জুনে শেষ হচ্ছে উত্তরবঙ্গের সর্বাধুনিক নগরবাড়ী নৌবন্দরের নির্মাণকাজ। এরপর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। দীর্ঘ ছয় বছরের ব্যয়বহুল নির্মাণ কাজ শেষে আমদানি-রপ্তানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সম্ভাবনাময় বন্দরটি। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম কমে যাওয়ায় উদ্বোধনের আগেই লোকসানের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, নদীপথে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে সার, সিমেন্ট, কয়লাসহ ও ভারী মালামাল পরিবহনে অন্যতম কেন্দ্র পাবনার নগরবাড়ী ঘাট। গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১৮ সালে ঐতিহ্যবাহী এ ঘাটে আধুনিক নৌবন্দর গড়ে তোলার কাজ শুরু হলেও জটিলতায় পড়ে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে।
মামলা জটিলতা শেষে দুদফা মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির পর নির্মাণকাজ শেষে চলতি বছরের জুনে হস্তান্তরে প্রস্তুত ৫৬৩ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের এ বন্দর। এরমধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে ৯৫ শতাংশ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি সম্পূর্ণ কাজ জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে। এতে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে গতি বাড়বে অন্তত ১০ গুণ। সেই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান।
সম্প্রতি বন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এ নৌবন্দরে ৩৬ একর জমির উপর তৈরি হয়েছে ৩৬০ মিটার কনক্রিটের জেটি, টার্মিনাল, ওয়্যার হাউজ, গোডাউন, বাফার গোডাউন, ওপেন শেড, ওপেন স্টেজসহ দ্রুততম সময়ে পণ্য লোড-আনলোডের সব ব্যবস্থা। হস্তান্তরের আগে পাকা জেটি ও ক্রেন ব্যবহারে পণ্য খালাসে আধুনিক সুবিধা পেতে শুরু করেছেন আমদানিকারকরা। সক্ষমতার সবটুকু ব্যবহার হলে বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য বদলে যাবে নগরবাড়ীসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চালচিত্র।
Advertisement
আরও পড়ুন
নগরবাড়ীতে নদীবন্দর নির্মাণ কাজ শুরু নগরবাড়ী ঘাটে ট্রাক ভাড়ার অর্ধেক টাকা যায় দালালদের পকেটেনগরবাড়ী থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে থাকা ট্রাকচালক আরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বন্দরে আগে শ্রমিক মাথায় করে মালামাল জাহাজ থেকে খালাস করতেন। তাতে অনেক সময় লাগতো। এখন জাহাজ সরাসরি পাকা জেটিতে ভিড়ছে। ক্রেনে মালামাল সরাসরি ট্রাকে তোলা হচ্ছে। সময় কম লাগছে। পাকা রাস্তা ও ইয়ার্ডে গাড়ি আনা নেওয়ায় ভোগান্তি দূর হয়েছে। বন্দর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করলে পণ্য আনা-নেওয়ায় গাড়ি চলাচল বাড়বে। আমাদের কাজ ও আয় বাড়বে।’
স্থানীয় বাসিন্দা শ্রমিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে বন্দরের নির্মাণকাজ চলছে। কিন্তু শেষ হয়েও যেন হচ্ছে না। আমরা চাই কাজ দ্রুত শেষ হোক। সরকার এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ালে অনেক উপকার হবে।’
তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বন্দরে বড় পরিসরে কমেছে আমদানি-রপ্তানি। লোকসান আশঙ্কায় বন্দর পরিচালনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না কোনো প্রতিষ্ঠান। সংকট উত্তরণে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চান বন্দর কর্মকর্তারা।
Advertisement
নগরবাড়ী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি ও আমদানিকারক ইমান আলী বলেন, ‘বন্দর নির্মাণ হওয়ায় আমাদের পণ্য আনা নেওয়ায় সুবিধা বেড়েছে। এখানে সার রাখার জন্য বাফার গোডাউন করা হয়েছে। আধুনিক সব সুবিধাই আছে। কিন্তু এখানে আশপাশের কয়েকটি ঘাটের তুলনায় খরচ কিছুটা বেশি। ফলে আমদানিকারকরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তবে অধিক পরিমাণ পণ্য আমদানি হলে খুব বেশি লস হবে না। এক্ষেত্রে সার, কয়লা ও পাথর আমদানিকারকদের সঙ্গে সরকার সমন্বয় করে নিলে ভালো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে নগরবাড়ীতে পণ্য আমদানি ব্যাপক কমে যাওয়ায় ইজারাদাররা লোকসানে পড়ছেন। ফলে ঘাট ইজারাও কেউ নিতে চাইছেন না।’
বিআইডব্লিউটিএ এর নগরবাড়ী-নরাদহ নৌবন্দর কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ‘নগরবাড়ী বন্দরে প্রতিদিন পণ্য খালাস হয় গড়ে দুই হাজার মেট্রিক টন। কাজ শেষ হলে যা করা যাবে অন্তত ২০ হাজার মেট্রিক টন। তবে দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তারা পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে কমিয়ে দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বন্দরে চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সব আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। জাহাজ থেকে সরাসরি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সম্ভব। কিছুদিন মংলা, চট্টগ্রামে কাজ করা বড় বড় বন্দর পরিচালনা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের এখানে কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছিল। কিন্তু পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় তারাও আর আসছেন না। ফলে আপাতত ইজারা পদ্ধতিতেই বন্দরের কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ‘তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো নতুন এ বন্দর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে খরচ অনেক বেড়েছে। কিন্তু এভাবে চললে বন্দরের সক্ষমতা কাজে আসবে না।’
আরএইচ/এমএস