মো. কামরুল হাসান হৃদয়
Advertisement
২৫ মে, বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ – জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। বাংলা সাহিত্যের এই ক্ষণজন্মা পুরুষ একাধারে ছিলেন কবি, গায়ক, গীতিকার, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার এবং চিত্রশিল্পী। তবে সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রেম ও প্রতিবাদের কবি – বাংলা সাহিত্যের এক চিরজাগরুক বিদ্রোহী আত্মা।
প্রেমের কবি, বিদ্রোহের বংশীবাদককাজী নজরুল ইসলামকে আমরা অনেকেই ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবেই চিনি, কিন্তু তাঁর লেখনী ছিল ভালোবাসা ও প্রতিবাদের এক অপূর্ব সমন্বয়। তাঁর কলম যেমন গর্জে উঠেছে শোষণের বিরুদ্ধে, তেমনি কোমল হয়েছে প্রেমিকার চোখে, বিরহের বেদনায়।
তিনি নিজেই লিখেছেন, “আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি।” এমন কথা বাংলা কবিতায় দুর্লভ। আবার অন্যত্র তিনি বলে গেছেন, “আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেবো না ভুলিতে।” এক অনন্য সত্য যা নজরুলকে আজও আমাদের মাঝে জীবন্ত করে রাখে।
Advertisement
নজরুলের শৈশব কেটেছে দারিদ্র্য আর সংগ্রামের মধ্যে। খালিপেটে স্কুলে যাওয়া, লেটো দলে কাজ করা, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া – সব মিলিয়ে তাঁর জীবন ছিল এক চলমান অধ্যায়। কিন্তু সেই দুঃখকেই তিনি পরিণত করেন সাহস ও শিল্পে। তাই হয়তো তাঁর রচনা এত বাস্তব, এত তীব্রভাবে স্পর্শ করে আমাদের।
লক্ষ্মীপুরে নজরুলের স্মৃতিনজরুল শুধু কলকাতা বা ঢাকা নয়, এসেছিলেন আমার নিজের জন্মজেলা লক্ষ্মীপুরেও। ১৯২৬ সালে তিনি ছিলেন লক্ষ্মীপুর টাউন হলে। আজও সেই স্মৃতি জেগে আছে স্থানীয় মানুষদের কথায় ও শহরের বাতাসে। লক্ষ্মীপুরের এসআর রোডকে তাঁর নামে ‘কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক’ করার প্রস্তাব বহু আগেই উঠেছিল, কিন্তু তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এই অবহেলা আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার জন্য লজ্জার।
বহু প্রতিভার এক বিস্ময়কাজী নজরুল ইসলাম কেবল একজন কবি ছিলেন না, ছিলেন একাধিক শিল্পধারার পথিকৃৎ। তাঁর গানে ছিল রাগ-রাগিণীর মাধুর্য, তাঁর কবিতায় ছিল রাজনীতির স্ফুলিঙ্গ, গল্পে ছিল সমাজচিত্র, আর বক্তৃতায় ছিল বিদ্রোহের শাণিত যুক্তি।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এমন বহুমাত্রিক প্রতিভা খুব কমই এসেছে। তিনি ছিলেন আমাদের প্রেরণা, আমাদের সংগ্রামের ভাষা, আমাদের ভালোবাসার প্রতীক।
Advertisement
নজরুল আজও আছেন, আমাদের প্রতিবাদে, আমাদের ভালোবাসায়, আমাদের উচ্চারণে। আজকের প্রজন্ম যখন দেয়ালে লেখে ‘বিদ্রোহ চাই’, সেখানেও ঘুরেফিরে আসে নজরুল। তিনি কেবল ইতিহাসের মানুষ নন, তিনি বর্তমানের অনুপ্রেরণা।
তাঁকে স্মরণ করলেই হয় না, তাঁকে ধারণ করতে হয়। লালন করতে হয় তাঁর চেতনা, সাহস আর মানবতার বার্তা।
এএমপি/জিকেএস