চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার পর বুধবার (২৮ মে) থেকেই বন্ধ চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইও)। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শতাধিক যোদ্ধা হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তাদের খাবারের সরবরাহ করা হচ্ছে। এর বাইরে কোনো ধরনের সেবা চালু নেই। হাসপাতালের প্রধান ফটকটিও বন্ধ আছে।
Advertisement
এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দিতে কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটি গঠন করে ২৯ মে তারিখে দেওয়া এ সংক্রান্ত অফিস আদেশের একটি কপি রোববার (১ জুন) জাগো নিউজের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়, সম্প্রতি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট-এ উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে তদন্ত করার লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হলো। এই কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খোরশেদ আলম আহ্বায়ক, একই বিভাগের উপ-সচিব শাহাদাত হোসেন রাকিবকে সদস্য সচিব এবং সদস্য করা হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রলালয়ের প্রতিনিধি ও পরিচালক পর্যায়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধিকে।
বুধবার কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি করেন হাসপাতালটির চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জরুরি বিভাগ ছাড়া নিয়মিত অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে সব চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। যার কারণে ওইদিন সকাল থেকেই এ নিয়ে হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগী ও সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে স্টাফদের কথা কাটাকাটি হয়। বেলা সাড়ে ১১টার পর চিকিৎসক ও রেজিস্ট্রার মাহফুজ আলম বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। যাদের পূর্ব নির্ধারিত অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল, তাদের পরবর্তীতে ফোনে ডেকে এনে অস্ত্রোপচার করে দেবেন বলেন। এতেও সেবাপ্রার্থীরা নিবৃত হননি। তারা হইহুল্লোড় ও হট্টোগোল করেন। চিকিৎসক ও নার্সদের দিকে তেড়ে আসেন। এসময় আনসাররা তাদের নিবৃত করতে গেলে হাতাহাতি হয়। স্টাফ ও সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে মারামারিও হয়।
Advertisement
এ উত্তেজনা পুরো হাসপাতাল ছড়িয়ে পড়লে ভেতরের সব ওয়ার্ডের কলাপসিবল গেট আটকে তালা দিয়ে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। বিষয়টিকে নিজেদের জন্য আতঙ্কের বা আক্রমণ হতে পারে এমন আশঙ্কায় উল্টো তালা ভেঙে জুলাই যোদ্ধারা লাঠিসোঁটা, রড হাতে চিকিৎসক, স্টাফ ও সেবাপ্রার্থীদের এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন পঙ্গু হাসপাতালে থাকা জুলাই যোদ্ধারাও। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ ১৫জন আহত হন। আতঙ্কে বেশিরভাগ চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফই হাসপাতাল ছেড়ে যান। কেউ কেউ ভেতরে আটকে গেলেও সেনাবাহিনী এসে উদ্ধার করে। বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। কার্যত পুরো হাসপাতাল জুলাই যোদ্ধাদের দখলে চলে যায়। এরপর থেকেই হাসপাতালে যাচ্ছেন না চিকিৎসক, নার্সসহ স্টাফরা।
এসইউজে/এএমএ/এমএস