ধর্ম

হজ: আহ্বান, সাড়া ও আত্মার অভিযাত্রা

হজ: আহ্বান, সাড়া ও আত্মার অভিযাত্রা

মুফতি আব্দুল্লাহ আমান

Advertisement

হজ ইসলামের মৌলিক ৫টি স্তম্ভের অন্যতম একটি। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ বা অবশ্যকর্তব্য। আরবি জিলহজ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ—এ পাঁচ দিনই মূলত হজের নির্ধারিত সময়। এ দিনকটিকে সামনে রেখে বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বিগন হজের উদ্দেশে কাবার দিকে যাত্রা করেন। 

কাবার দিকে ধাবমান লক্ষ কোটি হৃদয়ের এই যাত্রা কেবল ভ্রমণ নয়, এটি এক মহিমান্বিত আরাধনা। হজের সূচনা হয়েছিল ইসলামের আবির্ভাবেরও কয়েক হাজার বছর আগে। আল্লাহর নবি ও খলিল ইবরাহিমের (আলাইহিস সালাম) কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল হজের আজান। কাবা নির্মাণের পর আল্লাহর নির্দেশে তিনি জনমানবশূন্য মরু প্রান্তর মক্কার আবু কুবাইস পাহাড়ে আরোহণ করেন। দুই কানে আঙুল রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ করে চিৎকার করে ঘোষণা দেন, ‘হে মানমন্ডলী, আল্লাহ তোমাদের এই ঘরের হজ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তিনি তোমাদের জান্নাত দিতে পারেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে পারেন। সুতরাং, তোমরা হজ করো।’

ইমাম বাগাভি ইবনে আব্বাসের (রা.) এর সূত্রে বলেন, হজরত ইবরাহিমের (আলাহিস সালাম) এই আহ্বান আল্লাহ সাথে সাথে বিশ্বের সকল প্রান্তে মানুষের কানে কানে পৌঁছে দেন।

Advertisement

এ আহ্বানের প্রতিধ্বনি আজও মক্কার আকাশে ভাসে, ধ্বনিত হয় প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ে। এই ডাক কেবল কান দিয়ে শোনা যায় না, এটি হৃদয়ের গভীর থেকে জেগে ওঠা এক অলৌকিক অনুভব।

হজ আমাদের শেখায় আত্মসমর্ণ, ত্যাগ আর ঐক্যের অনুপম পাঠ। পৃথিবীর নানা প্রান্তের রঙিন সব মুখাবয়ব, ভিন্ন ভাষা আর সংস্কৃতির মানুষ একই সাদা ইহরামে আবৃত হয়ে দাঁড়ায় এক কাতারে। এখানে ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, শ্বেত-শ্যাম ও কৃষ্ণবর্ণ সবার পরিচয় একটিই—আমি মুসলিম, আমি আল্লাহর বান্দা।

এ পবিত্র অভিযাত্রার প্রতিটি ধাপে আছে গভীর শিক্ষা। ইহরামের সঙ্গে জীবনের বিলাসিতা আর অহংকারকে ঝেড়ে ফেলা, সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানোতে হাজেরার (আলাইহাস সালাম) অবিচল আস্থার স্মরণ, আরাফাতের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে মুমিনের অন্তর যেন ছুঁয়ে দেখে মহান রবের করুণার বিশাল সাগর‌। সেদিন ফেরেশতারা নেমে আসে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন—এটি কি আর কেবল আর এক দিনের ঘটনা; বরং জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক আলোকিত অধ্যায় নিঃসন্দেহে।

হজ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দুনিয়া হলো এক সাময়িক সফর আর প্রকৃত গন্তব্য আল্লাহর সান্নিধ্য। যারা হজে যেতে পারেনি, তারাও এ দিনগুলোতে হজর শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করি—আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ, ক্ষমা প্রার্থনা এবং পরম করুণাময়ের সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্ক্ষায় নিজেকে গড়ে তুলি। হোক আমাদের জীবনেও এক নিরবচ্ছিন্ন লাব্বাইকের প্রতিধ্বনি:

Advertisement

লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক! লাব্বাইবা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক! ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়াল মুলকা, লা শারিকা লাক।

আপনার দরবারে আমি হাজির হে আল্লাহ! আপনার কোনো শরিক নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও নেয়ামতরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই।

ওএফএফ/জেআইএম