মওলবি আশরাফ
Advertisement
আল্লাহর আজাবে যখন আদ জাতি ধ্বংস হয়ে যায়, কয়েকজন ইমানদার মানুষ সেই আজাব থেকে বেঁচে ফেরেন। তারাই এসে বসতি গড়েন মাদায়েনে সালেহ এলাকায়; তাদের বংশধররাই সামুদ জাতি।
যেহেতু তারা স্থাপত্যশিল্পে পারদর্শী ছিলেন, এই অঞ্চলেও পাথর কেটে বাড়ি বানান। তাদের বংশধররাও স্থাপত্যশিল্পে পারদর্শী হয়। কয়েক প্রজন্ম পরে তারা যখন শিরক করতে শুরু করে, আল্লাহ তাদের কাছে হযরত সালেহকে (আ.) প্রেরণ করেন। তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দেন, যিনি পাহাড় কেটে প্রাসাদের মতো ঘর বানানোর তওফিক দিয়েছেন তার অনুগ্রহ স্বীকার করতে বলেন এবং ফাসাদ সৃষ্টি না করার পরামর্শ দেন। (সুরা আ’রাফ: ৭৪)
কিন্তু তারা হযরত সালেহের (আ.) দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে, এবং আল্লাহর নাফরমানি করে যায়।
Advertisement
কাফেরেরা যখন দেখল তাকে কোনোভাবেই নিরস্ত করা যাচ্ছে না, তখন অদ্ভূত এক আবদার করে বসল। তারা ভেবেছিল হজরত সালেহ (আ.) কখনোই এই আবদার পূরণ করতে পারবেন না, এর পরে তাদের আর দাওয়াতও দেবেন না। তারা হজরত সালেহকে (আ.) বলল, আপনি সত্যি সত্যিই আল্লাহর পয়গম্বর হন, তাহলে ওই পাহাড় থেকে একটি সুস্থ-সবল ও দশ মাসের গর্ভবতী উট বের করে দেখান।
সালেহ (আ.) প্রথমে তাদেরকে অঙ্গীকার করতে বললেন—যদি আমি তোমাদের আবদার পূরণ করি, তবে আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে। তারা সবাই অঙ্গীকার করল।
এরপর সালেহ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করলে বিকট শব্দে পাথর ফেটে মাদি উট বের হয়, সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্চা প্রসব করে। কিন্তু এত বড় মুজিজা দেখেও তারা ইমান আনেনি। বরং কিছুদিন পর তারা ওই মাদি উট এবং তার বাচ্চাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। (তফসীরে মাআরেফুল কোরআন, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৫৩৯-৫৪০, প্রকাশনী: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
আল্লাহর আজাবহযরত সালেহ (আ.) তখন অশ্রুভরা চোখে তার জাতিকে বললেন, হে দুর্ভাগা জাতি, তোমরা কি ধৈর্য ধরতে পারলে না? এখন আল্লাহর আজাবের অপেক্ষায় থাকো।
Advertisement
এর তিনদিন পর অবধারিত শাস্তি আসে—এক বিকট আওয়াজ হয়, সেই আওয়াজে যে যেই অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করে। (কাসাসুল কুরআন, মাওলানা হিফযুর রহমান সিওহারবি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬৬, প্রকাশনী: মাকতাবাতুল ইসলাম)
হজরত সালেহের (আ.) দাওয়াতে যে কয়জন ইমান গ্রহণ করেছিলেন, আল্লাহর নির্দেশে তাদের নিয়ে সালেহ (আ.) নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
হজের সফরে সামুদ জাতির ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া উচিত?৯ম হিজরিতে রসুলে পাক (স) যখন রোমান বাহিনীর সম্ভাব্য হামলার মোকাবেলায় তাবুক অভিযানে বের হন, পথিমধ্যে এই অঞ্চল পড়ে। রসুল (স) তখন সাহাবিগণের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছিল, তোমরা তাদের আবাসভূমিতে প্রবেশ কোরো না—যতক্ষণ না তোমাদের চোখে অশ্রু ঝরে। কারণ, হতে পারে তাদের ওপর যে আজাব এসেছিল তোমাদের ওপরও তা আসবে। (সহিহ বুখারি: ৩৩৮১)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, রসুল (স) সাহাবিদের নির্দেশ দেন—তোমরা এই কুয়ার পানি পান কোরো না, এখান থেকে পানি উঠিয়ো না। তারা বললেন, আমরা তো ইতোমধ্যে সেই পানি দিয়ে আটা মেখে ফেলেছি এবং পানি উঠিয়েছি। তখন তিনি তাদের নির্দেশ দিলেন—সেই মাখা আটা ফেলে দাও এবং সেই পানি ফেলে দাও। (সহিহ বুখারি: ৩৩৭৮)
এসব হাদিসের আলোকে ওলামায়ে কেরাম বলেন, শখের বশে মাদায়েনে সালেহে ঘুরতে যাওয়া মোটেও উচিৎ নয়, ওটা ট্যুর করার জায়গা নয়। কোনো কারণে যেতে হলে অন্তরে ভয় ও চোখে পানি নিয়ে যেতে হবে।
ওএফএফ/জেআইএম