কৃষি ও প্রকৃতি

উজাড় হচ্ছে বন, দিশেহারা প্রাণী

উজাড় হচ্ছে বন, দিশেহারা প্রাণী

ড. ফোরকান আলী

Advertisement

বন্যপ্রাণী বিশেষ করে বানর, হনুমান, হরিণ, হাতি, বাঘ, সাপ মাঝে মধ্যেই লোকালয়ে চলে আসে। ক্ষতি করছে সাধারণ মানুষের। সম্পদের ক্ষতির সঙ্গে কখনো বন্যপ্রাণীর নির্মম থাবায় মানুষের জীবনও চলে যাচ্ছে। হাতিসহ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাহাড়ি এলাকায় বুনো হাতির আক্রমণ বেড়ে গেছে। বুনো হাতির পাল বাঁশখালী, চন্দনাইশ এলাকায় বারবার হানা দিচ্ছে। চন্দনাইশ উপজেলার দুর্গম ধোপাছড়ি, জঙ্গল জামিজুরী, দোহাজারী, লালুটিয়া পাহাড়ি এলাকায় ১৫-২০টি বুনো হাতি একের পর এক আক্রমণ চালাচ্ছে। এতে শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, পেয়ারা বাগান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাঁশখালী উপজেলার গহীন অরণ্যেও বুনো হাতি দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, যে কোনো সময় হাতির পাল লোকালয়ে হামলা চালাতে পারে।

বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিগত দিনগুলোয় হাতির আক্রমণে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। তাছাড়া পটিয়া, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী ও লোহাগাড়া এলাকার হাজার হাজার পরিবার বুনো হাতির ভয়ে আতঙ্কিত। দক্ষিণ চট্টগ্রামের গহীন অরণ্যে বনদস্যু কর্তৃক বনের গাছ চুরি করায় উজাড় হচ্ছে বনজ সম্পদ। বন বিভাগের ও বন জায়গীরদারদের যোগসাজশে বনের কাঠ চুরির পাশাপাশি চাষিরা বনের জায়গায় তামাক চাষ করছেন। তামাক প্রক্রিয়াজাত করার জন্য জ্বালানি সংগ্রহের নিমিত্তে নির্বিচারে কাটছেন গাছ। তামাক ক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য স্থানীয় জলাশয়ের পানি ব্যবহার করে প্রাকৃতিক পাহাড়ি জলাশয়গুলো শুকিয়ে পানি সংকট সৃষ্টি করছে। এসব পাহাড়ি জলাশয়ে বন্য হাতি, বানর, শিয়াল, বন্য শূকরসহ নানা প্রাণী ও পাখি তৃষ্ণা মেটাতো। জলাশয়গুলোতে ডেরা গড়তো বন্য হাতি।

কয়েক বছর ধরে বন উজাড়, জলাশয় ধ্বংসসহ নানাবিধ অপকর্মে ভেঙে পড়েছে বনের খাদ্যশৃঙ্খল। খাদ্য ও পানির সংকটে পড়ে লোকালয়ে ছুটে আসছে হাতি। ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত হাতির পাল নষ্ট করছে পাহাড়িদের জুম ফসল, ঘরবাড়ি, পাকা ধান, সবজি ক্ষেত, পেয়ারা, কাঁঠাল, আনারসসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। লোকালয়ের মানুষ অবাঞ্ছিত এ উৎপাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য বন্য হাতিকে বাধা দিতে গেলেই হয় আহত, না হয় নিহত হচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে গহীন অরণ্যে হাতির অভয়ারণ্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বুনো হাতির আক্রমণের হার ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। বুনো হাতির আক্রমণে গত ২০ বছরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়, বাঁশখালী উপজেলার গহীন অরণ্যে ও লোকালয়গুলোতে নিহত হয়েছেন প্রায় ২০০ সাধারণ মানুষ এবং সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

Advertisement

অন্যদিকে মাদারীপুর, যশোর ও শরীয়তপুর জেলায় হনুমান খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবে নিজেদের বসবাস ও বিচরণের এলাকা ছেড়ে অহরহ লোকালয়ে এসে উৎপাত করছে। খাদ্যাভাবের কারণে নিজেদের এলাকা ছেড়ে খাদ্যের সন্ধানে আসতে বাধ্য হচ্ছে। হনুমান রক্ষার জন্য সরকার যে খাবার সরবরাহ করে, তাতে লোভী মানুষ ভাগ বসানোর ফলে হনুমান যা পাচ্ছে; তা যথেষ্ট হচ্ছে না। তাছাড়া মানুষের সীমাহীন লোভ-লালসা, অপরিণামদর্শিতা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নির্বিচারে গাছ কেটে বন উজাড় করে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করার ফলে বানর ও হনুমানের থাকার জায়গার অভাব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আবাস সংকটের কারণে জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসা ছাড়া উপায় থাকছে না। ক্ষুধার তাড়নায় বনের বাইরে এসে গৃহস্থদের ঘর থেকে এটা-ওটা নিয়ে পালায়। সামনে থেকেই সরিয়ে নেয় জিনিসপত্র, গাছের ফল ও ফসলের ক্ষতি করে। এতে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকে সময় ক্ষুধার্ত এসব হনুমানকে জীবন দিয়ে মানুষের সঙ্গে বাদরামির ঋণ পরিশোধ করতে হয়।

সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও সাপের উৎপাত বেড়েছে। খাদ্যের সন্ধানে বাঘ লোকালয়ে ঢুকে মানুষ ও গরু-ছাগলের ওপর হামলা চালাচ্ছে। হত্যা করছে গরু-ছাগল। তা না পেলে মানুষ যাচ্ছে বাঘের পেটে। এতে বনসংলগ্ন গ্রামের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বাঘের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ নাগালের মধ্য পেলেই পিটিয়ে হত্যা করছেন। ফলে সুন্দরবনে দিন দিন বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘গত একশ বছরে পৃথিবী থেকে প্রায় ৯৭ হাজার বাঘ হারিয়ে গেছে। বর্তমানে বেঁচে থাকা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বাঘ হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তা সহজেই অনুমান করা যায়।’ বন উজাড় ও বাঘ নিধনের ফলে বর্তমানে বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় বাঘ প্রথম দিকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রজাতিকে বাঁচানো না গেলে জীববৈচিত্র্যও রক্ষা করা যাবে না। রক্ষা পাবে না সুন্দরবন ও এর প্রাণিবৈচিত্র্য। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া, বন উজাড়সহ নানা কারণে হুমকির মুখে আছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। সেই সঙ্গে খাদ্যাভাব, নির্বিচারে বন্যপ্রাণী নিধন, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস প্রবণতায় গভীর সংকটে পড়েছে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। অথচ ২০০৮ সালের সিডর পরবর্তী আইলাসহ অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুন্দরবন রক্ষা করেছে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের মানুষকে। অথচ মানুষ অকৃতজ্ঞের মতো সেই বন ধ্বংসের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। বেসরকারি সংস্থা ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট বাংলাদেশের নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইসলাম বলেছেন, ‘যে হারে বাঘের প্রধান খাদ্য চিত্রা হরিণ কমে যাচ্ছে, তাতে বাঘ হারিয়ে যাওয়ার আগেই বিলুপ্ত হবে তাদের খাবার।’ সুন্দরবনে বাঘের শিকার প্রাণীদের মধ্যে চিত্রা হরিণ, শূকর, মায়া হরিণ ও বানর রয়েছে। এগুলোর সংখ্যাও দিন দিন কমছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশ বিপর্যয়, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, শিকারের অভাব ও সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ে খাল-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘ-মানুষে সংঘাত প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

অন্যদিকে মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে ইতোমধ্যে প্রকৃতি তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অসময়ে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নিত্যনতুন রোগ-ব্যাধিতে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলে প্রতিকূল পরিবেশে টিকতে পারছে না অনেক গাছপালা ও প্রাণী। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর নেচার কনজারভেশন সোসাইটি (আইইউসিএন) বাংলাদেশের প্রাণিজগতের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখিয়েছে, জীববৈচিত্র্যের প্রতি মানুষের বিরূপ কর্মকাণ্ড ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে পৃথিবীর প্রায় ২৫ শতাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

Advertisement

আরও পড়ুনকৃষকের কাঠের লাঙলের দেখা মেলে মাঠেবিষমুক্ত সবজি চাষে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ কৃষি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে স্থানীয় পাখির প্রজাতির সংখ্যা ছিল ৩৮৮ এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত এদেশে বসবাসরত পাখির প্রজাতি ছিল ২৪৪টি। এর মধ্যে ১২ প্রজাতির পাখি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরও ৩০ প্রজাতির পাখি অতিদ্রুত বিলুপ্ত হওয়ার পথে। দেশে একসময় ১১০ প্রজাতির পশুর বিচরণ ছিল। এর মধ্যে আইইউসিএন ৪০ প্রজাতিকে তাদের ‘রেড ডাটা বুকে’ অন্তর্ভুক্ত করেছে। দেশে ওষুধি, বনজ এবং ফলদসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি গাছপালা ছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইতোমধ্যে ১০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, একসময় দেশে ১৬৬ প্রজাতির মিঠা পানির এবং ৪৪২ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যেত। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে এসব মিঠা পানি ও সামুদ্রিক মাছের অনেক প্রজাতিই এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আইইউসিএন ৫৪ প্রজাতির মাছকে তাদের ‘রেড ডাটা বুক’-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দেশে পর্যাপ্ত বনভূমি থাকা একান্ত আবশ্যক। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো দেশের মোট এলাকায় ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক। বহুজাতিক সাহায্য সংস্থার সমীক্ষা ও বনায়ন মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট ৭৬৯ হাজার হেক্টর বা মাত্র ৬ শতাংশ এলাকা বনভূমি রয়েছে। তবে বন বিভাগের হিসেব অনুযায়ী, দেশে এখন বন এলাকার পরিমাণ ১১ লাখ হেক্টর অর্থাৎ দেশের ৭.৭ শতাংশ এলাকা বনভূমি রয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, পরিবেশগত দিক বিশেষ করে বনভূমির দিক থেকে আমরা চরম বিপদের মুখোমুখি রয়েছি।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিশ্বে প্রতি বছর ১০ লাখ হেক্টর পরিমাণ গ্রীষ্ণমণ্ডলীয় বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে। এক দশক ধরে এই পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ৭০ লাখ হেক্টরে। ওয়াশিংটনভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ওয়াচ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ লাখ হেক্টর বন হারিয়ে গেছে। যা বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে অনেক বেশি। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের সমস্যা অনেক। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বনজ সম্পদের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের বনভূমি চরম বিপদের সম্মুখীন। বাড়তি মানুষের আশ্রয় ও জ্বালানির বাড়তি চাহিদা পূরণে চাপ পড়ছে দেশের বন ও কৃষিজমির ওপর। সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারে চিংড়ি চাষের জন্য বনভূমি এলাকায় নতুন উৎপাত শুরু হয়েছে। গাছ কেটে বন উজাড় করে জমি দখল করা হচ্ছে। সমুদ্র উপকূলে গাছ কেটে মহানন্দে তৈরি করা হচ্ছে আবাসন প্রকল্পসহ হোটেল মোটেল মার্কেট। চকরিয়াসহ কক্সজারের একটি বৃহৎ এলাকার বন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এ বন ধ্বংসের জন্য মূলত দায়ী চিংড়ি চাষ। এতে এ অঞ্চলের বন ও পরিবেশ বিপদের মুখোমুখি হয়েছে।

ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলার ঐতিহ্যবাহী শালবন এখন প্রায় উজাড় হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যদি বনাঞ্চল নিধন, পাহাড় কাটা, নদীদখল, কলকারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলা, অধিক ফসলের আশায় মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারসহ নানা রকম প্রকৃতি বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হয়, এ প্রক্রিয়া চলতেই থাকে তাহলে বাংলাদেশের এক বিরাট এলাকা মরুভূমিতে রূপান্তরিত হবে। যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এসব কারণে গত ১০০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১০-২৬ সেন্টিমিটার। বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৩২ ভাগ উপকূলীয় এলাকা যেখানে প্রায় ৩ কোটি লোক বাস করে। পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রিয়লাল মুৎসুদ্দী ও এস কে গালিবের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৪৫ সেন্টিমিটার (দেড় ফুট) বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাংলাদেশের ১০-১৬ ভাগ উপকূলীয় ভূমি প্লাবিত হবে এবং প্লাবিত এলাকায় উৎপাদন ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে যে বিষয়টি সবচেয়ে উদ্বেগের, তা হলো ২০৮০ সালের মধ্যে ১১০ থেকে ৩০০ কোটি মানুষ ভয়াবহ পানি সংকটে পড়বে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। সহজ কথা হলো বন্যপ্রাণী বাঘ, হাতি, হনুমান, বানরের লোকালয়ে আগমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ বৃদ্ধি, ভূ-গর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি, নানা রকম নিত্যনতুন রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব প্রমাণ করছে জীববৈচিত্র্য স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। দিন দিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এ কারণে এখনই সচেতন হতে হবে। দেশের মানুষকে সব প্রকার লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে দায়িত্বশীল হয়ে রক্ষা করতে হবে দেশের প্রাকৃতিক জলাশয়, বনভূমি। সচেতন থাকতে হবে জল ও স্থলের কোনো প্রাণীর যাতে আবাস নষ্ট বা খাদ্য সংকট না হয়।

অধিক ফসল উৎপাদন ও তা রক্ষার জন্য ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে জৈব সার ও ভার্মি কম্পোস্ট। বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কৃষিকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিকূল অবস্থায় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। যাতে কৃষিজমি রক্ষা পায়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে যদি প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও কৃষিজমি রক্ষা করে খাদ্যের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা বিধান করা না গেলে, প্রস্তুত থাকতে হবে ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের জন্য। সবাইকে ভাবতে হবে আবাস ও খাদ্যের খোঁজে বন্যপ্রাণী তবু লোকালয়ে আসতে পারছে কিন্তু অনুরূপ সংকটে মানুষ যাবে কোথায়?

লেখক: গবেষক ও সাবেক অধ্যক্ষ।

এসইউ/জেআইএম