একুশে বইমেলা

সত্তার কাছে চিরকুট: মরমি চেতনার ধারা

সত্তার কাছে চিরকুট: মরমি চেতনার ধারা

মাহমুদ নোমান

Advertisement

নিজের সাথে নিজের কথা বলাটাই কবিতা। নিজের ভেতরের কেউ বলে ক’বি (কইবি, বলবি); সেই বলাটাই বলতে গিয়ে একেক কবি একেকজন থেকে আলাদা হয়ে ওঠেন। অর্থাৎ অনুশীলন আর অনুশাসনের একটা সাঁকো পার হয়ে পরিবেশনায় আলাদা হয়ে যায়। নয়তো পৃথিবীর সব কবির একই ধরনের একটি কবিতা হয়ে যেতো। ভিন্ন ভিন্ন প্রেমিক-প্রেমিকাও হতো না। প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীর কত কবি নিত্যনতুন কবিতা লিখছেন, সেটি হতো না।

সম্প্রতি কবি হাইকেল হাশমীর ‘সত্তার কাছে চিরকুট’ কবিতার বইটি পড়তে পড়তে একটা ভাবনা উতরায়ে বেয়ে পড়লো—কবিতা তো মূলত সত্তার কাছে চিরকুট লেখা; আদতে হাইকেল হাশমীর লেখার মধ্যে মরমি চেতনাবাহী ধারা সদা বহমান। লালিত্য সুখ-দুঃখের অনুভূতির উদযাপিত সরলতার সূত্রে হাইকেল হাশমী কবিতা লেখেন। সহজাত উপমার যথাযথ উপস্থাপন। আলগা কোনো ফিকির নেই হাইকেল হাশমীর কবিতায়।

এ জন্যই বলতে পারি, হাইকেল হাশমীর কবিতা নিজস্বতার যোগে সত্তার কাছে পৌঁছে যাওয়ার নির্ভেজাল আকুতি। ‘সত্তার কাছে চিরকুট’ বইটি থেকে কয়েকটি কবিতার কিছু অংশ উল্লেখ করলে বুঝতে পারবেন—

Advertisement

ক.প্রিয় সত্তা,আশা করি ভালো আছো।আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলোতুমি কি কোনো দিন অনুভব করেছোনীরবতার শব্দ...তুমি কি কোনো দিন উপলব্ধি করেছোঅনুপস্থিতির উপস্থিতি...কেন আমার কথা মনে হচ্ছেকোন পাগলের প্রলাপ?কিন্তু ভেবে দেখোতুমি আমার মধ্যে উপস্থিত থেকেও অনুপস্থিত(পৃষ্ঠা-২৩)

খ.প্রিয় সত্তা,যদি কেউ মনে করেহৃদয়ের মাটিতেবিরহের বীজ বুনে গেলেদুঃখের ফসল ফলবেতা ঠিক নয়!সে তো জানে নাসে চলে গেছেকিন্তু তার স্মৃতির প্রজাপতিএখনো তাদের রঙিন পাখা মেলেআমার ভাবনার বাগানে উড়ে বেড়ায়।(পৃষ্ঠা-৯৫)

আরও পড়ুন

সারেঙ হেলাল হাফিজ সংখ্যা: উজ্জ্বলতম সংকলন কবি হারিসুল হক: শব্দের অনন্য জাদুকর

গ.প্রিয় সত্তা,মনের আকাশে ব্যথার নীল মেঘউড়ে বেড়ায় এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তেযদি খুঁজে পায় এক বিন্দু সুখ এই আশায়,সুখ তো মন-আকাশের শূন্যতায় বিলীনপাবে কোথায়?শূন্যতাই সকল বিষণ্নতার উৎসএই মহাবিশ্বের শূন্যতায় সূর্য, গ্রহ, তারাসবই তো নিঃসঙ্গআর শূন্যতার অর্থ নিজের ভেতরে ভাঙচুর।তাই থেকো না কোনো দিন নিঃসঙ্গবুঝলে হে আমার সত্তা।ইতি,তোমার আপন সত্তা(পৃষ্ঠা-৯১)

Advertisement

হাইকেল হাশমীর কবিতা পড়লে মনে হবে অনুবাদ কবিতা। কোনো দুর্বোধ্য ভাষার কবিতাকে ঝরঝরে বাংলায় লেখা কবিতা। ভাষার চলন-বলন সহজতর উপায়ে অন্তরাত্মার টিউন। শব্দ নিয়ে টানাহেঁচড়া নেই। আবার বলতে পারি, শব্দ নিয়ে খেলাটা সাবধানে খেলেন। এ জন্যই একটা কারণও আছে। হাইকেল হাশমী বেড়ে উঠেছেন ইংরেজি আর উর্দুর অক্ষরে; হাইকেল হাশমী বিখ্যাত প্রগতিশীল উর্দু ভাষার কবি নওশাদ নূরীর একমাত্র ছেলে। যার রক্তে মিশে আছে কবিতা যাপনের শৈল্পিক বিপ্লব।

উর্দু ভাষার বিহাগ, পীড়ন—সদাই শূল, হাইকেল হাশমীর কবিতাকে দিয়েছে সহজে মরমে পশে যাওয়ার ধনুক; কবিতা হওয়া আর না-হওয়া কিংবা কীভাবে হয় কেউ সংজ্ঞা অনুসারে বলতে পারে না। কিন্তু নিজের সত্তা কিংবা অন্তরাত্মাকে যে চিরকুট পাঠানো অথবা চিরকুট বুঝে নেওয়ার ব্যাপারটি মহত্তম কবিতা। কবি মূলত নিজেকে লেখেন, নিজের সত্তার জন্যই লেখেন।

বই: সত্তার কাছে চিরকুটকবি: হাইকেল হাশমীপ্রকাশনী: অভিযান পাবলিশার্সপ্রচ্ছদ: সৈয়দ ইকবালমূল্য: ২২০ টাকা।

এসইউ/এমএস