মওলবি আশরাফ
Advertisement
হজ বেশ পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত। তাই সুন্দরভাবে হজ পালনের জন্য সুস্থ থাকা জরুরি। হজের সফরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে হজের বিধানগুলো পালন করা অসম্ভব বা কষ্টকর হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। তাই হজের সফরে নিজের শরীর ও স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।
নবিজি (সা.) সাহাবিদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থেকে ইবাদতের পরামর্শ দিতেন। আমর (রা.) বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, আমাকে জানানো হয়েছে, তুমি সারা রাত জেগে ইবাদত কর আর দিনে রোজা রাখ? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি এটা করে থাকি। তিনি বললেন, এমন করতে থাকলে তোমার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার পরিবার পরিজনেরও হক আছে। তাই তুমি রোজা রাখবে এবং বাদও দেবে। রাতে জেগে ইবাদাত করবে এবং ঘুমাবেও। (সহিহ বুখারি: ১১৫৩)
হজে যাওয়ার আগে করণীয়
Advertisement
১. স্বাস্থ্য পরীক্ষা
হজের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগেই মেডিকেল চেকআপ করিয়ে নিতে হবে। কারও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাঁপানি বা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদী রোগ থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও ওষুধ নিতে হবে। নিজের সাথে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ও মেডিকেল রিপোর্টের কপি রাখতে হবে।
২. প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা
রোগী তো অবশ্যই পর্যাপ্ত ওষুধ, ইনসুলিন, সিরিঞ্জ, গ্লুকোমিটার, তুলা, ডিপস্টিক প্রভৃতি আলাদা প্লাস্টিকের বাক্সে রাখতে হবে। সেই সাথে বিপদকালীন ডাক্তারের সাথে যেন দ্রুত যোগাযোগ করতে পারে সেই ব্যবস্থাও রাখা উচিত। সুস্থ মানুষেরও ফার্স্ট এইড কিট সাথে রাখা উচিত বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধ, স্যালাইন, পেটের ও গ্যাসের ওষুধ, ব্যান্ডেজ ও কটন, জীবাণুনাশক ও অ্যান্টিসেপটিক এবং হজমের ট্যাবলেট ও ওআরএস স্যালাইন।
Advertisement
৩. মানসিক প্রস্তুতি
হজে প্রচণ্ড ভীড় থাকে, সেই সাথে তীব্র গরম। বিশ্রামের জায়গা নেই, একটানা দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে হবে, দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। ঠিকঠাক ঘুম হবে না, অনেক ভোগান্তি হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে হবে। এসব কষ্ট সহ্য করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
হজের সময় করণীয়
১. প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে রাখা
সৌদি আরবের আবহাওয়া অত্যন্ত গরম ও শুষ্ক হয়ে থাকে। এ কারণে সব সময় সাথে ছাতা রাখতে হবে। গরমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়, যা ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে। এ জন্য সব সময় ২ লিটারের একটি পানি বোতল রাখতে হবে, পানি শেষ হলেই আবার পূর্ণ করতে হবে। গ্লুকোজ, চিনি, বিস্কুট ও খেজুর জাতীয় খাবার সব সময় সাথে রাখতে হবে। মানসম্পন্ন স্যান্ডেল ব্যবহার করতে হবে যেন দীর্ঘক্ষণ হাঁটলে পায়ে ফোস্কা না পড়ে। একাধিক স্যান্ডেল সাথে রাখতে হবে।
২. নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
অনিয়মিত খাবার অনেক সময় পেটে সমস্যা সৃষ্টি করে, তাই নিয়মতান্ত্রিক খাবার খেতে হবে। রাস্তার পাশের খাবার, ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তৈলযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না, এতে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাওয়াফ, সাঈ, কংকর নিক্ষেপ, কোরবানি ও অন্যান্য অতিরিক্ত পরিশ্রমের জায়গায় যাওয়ার আগে কিছু খেয়ে নেওয়া ভালো।
৩. পর্যাপ্ত ঘুমানো ও শরীরের যত্ন নেওয়া
ইবাদতে শক্তি রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। অতিরিক্ত নফল ইবাদতের চেয়ে ফরজ ও ওয়াজিব ইবাদত যথাযথভাবে আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।
৪. দুশ্চিন্তা না করা
পেরেশানিতে থাকা যাবে না। সবকিছু তো আর চাওয়ামাফিক হয় না, তা সম্ভবও না। হজযাত্রী আল্লাহর মেহমান, আর মেহমানের জন্য যা ভালো আল্লাহ তাআলা সেই ব্যবস্থাই করবেন।
৫. অধৈর্য হওয়া যাবে না
অনেকেই একটু এদিক-সেদিক হলেও ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন, কখনও-বা ঝগড়া-বিবাদ করেন। এসব মোটেও করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, যে নিজের উপর হজ আরোপ করে নিল, তার জন্য হজে অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়। (সুরা বাকারা: ১৯৭)
এ বছর যারা হজ পালন করবেন, তাদের সবাইকে আল্লাহ তাআলা সুস্থ শরীরে উত্তমভাবে হজ পালনের তওফিক দিন!
ওএফএফ/জেআইএম