল লেন রয়েছে। ঢাকা শহরে হাঁটার জায়গায় ফুটপাতের ৪০ শতাংশ হকার ও ব্যবসায়ীরা দখল করে আছে। যে দুটি লেন স্বীকৃত সে দুটি লেনও আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। সাইকেল লেন বাস্তবায়ন করলে গাড়িনির্ভরতা ও যানজট অনেকাংশে কমে আসবে।’
বাইসাইকেল চালানোর অভ্যাস খুবই ভালো। ঢাকার বেশিরভাগ মানুষ সাইকেল চালালে প্রথমত পরিবেশ দূষণ কমবে, শব্দদূষণ থাকবে না, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। তবে সবার আগে প্রয়োজন আলাদা লেন। কারণ সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি শিকার হয় পথচারী ও সাইক্লিস্টরা।- ঢাকা আহছানিয়া মিশনের রোড সেফটি প্রকল্পের সমন্বয়কারী শারমিন রহমান
বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশ এমনকি যে দেশ গাড়ি আবিষ্কার করছে তারাও বুঝতে পেরেছে গাড়িনির্ভরতা পরিবেশের জন্য ক্ষতি। তারা এখন সবাই সাইকেলে চলে আসছে। শুধু আমরা উল্টো গাড়িনির্ভরতা বাড়িয়েই যাচ্ছি। সাইকেলবান্ধব শহর তৈরি না করতে পারলে ভবিষ্যতে আরও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ছে নারী সাইক্লিস্টঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইক্লিং ক্লাবের সভাপতি মো. তাওহীদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে সাইকেল চলাচলে নিরাপত্তা এখনো তৈরি হয়নি। তবুও অনেক মানুষই এখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করছেন। আমাদের প্রধান দাবি ছিল সাইকেল লেন। ঢাকায় সাইকেল লেন হলেও সেটি আর সাইকেলচালকদের জন্য নেই। দখল হয়ে গেছে অনেক বছর আগেই। আরেকটি দাবি সাইকেল পার্কিং ব্যবস্থা। কারণ আমি বাসা থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যদি সেখানে পার্কিং না পাই তাহলে নিশ্চয় সাইকেল নিয়ে বেরোতে পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের ১৮টি হলের প্রতিটিতে প্রায় তিনশর বেশি সাইকেল রয়েছে। প্রতিনিয়ত সাইকেল বাড়ছে প্রতিটি হলেই। মেয়েদের হলগুলোতেও সাইকেল বাড়ছে। রোকেয়া হলে তিন মাস ধরে সাইকেল প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে নতুন ১২ জন মেয়ে সাইকেল কিনেছেন। বাকি চারটি হলেও মেয়েদের সাইকেল প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম টুববুস জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাঁটার বিকল্প হিসেবে মানুষের প্রথম বাহন বাইসাইকেল। সুস্বাস্থ্য, বায়ুদূষণ রোধ, জ্বালানি সাশ্রয়, শব্দদূষণ, পরিবেশ সুরক্ষা ও সড়কপথে নিরাপদ স্বার্থে আলাদা সাইকেল লেনের দাবিতে প্রতি এপ্রিল মাসের প্রথম শুক্রবার সাইকেল লেন দিবস পালন করে আসছি।’
বায়ু-শব্দদূষণ কমাবে সাইকেলঢাকা আহছানিয়া মিশনের রোড সেফটি প্রকল্পের সমন্বয়কারী শারমিন রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাইসাইকেল চালানোর অভ্যাস খুবই ভালো। ঢাকার বেশিরভাগ মানুষ সাইকেল চালালে প্রথমত পরিবেশ দূষণ কমবে, শব্দদূষণ থাকবে না, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। তবে সবার আগে প্রয়োজন আলাদা লেন। কারণ সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি শিকার হয় পথচারী ও সাইক্লিস্টরা।’
বিডিসাইক্লিস্টসের মডারেটর ফুয়াদ আহসান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন দুই থেকে তিন লাখ মানুষ ঢাকা শহরে বাইসাইকেল চালায়। তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট জায়গা হলেই একজন সাইকেল নিয়ে চলাচল করতে পারেন। সাইক্লিস্টদের প্রয়োজন নিরাপত্তা। ফুটওভার ব্রিজের মতো কিছু কিছু জায়গায় সাইকেল পার্কিং ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ২০১৪ থেকে ঢাকা শহরের অনেক অফিস কিংবা মার্কেটের পার্কিং সাইকেল পার্কিং অনুমোদন করে না।’
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই বাইসাইকেল অন্যতম বাহন। কিন্তু বাংলাদেশে বাইসাইকেল লেন, পার্কিং ও সেফটি আগে কখনো করা হয়নি। এখন ঢাকা শহরজুড়ে বাইসাইকেল লেন তৈরির সম্ভাবনা কিংবা সুযোগ কম। তবে নতুন নতুন যে শহর গড়ে উঠছে সেখানে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে সাইকেল লেন করা প্রুয়োজন। বাইসাইকেল নিঃসন্দেহে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে লাঘব করবে।’
প্রতিদিন সাইকেল চালান ঢাকা কলেজের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর আহমেদ রুমি। তিনি থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবরে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাইকেলে যাতায়াত করলে আটকানো সম্ভব নয়। হোক যানজট কিংবা অবরোধ। ফুটপাত দিয়েও সাইকেল পার করা যায়। অলিগলি দিয়েও যাওয়া যায়। সাইকেল নিয়ে আদাবর থেকে ঢাকা কলেজে যেতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট। একদিকে প্রতিদিন প্রায় তিনশ টাকা রিকশা ভাড়া সেভ হচ্ছে, অন্যদিকে শরীরচর্চাও হচ্ছে। সবদিক থেকেই সুবিধা।’
সাইকেল কেনার আগে কিছু পরামর্শের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উচ্চতা অনুযায়ী সাইকেল কেনা উচিত। সাইকেলের সিট কত দূরত্বে হবে সেটি ফিট করা প্রয়োজন। এগুলো সায়েন্টিফিক ব্যাপার।
মেট্রো স্টেশনে সাইকেল পার্কিং ব্যবস্থার পরিকল্পনা ডিএনসিসিরমেট্রোরেল ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা সাইকেল ব্যবহার করে স্টেশনে যান, তাদের জন্য মেট্রোরেল স্টেশনে পার্কিং ব্যবস্থার পরিকল্পনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ১৯ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানানো হয়, ডিএনসিসি ইনোভেশন ল্যাব বর্তমানে ঢাকার মেট্রো স্টেশনগুলোতে সাইকেল পার্কিং স্টেশন তৈরির সম্ভাবনা অনুসন্ধান করছে। তারা এর জন্য একটি জরিপ পরিচালনা করছে। সেই জরিপে অংশ নেওয়ার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়। (ee.kobotoolbox.org/x/uhwlzT4u)। নগরবাসী চাইলে বাস্তবায়ন করবে ডিএনসিসি।
টিটি/এএসএ/এমএফএ/এএসএম