দেশজুড়ে

মেঘনায় ভেসে উঠছে মরা মাছ

মেঘনায় ভেসে উঠছে মরা মাছ

চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে ভেসে উঠছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। শুক্রবার (১৬ মে) ভোর থেকে জেলার মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে দশানী এলাকায় মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখা গেছে। এতে করে নদীপাড়ের মানুষজনের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

Advertisement

প্রতিদিনের মতো ভোরে মাছ ধরতে নদীতে নামেন জেলেরা। তখন দেখতে পান পানিতে ভেসে রয়েছে অসংখ্য মরা মাছ। বিশেষ করে জাটকা, চেউয়া, বাইলা, টেংরা, পুঁটি, চাপিলাসহ ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির দেশিয় মাছ। পঁচা মাছের দুর্গন্ধে নদীপাড়ের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।

ষাটনল এলাকার জেলে পলাশ বর্মণ বলেন, ‘নদীই আমাদের জীবন। কিন্তু এখন এ পানিতে মাছতো নেই, বরং বিষ ছড়িয়ে গেছে। কয়েক বছর ধরে এমন হচ্ছে। কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মাছ শূন্য হয়ে যাবে নদী।’

স্থানীয় নারী সেলিনা বেগম বলেন, ‘বাচ্চারা নদীতে খেলতে যায়, গোসল করে। এখনতো মনে হচ্ছে পানিতে হাত দিলেও অসুস্থ হয়ে যাবে। আমরা নদীর পানি সবসময় ব্যবহার করি কিন্তু এখন পারছি না।’

Advertisement

দশানী এলাকার মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে যা দেখলাম, তাতে আগামী কয়েক মাস নদী থেকে মাছ পাওয়া কঠিন হবে। বাজারে মাছের দাম বেড়ে যাবে, মানুষ কষ্ট পাবে।’

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শামসুদ্দিন বলেন, ‘যেসব এলাকায় মাছ মরে যাচ্ছে, ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। নদীর এ অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। মাছ মরার এ ঘটনা শুধু পরিবেশের ক্ষতি নয়, মানুষের জীবিকার ওপরও সরাসরি আঘাত। প্রতিদিন শত শত মানুষ এ নদীর ওপর নির্ভরশীল। বারবার অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’

মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, ‘এটি নিছক মাছ মরার ঘটনা নয়, এটি একটি জলজ পরিবেশগত দুর্যোগ। শীতলক্ষ্যা থেকে আসা দূষিত পানির প্রবাহ একাধিকবার এ এলাকায় বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এটি প্রথম নয়, একাধিকবার ঘটেছে এমন ঘটনা। ২০২৩ সালের মার্চ ও ২০২৪ সালের আগস্ট মাসেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তখনও মেঘনার পানি দূষিত হয়ে মাছের গণমৃত্যু হয়।’

পরিবেশ সংগঠন ‘মতলবের মাটি ও মানুষ’ এর সভাপতি শামীম খান বলেন, ‘নদীকে কেন্দ্র করে হাজারো পরিবার জীবন নির্বাহ করে। বারবার দূষণে নদী মৃতপ্রায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রয়োজন দ্রুত আন্তঃজেলা পরিবেশ কমিশন গঠন এবং কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।’

Advertisement

চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নদীতে মাছ মরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে ৩০ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানকার রিপোর্ট অনুযায়ী নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়, পিএইচ ও অক্সিজেনের হার কমে গিয়েছিল। এছাড়া নদীর তলদেশ দিয়ে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও কেমিক্যালযুক্ত পানি বয়ে যাচ্ছে। আবার কেন মাছ মারা যাচ্ছে সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে।’

শরীফুল ইসলাম/আরএইচ/এএসএম