ঈদ ঘনিয়ে আসায় পশুর বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারিরা। খামারের পাশাপাশি এসব পশু বেচাকেনা হচ্ছে স্থানীয় হাট-বাজারেও। চলতি বছরে জেলায় কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় তিন লাখ পশু। এরমধ্যে জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত প্রায় এক লাখ গরু যাবে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে এখন পর্যন্ত গরুর দাম কম হওয়ায় বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে খামারিদের।
Advertisement
খামারিরা বলছেন, গত এক বছরে যে হারে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে, সে তুলনায় গরুর দাম বলছেন না ক্রেতারা। তাই সব দিক মিলিয়ে কিছুটা লোকসান গুনতে হতে পারে তাদের।
সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের ঘাষিয়া পড়া গ্রামের আবু বক্করের খামারে ১১৩টি গরু আছে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫ বছর আগে থেকেই গরু পালন করি। কিন্তু গরুর ব্যবসা মনে হয় আর ধরে রাখতে পারবো না। কারণ দিন দিন বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম। কিন্তু গরুর দাম তেমন বাড়ছে না।’
তিনি বলেন, ‘গতবছর এসময়ে অনেক গরু খামার থেকে বিক্রি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার ক্রেতার দেখা পাচ্ছি না। এবার ভারতীয় গরু ভেবে আটক করছে বিজিবি। তাই ঢাকায় নিয়ে যেতেও ভয় পাচ্ছি। আমরা তো এসব গরু গত ৬-৭ মাস আগে জেলার বিভিন্ন হাট থেকে সংগ্রহ করেছি। এখন এসব গরু যদি বিজিবি আটক করে তাহলে আমরা কোথায় যাবো?’
Advertisement
মহারাজপুর এলাকার খামারি আব্দুল আলিম বলেন, ‘গতবছর ঢাকায় গরু নিয়ে যাইনি। ঈদের ৮-১০ দিন আগে বেশ কিছু গরু খামারেই বিক্রি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার ক্রেতার দেখা পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজশাহী সিটি হাটে গরু বিক্রি করি। কিন্তু এবার শুনছি সেখানে ভারতীয় গরু বলে গরু ধরে নিয়ে যাচ্ছে বিজিবি। তাই ঈদে গরু বিক্রি নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছি।’
শ্যামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মৌসুমি বেগম। এবার ঈদে বিক্রির জন্য বাড়িতে তিনটি গরু পালন করছেন। তিনি বলেন, গ্রামেই এসব গরু বিক্রি করে দিই। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে গরুর ক্রেতা কম।
তিনি বলেন, ‘আমার তেমন গো-খাদ্য কিনতে হয় না। কারণ গরু বাড়িতেই থাকে। জমিতে ঘাস লাগানো আছে। সেখান থেকে খাবারের চাহিদা মিটে যায়। সে ক্ষেত্রে লাভবান হবো বলে আশায় আছি।’
Advertisement
শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ভিখু হাসান বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চাহিদা অনুযায়ী খামারে এবার মাঝারি গরু লালন-পালন করেছি। কোরবানির বাজারে মণপ্রতি ৩২-৩৫ হাজারের মধ্যে গরুগুলো বেচাকেনা করতে পারলে কিছুটা লাভ হবে।’
তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা আশা করছি খামারিরা এবার ন্যায্যমূল্যে গরু বিক্রি করতে পারবেন। তবে গরু আটকের বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তায় আছেন। বিষয়টি সমাধানে আমরা খামারিদের একটি সনদপত্র দিচ্ছি। এটি থাকলে আর সমস্যা হবে না।
গরু আটকের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ৫৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মনির-উজ-জামান জাগো নিউজকে বলেন, ভারতীয় গরু দেখে চেনা যায়। তাই প্রকৃত খামারিদের আশঙ্কার কোনোি কারণ নেই। তারা যে কোনো সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে গরু নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, শুধু ভারতীয় গরু আটক করা হবে। এটি খামারিদের জন্য সুফল বয়ে আনবে। আমরা চাই না প্রকৃত খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক।
এবছর জেলায় এক লাখ ৩৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে নিবন্ধিত ১৩ হাজর ৫২২টি বাণিজ্যিক খামারে গরু লালন-পালন করা হয়েছে দুই লাখ ৬৯১টি।
সোহান মাহমুদ/এসআর/জেআইএম