বিলকিস নাহার মিতু
Advertisement
বেশ কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর শালবাগানে একটি বনখেজুর বা ক্ষুদে খেজুর গাছ পাওয়া গেছে। ভিডিওটি দেখার সাথে সাথেই আমার মনে হলো, গাছটি কোথাও দেখেছি আমি। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলায়। সুন্দরবন কিছুটা কাছে হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ আমার চোখে পড়েছে। তার মধ্যে স্থানীয় ভাষায় ‘অ্যাতাল গাছ’ নামে একটি গাছ; যার বর্ণনা হুবহু এই বনখেজুর বা ক্ষুদে খেজুরের সাথে মিলে যায়।
আমাদের বাড়ির আঙিনায়ও বর্তমানে গাছটি আছে। ছোটবেলায় শুনতাম, অ্যাতালে বেতাল হয়। এ গাছের নিচে সাপ থাকে। তাই আমরা এর ধারে-কাছেও যেতাম না। ফেসবুকে ভিডিওটি দেখার পর খুলনা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে। দেখতে ছোট আকারের খেজুরের মতো। একই ছড়ায় ৪-৫ রঙের খেজুর দেখা যায়। যখন কাঁচা থাকে; তখন সবুজ রং একটু পরিপক্ব হলে হালকা হলুদাভ রং ধারণ করে। পরিপক্ব হওয়ার পর গাঢ় কমলা রং বা কিছুটা লাল রং ধারণ করে। যখন খেজুর পুরোপুরি পেকে যায়; তখন কুচকুচে কালো রং হয়। দেখতে পাকা জামের মতো লাগে।
দেখা ভিডিওতে শুনেছিলাম খেজুরটি বেশ মিষ্টি। তবে আমার বাড়ির আঙিনার খেজুরটি খেয়ে দেখলাম কিছুটা তেতো মিষ্টি স্বাদের। পেকে গেলে কালো রং ধারণ করলেও ভেতরের অংশ কিছুটা নীলাভ এবং বীজের আকৃতি গমের মতো। গাছের পাতা খেজুর গাছের মতোই। তবে খেজুর গাছের পাতা মোটা ও ভারী হয়। এ গাছের পাতা বেশ পাতলা ও চকচকে হয়। খেজুর গাছের পাতা সোজা অবস্থায় থাকে কিন্তু এ গাছের পাতা বেশ লম্বা ও ঢলে পড়ে। গাছের ডালের কাঁটাও খেজুর গাছের মতোই। কিন্তু খেজুর গাছের কাঁটাগুলো মোটা আকৃতির। এ গাছের কাঁটাগুলো সরু, চিকন ও পাতলা হয়ে থাকে।
Advertisement
আরও পড়ুন
কেমিক্যালমুক্ত মৌসুমি ফল পাবেন যেভাবে রাস্তায় ধান শুকানো ও খড় রাখায় সতর্কতা জরুরিপার্থক্য শুধু খেজুর গাছ মোটা আকৃতির আর এ গাছ সুপারি গাছের থেকেও চিকন হয়। গাছ ছোট অবস্থায় প্রচুর কাঁটা থাকলেও একটু বড় হলে কাঁটা দেখা যায় না। এর ডাল খেজুরের ডালের থেকে কম শক্ত হয়। ফলে সহজেই ভেঙে ফেলা যায়। এ গাছ একসাথে ৫-৬টি বাঁশঝাড়ের মতো ঝাড় আকারে লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসেই এ ফল পাকে। এর ছড়া কেটে ফেলার পরে ধীরে ধীরে পরিপক্ব ফলগুলো পেকে কালো রং ধরা শুরু করে।
গাছটির অনেক বর্ণনাই বিরলের শালবনে পাওয়া বনখেজুরের সাথে মিলে গেছে। তাই আমি চাই, আমাদের বাড়ির গাছটিও বন অধিদপ্তরের কেউ এসে পর্যবেক্ষণ করে দেখুক; এটি বনখেজুর গাছ নাকি অন্য প্রজাতির কোনো গাছ। আমাদের অঞ্চলেও গাছটি প্রায় নাই বললেই চলে। মায়ের কাছে শুনলাম, তারা ছোটবেলায় এর ফল খেয়েছেন। আমি কখনো খাইনি। অনেকে এ গাছের মাথা কেটে ভিতরের সাদা অংশ খান। যা মাতি নামে পরিচিত। সেটি খুবই মিষ্টি-নোনতা যুক্ত সুস্বাদু হওয়ার কারণে খেয়ে খেয়ে গাছগুলো কমিয়ে ফেলেছেন।
বন অধিদপ্তরের কাছে আমার আবেদন, গাছটি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হোক। কারণ এটি বনখেজুর যদি না হয়, তবে অ্যাতাল গাছ নামে পরিচিতি থাকলেও গাছটি বিলুপ্ত প্রায়। সংরক্ষণ করা হলে গাছটি টিকে থাকার সম্ভাবনা আছে। জেনে রাখা ভালো, বনখেজুর (ফিনিক্স অ্যাকোলিস, লাতিনে অ্যাকোলিস অর্থ ‘ডালবিহীন’) পাম পরিবারের একটি প্রজাতি। যার আদি নিবাস উত্তর ভারত, ভুটান এবং নেপাল। এটি পাম গাছের পরিবারের একটি সপুষ্পক বা ফুল ফোটানো গাছের প্রজাতি।
Advertisement
লেখক: শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
এসইউ/এমএস