একুশে বইমেলা

বাঘ ও দৈত্য: রাইদাহ গালিবার বিস্ময়কর সৃষ্টি

বাঘ ও দৈত্য: রাইদাহ গালিবার বিস্ময়কর সৃষ্টি

রাইদাহ গালিবা এক বিস্ময়শিশু। তার ডাক নাম ‘কুইন’। বয়স আর কতইবা হয়েছিল? মাত্র ১২ বছরের জীবন নিয়েই সে উড়ে গেল পাখি হয়ে। রেখে গেলো বিস্ময়কর সৃষ্টি। সেই সৃষ্টির নাম ‘বাঘ ও দৈত্য’। শিশুতোষ গল্পের বই।

Advertisement

বিস্ময়শিশু রাইদাহ গালিবার অনন্য প্রতিভার প্রথম বিস্ময় ‘বাঘ ও দৈত্য’ গল্পটি। গল্পটি মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মুখে মুখে রচনা করেছিল। চর্যাপদের পদকর্তাদের মতোই মুখে সৃষ্ট গল্পটি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছিল। শেষে বড়দের নজরে আসে—ছোট্ট রাইদাহ সত্যিই একটি রূপকথা সৃষ্টি করে ফেলেছে। মাত্র ছয় বছর বয়সে ‘ধানশালিকের দেশে’ পৌঁছে যায় গল্পটি।

এভাবেই শুরু রাইদাহ গালিবার। একের পর এক সৃষ্টি করতে থাকে বিস্ময়কর গল্প। ফলে রাইদাহ গালিবাকে অনেকেই চিনতো নামের কারণে। মেধাবী রাইদাহ শুধু পরীক্ষায়ই ভালো ফলাফল করতো, তা নয়। দারুণ ছবিও আঁকতো। লিখতো মজার মজার সব গল্প। তা ছাপা হতো দেশসেরা ছোটদের পত্রিকা ‘শিশু’ ও ‘ধানশালিকের দেশে’।

বাঘ ও দৈত্যের একটি মজার ঘটনা লিখেছে রাইদাহ। গল্পের শুরুটা এমন, ‘এক দেশে ছিল এক সিংহ রাজা। মাঝে মাঝে সে খুব অসুস্থ থাকতো। অনেক ডাক্তার, অনেক হেকিম তাকে পরীক্ষা করেছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’ এভাবেই চমকপ্রদ শব্দের পর শব্দ বসিয়ে গল্প বলে গেছে রাইদাহ।

Advertisement

সিংহকে বাঁচাতে একটি বিশেষ ফল খাওয়াতে হবে। সেই ফল পাওয়া যাবে দৈত্যের বাগানে। দুটো হাতি, দুটো ভাল্লুক, দুটো গন্ডার আর তিনটি ঘোড়া যায় ফল আনতে। কিন্তু দৈত্য তাদের বন্দি করে ফেলে। তাদের ফিরতে না দেখে বুদ্ধিমান বাঘ যায় দৈত্যের কাছে। সবশেষে বাঘই কৌশলে তাদের উদ্ধার করে এবং গাছের ফল নিয়ে আসে।

আরও পড়ুন সবুজ জোনাকিটাকে খেয়ে ফেলেছে একটা দানব পাখি  স্বাতী তারা হয়ে জ্বলবে তুমি রাইদাহ 

এই গল্পের মাধ্যমে মাত্র পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ পায়। তার ভাবনা এবং পরোপকারিতার মনোভাব প্রকাশিত হয়। এই রূপকথার মধ্য দিয়ে রাইদাহ যে জীবন বাঁচানোর মন্ত্র শিখিয়েছে; সেই মন্ত্রেই যেন জীবন প্রদীপ নিভে গেল তারই।

রাইদাহ গালিবা রূপকথার গল্প লিখতে লিখতে নিজেই একদিন রূপকথা হয়ে গেল! ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সেরা ছাত্রী ও ক্লাস ক্যাপ্টেন রাইদাহ পড়তো ক্লাস ফাইভে। গালিবার হঠাৎ জ্বর এলে মা কানিজ পারিজাত সাথে সাথেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ভর্তি করেন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

মায়ের অভিযোগ, হাসপাতালের চিকিৎসকের অবহেলায় ফ্লুইড অব্যবস্থাপনা ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না দেওয়ায় স্থিতিশীল অবস্থায় শুরুতেই ভর্তির পরও দুইদিন পরই চিরতরে হারিয়ে যেতে হয় রাইদাহকে। সাহসী, সৎ ও শুভ চিন্তার রাইদাহ অনেক স্বপ্ন দেখতো, সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো।

Advertisement

স্বপ্নপূরণের আগেই হারিয়ে গেলো রাইদাহ। হারিয়ে গেলেও শিশু-কিশোরদের জন্য রেখে গেছে তার ক্ষুদ্র জীবনের অনন্য সব সৃষ্টি। ‘বাঘ ও দৈত্য’ গত বইমেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিশুপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হলেও রাইদাহ কোনোদিন বইটি ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। তার বইটি এখন অন্য শিশুর হাতে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

রাইদাহ গালিবা ভালো থাকুক পরপারে। তার ক্ষুদ্র জীবনের বিস্ময়প্রতিভার প্রথম নিদর্শন ‘বাঘ ও দৈত্য’ ছোটোরা পড়বে। পড়বে তার প্রকাশিত বইগুলো—‘এক যে ছিল মুচি’, ‘পিটুর জাদু জুতা’, ‘ইমা ও দৈত্য’, ‘আন্ডোরে রাজ্যের কাহিনি’ এবং ‘ভয়ংকর গাছ’। তাদের প্রিয় রাইদাহকে ভালোবাসবে—মনে রাখবে।

এসইউ/জিকেএস