কামরুল হাসান হৃদয়
Advertisement
দুই জ্যৈষ্ঠ ভোর। লক্ষ্মীপুর শহর তখনো নিদ্রায়। কিন্তু নয়জন অভিযাত্রী ঘুম হারিয়ে নিয়েছেন এক ভিন্ন খোঁজে। ফজরের নামাজ শেষে ঝুমুর এলাকা থেকে রওয়ানা—লক্ষ্য মেঘ, পাহাড় আর অনন্ত প্রকৃতির রাজ্য সাজেক ভ্যালি।
চোখের সামনে তখনো কিছুই স্পষ্ট নয়, কিন্তু মনে এক ছবি ঠিকরে বেরোচ্ছে—সবুজ পাহাড়, ধোঁয়া ওঠা মেঘ আর হিমেল বাতাস। নয় সদস্যের সেই টিমে ছিলেন রিয়াজুল ইসলাম, রেবেকা, সানজিদা, ইয়াসমিন, নাহিদ, পিংকি, হৃদয় এবং সাথেই দুই শিশুমণি—নওশাবা ও আয়েশা।
স্টার লাইন বাসে চেপে প্রথমেই পৌঁছে গেলাম ফেনীর মহিপাল। সেখান থেকে হালকা নাস্তা সেরে শুরু দীর্ঘ পথচলা—খাগড়াছড়ির দিকে। ঘুম, ক্লান্তি আর উত্তেজনার দোলাচলে পথ যেন এক অনির্বচনীয় কবিতা হয়ে ওঠে।
Advertisement
আঁকাবাঁকা পথ, উঁচু-নিচু বুক ধুকপুক খাগড়াছড়ি পৌঁছাতেই অপেক্ষা করছিল আরেক রোমাঞ্চ—চান্দের গাড়ি। পেট্রোলের গন্ধ মেশানো পাহাড়ি হাওয়ায় যেন লুকিয়ে ছিল অন্যরকম এক টান। উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ, বাঁক নিলেই চোখের সামনে খোলস পাল্টায় প্রকৃতি—কখনো ঝুঁকে পড়া সবুজ বনানী, কখনো গভীর খাদ আর তার পাশ দিয়ে হেলে-দুলে এগিয়ে চলা চান্দের গাড়ি।
দূর থেকে দেখা যায় ছোট ছোট পাহাড়ি ঘর, পাহাড়িদের অনাড়ম্বর জীবন। চলার পথে বিজিবি, সেনাবাহিনী আর পুলিশের চেকপোস্ট—সবই পর্যটকের নিরাপত্তায় পাহারা দিচ্ছে যেন সাজেক নিজেই।
আরও পড়ুনদুইদিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন নেত্রকোনাদুদিনের ছুটিতে কুয়াকাটায় যা যা দেখবেনসাজেক—মেঘের রাজ্যে পদচারণাতিন ঘণ্টার যাত্রা শেষে মেঘে মোড়া, পাহাড়ে বাঁধা, রূপকথার মতো এক জায়গায় এসে পৌঁছালাম—সাজেক ভ্যালি। রিসোর্টের কাঠ ও বাঁশের গাঁথুনিতে পাহাড়ের ছোঁয়া। শুক্র-শনিবারে ভিড় আর চাহিদা বেশি, তাই দরদাম করে জায়গা নেওয়া হলো এক পাহাড়চূড়ার রিসোর্টে। এরপর শুরু হলো প্রকৃতির সাথে মিতালি।
দুপুরের খাবার শেষে আমরা পাড়ি দিলাম কংলাক পাহাড়ে। পথের দুপাশে দোকান পেতেছেন পাহাড়ি নারী-পুরুষ, হস্তশিল্প আর মুখরোচক খাবারে সাজানো টেবিল। পেছনে তাকালেই মেঘ, সামনে তাকালেই পাহাড়। এক স্বর্গীয় অনুভূতি, যেখানে হাত বাড়ালেই মেঘ ছুঁয়ে যাবে মনে হয়।
Advertisement
বৃষ্টির ছোঁয়া, শীতের চাদরপরদিন সকালে হঠাৎ ঝেঁপে নামে বৃষ্টি। সাজেকের বৃষ্টি যেন ধুলো ঝেড়ে ফেলে প্রকৃতিকে আবার নতুন করে সাজিয়ে দেয়। পিংকি শাড়ি পরে বৃষ্টির আগে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিল, ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি হলো সানজিদা, আয়েশা, নওশাবাও। রিয়াজ স্যার, নাহিদ আর পিংকু ভিজে গেলো স্বতঃস্ফূর্ত হেসে। একপর্যায়ে চারদিক ঢেকে গেলো কুয়াশাসদৃশ মেঘে—যেন জ্যৈষ্ঠে নেমে এলো মাঘ মাসের শীত।
পাহাড়ে ফিরে দেখা প্রাণফেরার পথে আবার সেই চান্দের গাড়ি। চোখে পড়লো ফেব্রুয়ারিতে আগুনে পোড়া কিছু রিসোর্ট—এখন আবার দাঁড়িয়েছে নতুন রঙে, নতুন প্রাণে। চারপাশে গাঢ় সবুজে ঢেকে আছে পাহাড়ের বুক, মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে মেঘ। সাজেক যেন প্রতিদিন নতুন করে গড়ে ওঠে, প্রতিদিন নতুন প্রেমে ফেলে দেয়—এই দেশ, এই প্রকৃতি।
একটা না-পাওয়ার গল্পসবই ছিল। পাহাড়, মেঘ, বৃষ্টি, খাবার, মানুষ—সব। শুধু একটা না-পাওয়ার গল্প রয়ে গেলো—‘ইস, ব্যাম্বো টি খাওয়া হলো না!’ তবে তাতে কী? সাজেক আবার ডাকবে। আর ব্যাম্বো টি তো তখনো অপেক্ষায়।
এসইউ/জেআইএম