ভ্রমণ

কাপ্তাইয়ে ভ্রমণের নতুন স্পট ‘গরবা গুদি’

কাপ্তাইয়ে ভ্রমণের নতুন স্পট ‘গরবা গুদি’

সাফিনাতুন জাহান সাবরিন ও আরিফুল ইসলাম তামিম

Advertisement

কাপ্তাইয়ের সৌন্দর্য আমাদের দেখা। ব্যস্ততা থেকে একটু স্বস্তি নিতে আমরা কাপ্তাই ছুটে যাই। চট্টগ্রাম শহর থেকে কাছে হওয়ায় পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে কাপ্তাই। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে সময় কাটাতে কার না ভালো লাগে। ব্যস্ততার জন্য আমাদের সাংবাদিতা বিভাগের স্টাডি ট্যুরটিও সময়মতো হয়ে ওঠেনি। হঠাৎ করে বিভাগের চেয়ারম্যান ঘোষণা দিলেন এ মাসের মধ্যে ট্যুর আয়োজন করতে হবে। তা-ও আবার এক সপ্তাহের মধ্যে। এর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় সাংবাদিকতা বিভাগের মিডিয়া ক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্যদের।

আমাদের গন্তব্য ঠিক করা হয় কাপ্তাই। কিন্তু কাপ্তাইয়ে নতুন স্পট খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ আমাদের মধ্য থেকে একজন বলেন ‘গরবা গুদি’র কথা। যেটি বর্তমানে কাপ্তাইয়ের পর্যটনের এক নতুন ঠিকানা। সেখানে যাওয়ার পর তরুণ উদ্যোক্তা নিলা চাকমা আমাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।

সেখানে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল এটি সবার জন্য নতুন। লেকের মাঝে ছোট একটি দ্বীপ। আর সেই ছোট দ্বীপটি গরবা গুদি নামে পরিচিত। গরবা গুদি মূলত একটি বাড়ি। বাড়িটি হচ্ছে আদিবাসী নিলা চাকমার। যিনি নিজের বসতবাড়িকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে তিনি উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন। তার উদ্যোগে নিজের বাড়িকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে মানুষ আসে সৌন্দর্য দেখতে।

Advertisement

লেকের মাঝে ছোট একটি দ্বীপ। নেই কোনো কোলাহল। শান্ত পরিবেশে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। নিলা চাকমার আতিথেয়তা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এখানে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া নেই। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘরে বসে পাহাড়ি খাবারের পাশাপাশি লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করা যেন স্বর্গীয় অনুভূতি। পাহাড়ি বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি লেকের তাজা মাছও পাওয়া যায়।

গরবার বিশাল জায়গাজুড়ে আছে লিচু বাগান। লিচুর মৌসুমে এখান থেকে লিচুও কেনা যায়। নিলা চাকমা তরুণদের জন্য একজন আইডলও বটে। তিনি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান। উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করারও পরামর্শ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে রঙিন মুহূর্ত তৈরি হয় এই ট্যুর, ফেস্ট এবং বিভিন্ন আয়োজনে। একাডেমিক চাপের বাইরে আয়োজনগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে বন্ধন গড়ে তোলে, স্মৃতির পাতায় যোগ করে আনন্দময় অধ্যায়। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে গত ৩ মে ৮৭ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিয়ে মিডিয়া ক্লাবের প্রথম ট্যুর অনুষ্ঠিত হয় কাপ্তাইয়ের এই গরবা গুদিতে।

আরও পড়ুন রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে যা দেখবেন  নিরাপদ ভ্রমণে সড়কে শৃঙ্খলা আনা জরুরি 

সকাল ৭টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পর যাত্রা শুরু হয়। বাসে উঠেই গান, হাসি, নাচে মেতে ওঠেন সবাই। প্রথম গন্তব্য ছিল কাপ্তাই জেটিঘাট। রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে যাত্রা এগিয়ে চলে। জেটিঘাটে পৌঁছে বিশাল আকৃতির বোটে ওঠেন সবাই। বোটে গান, গিটার, বাঁশির সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ।

Advertisement

প্রায় ৩০-৩৫ মিনিটের বোট ভ্রমণের পর পৌঁছাই কাপ্তাই ধনপাতা বনবিহার। সেখানে ২০ মিনিটের বিরতির পর পরবর্তী গন্তব্য গরবা গুদির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। কাপ্তাই লেকের নীল জলরাশি, ছোট ছোট দ্বীপ, মেঘের লুকোচুরি দেখতে দেখতে অবশেষে পৌঁছে যাই গরবা গুদিতে।

হঠাৎ বৃষ্টি এসে কিছুটা মন খারাপ করলেও বৃষ্টির পর দ্বীপের সৌন্দর্য যেন আরও বেড়ে যায়। গরবা গুদির মাটির ঘর, রং-বেরঙের ফুল, ফলের গাছ, দোলনা, হ্যামক—সব মিলিয়ে এক নান্দনিক পরিবেশ তৈরি করে। দুপুরের খাবার শেষে শুরু হয় গেম অ্যাক্টিভিটিজ—বালিশ খেলা, বেলুন ফুটানো, বিস্কুট দৌড়সহ নানা খেলায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুয়েল দাশের গান ও বাঁশির সুরে সবাই মুগ্ধ হন। বিজয়ীদের জন্য ছিল ভিন্নধর্মী পুরস্কার—তেল, চাল, ডাল। ক্লাবের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয় পরিবেশবান্ধব উপহার।

সেদিন ছিল বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে বিভাগের সভাপতি ও মিডিয়া ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা দিলরুবা আক্তারের উদ্যোগে সবাই মিলে একটি কাঁঠাল গাছের চারা রোপণ করা হয়। বিদায়ের সময় সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। গরবা গুদির সৌন্দর্য ও আনন্দময় মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করে রাখেন অনেকেই। বোটে ফেরার সময়ও গান, হাসি, আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই।

এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ এবং অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আসগর চৌধুরী। এ ছাড়া বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র লেকচারার প্রশান্ত কুমার শীল, লেকচারার আকিব উল ওয়াদুদ আলম এবং তাসলিমা আক্তার ইরিন। এ ট্যুর ছিল মিডিয়া ক্লাবের প্রথম কমিটির শেষ আয়োজন। গরবা গুদির সৌন্দর্য ও আনন্দময় মুহূর্ত সবার মনে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখকদ্বয়: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।

এসইউ/জিকেএস