মাকে কেন্দ্র করে অনেক উপন্যাস লেখা হয়েছে। তবে বাংলা উপন্যাসে দুই ‘জননী’ এখনো পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। একটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জননী’, অন্যটি শওকত ওসমানের ‘জননী’। এই দুই জননীই বাংলা ভাষি পাঠকের হৃদয় জয় করেছে। ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়।
Advertisement
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জননী’শক্তিমান এই লেখকের অমর কীর্তি ‘জননী’ নামের মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। যার প্রকাশকাল ১৯৩৫। এটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস, যা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। শ্যামা নামে এক গৃহবধূর জননী সত্তার বহুবিধ আত্মপ্রকাশ এই উপন্যাসের উপজীব্য।
উপন্যাসে লেখক জননী চরিত্রটিকে স্বর্গীয় বা দৈবিক মহিমায় ভাস্বর করেননি। এক জননীর কাহিনি বাস্তবতার আয়নায় তুলে ধরেছেন। উপন্যাস বললে বরং ভুলই হবে, এ যেন প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চিরন্তন ঘটে যাওয়া মানব জীবনের চক্রেরই স্বার্থক খণ্ডচিত্র।
আরও পড়ুন থাকার জন্য সবাই আসে না: বিষাদের সুর বাজে মেঘনার মেয়ে: প্রেমের কবিতায় যাত্রাশওকত ওসমানের ‘জননী’শওকত ওসমানের ‘জননী’ উপন্যাসটি সম্ভবত তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। এটি একটা কালজয়ী উপন্যাসই বটে। উপন্যাসের মূল চরিত্র দরিয়াবিবি। তবে দরিয়াবিবির দ্বিতীয় স্বামী কিংবা পাঠকের সামনে হাজির করা একমাত্র স্বামী ও তার পূর্বপুরুষদের ইতিহাসও কম আসেনি।
Advertisement
এমনকি লেখক তার মূল উপন্যাস শুরুর আগেই দরিয়াবিবির স্বামী পরিবারে অতীতের গৌরবান্বিত উপাখ্যানের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। দরিয়াবিবি আর আজহারের জীবন কাহিনির পাশাপাশি এ উপন্যাসে পল্লি পরিবেশে নব জীবনের নানা ভাঙা-গড়া, অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ, অন্তর্দাহ ও নানা নিপীড়নের বাস্তবচিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
একটি জায়গায় উপন্যাস দুটির দারুণ মিল। সেটা হলো দুটি উপন্যাসই লেখকদ্বয়ের প্রথম উপন্যাস। তারা দুজনই প্রথম উপন্যাসের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছেন। এক ‘জননী’ শওকত ওসমানের মানবতাবাদী চেতনাপ্রবাহের ঔপন্যাসিক শিল্পরূপ। অন্য ‘জননী’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মনস্তাত্ত্বিক চেতনাপ্রবাহের শিল্পরূপ।
এসইউ/জিকেএস
Advertisement