দেশজুড়ে

সড়কে ঈদ কাটে ২২ হাজার ট্রাকচালক-শ্রমিকের

সড়কে ঈদ কাটে ২২ হাজার ট্রাকচালক-শ্রমিকের

ঈদ মানেই ঘরমুখো মানুষের ভিড়। কিন্তু সে ঘরে ফেরা হয় না সিলেটের ট্রাক-পিকআপের চালকসহ অন্তত ২২ হাজার শ্রমিকের। পুরো শহর ফাঁকা হয়ে গেলেও নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। সড়কেই কাটাতে হয় ঈদ।

Advertisement

পরিবহন শ্রমিকদের তথ্যমতে, সিলেটে অন্তত পাঁচ হাজার ট্রাক-পিকআপ ও ডিআই ট্রাক রয়েছে। এসব পরিবহনের সঙ্গে ২২ হাজারের বেশি শ্রমিক যুক্ত রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১০ হাজারের কার্ড রয়েছে। বাকিদের কার্ড নেই। কিন্তু তারা গাড়ি চালানোর সঙ্গে যুক্ত।

সিলেট নগরীর কাজিরবাজার সবচেয়ে বড় ও স্থায়ী পশুর হাট। কোরবানির ঈদ এলে এ হাটকে ঘিরে কয়েক শতাধিক ট্রাক-মিনি ট্রাক, পিকআপ ভ্যান চালকের রোজগারের পথ তৈরি হয়। তাছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট ঘিরেও তাদের চোখ থাকে। এক হাট থেকে অন্য হাটে পশু আনা নেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকেন তারা।

কাজির বাজারে মিনি ট্রাকচালক কালাম মিয়ার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগ মুহূর্তে কাজিরবাজারের সামনের সড়কে শত শত ট্রাকচালক অপেক্ষা করেন ট্রিপের জন্য। নির্ধারিত কোনো ভাড়া থাকে না। দূরত্ব বুঝে ট্রিপ দিয়ে থাকেন।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘এ বাজারে বেশি ট্রাক আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তাদের হিসেবও ভিন্ন। তারা দিনে একাধিক ট্রিপ দেন। তাদের আয়ও বেশি।’

ঈদকে সামনে রেখে নগরীর কিনব্রিজ এলাকায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাকচালকরা। শনিবার সকালে ট্রাক চালক শাহীনুর ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ব্যস্ততা বাড়ে ঈদের দুদিন আগে থেকে। অনেকে শহর থেকে বড় বড় গরু কিনে গ্রামে কোরবানি দেন। একটি গরুর জন্য একটি মিনি ট্রাক লাগে। অনেকসময় একাধিক পশুও বহন করা হয়। একেক ট্রিপে একেক রকম আয় হয়।’

মিনি ট্রাকচালক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটের বাইরের ট্রিপগুলোর প্রতি নজর বেশি থাকে। তবে নগরীর ভেতরের ট্রিপও বেশি মিলে। সারা বছর ঈদ এলে আমাদের আয়ের পথ বাড়ে। তা না হলে কোনোমতে খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।’

আরও পড়ুন ঈদে ঘরে ফেরা নিয়ে শঙ্কায় ট্রাকচালকরা গরমে আয় কমেছে শ্রমিকদের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক-পিকআপে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ

তিনি বলেন, ‘ঈদের আগের রাতে সবচেয়ে বেশি ট্রিপ হয়। কখন রাত পেরিয়ে যায় বাড়ি ফিরতে। আবার কেউ কেউ পশু রাখার জায়গা না থাকায় ঈদের দিন সকালে ট্রাক দিয়ে পশু পরিবহন করে থাকেন। এ ধরনের ট্রিপ পেলে ঈদের নামাজ পথে-ঘাটে পড়তে হয়।’

Advertisement

চালকের সহকারী আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমরাতো গরুর সঙ্গে ঈদ করি। ঈদের দিনেও যদি মাল ডেলিভারি দিতে না পারি, তাহলে বেতনও ঠিকমতো পাই না। তাই কি আর করার আছে।’

দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেসব চালক পশু পরিবহন করেন তাদের জন্য বাড়ি ফেরা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ ঈদের এক-দুদিন পর ফাঁকা সময়ে ছুটি পান। তবে ততদিনে ঈদের আনন্দ অনেকটা ফিকে হয়ে যায়।

টাঙ্গাইলের ট্রাকচালক মতিউর রহমান বলেন, ‘১৪টি পশু নিয়ে সিলেটে এসেছি। এখান থেকে যাওয়ার পরে আকার কোথায় যাবো ঠিক নেই। এমনও হতে ঈদের দুদিন আগে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ট্রিপ পড়ে যেতে পারে। তখন আর ঈদের দিন বাড়ি ফেরা যাবে না।’

এ বিষয়ে সিলেট জেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুছ ছালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিলেটে প্রায় ৫ হাজার ট্রাকের সঙ্গে ২২ হাজার শ্রমিক যুক্ত রয়েছেন। ঈদ এলে তাদের ব্যস্ততা বাড়ে। কিছু বাড়তি আয়ও করতে পারে। কিন্তু তাদের জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে। অনেক জায়গায় চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। গরু ছিনতাই করে নিয়ে যায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও সে তুলনায় মজুরি নেই।’

সিলেট জেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি দিলু মিয়া বলেন, ‘ঈদের সময় যখন সবাই পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে, তখন দেশের এক শ্রেণির মানুষ পেশার দায়ে রাস্তায় কাটায় উৎসবের দিনগুলো। তাদের জীবনমান উন্নয়নে শ্রমিক সংগঠনগুলো কাজ করছে।’

আরএইচ/এএসএম