দেশজুড়ে

কাপ্তাই হ্রদে কমছে পানি, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ ইউনিট বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদে কমছে পানি, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ ইউনিট বন্ধ

দেশের অন্যতম বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকায় সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে। দেশের একমাত্র এই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাঁচটি ইউনিটে দৈনিক ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে কেবল ৪০ মেগাওয়াট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৪০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে যে পরিমাণ পানি রয়েছে, সে পানি দিয়ে একটি ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আরও বেশি উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও সারা বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কাপ্তাই হ্রদের পানি সংরক্ষণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়েছে।

প্রকৌশলীরা আশঙ্কা করছেন বৃষ্টিপাত না হলে এবং কাপ্তাই হ্রদের পানি আরও কমতে থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ভাটা পড়বে। সেক্ষেত্রে পানি স্বল্পতায় উৎপাদন নামতে পারে তলানিতে ২৫–৩০ মেগাওয়াট।

দেশের একমাত্র জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর কাপ্তাই হ্রদের পানি কর্ণফুলী নদীতে নির্গত হয়। এরপর কর্ণফুলী নদীর পানি শোধনাগারে পরিশোধন করে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করে থাকে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কর্ণফুলী নদীর পানি বছরজুড়ে প্রবাহিত না হলে সমুদ্রের পানির গতিবেগ বাড়ার সুযোগ থাকায় লবণাক্ততা বাড়তে পারে ওয়াসার পরিশোধিত পানিতে। অনেকটা চট্টগ্রাম নগরে পানি সরবরাহের সঙ্গে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সংশ্লিষ্টতা থাকায় সারাবছর জুড়েই সচল রাখতে হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন।

Advertisement

এদিকে, কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, পানির পরিমাপের রুল কার্ড (সময়সূচি ভিত্তিক পানি উঠানামার মাপ) অনুযায়ী শুক্রবার (১৬ মে ) দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানি রয়েছে ৭৭ দশমিক ৩০ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। যদিও স্বাভাবিকভাবে পানি থাকার কথা ৯৩ দশমিক ৯০ এমএসএল। রুল কার্ডের হিসেবে বর্তমানে হ্রদে ১৬ দশমিক ৬০ এমএসএল পানি কম রয়েছে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বা রাঙ্গামাটি জেলার ওপর দিয়ে বড় ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ার সুযোগ এই সময়ে নেই। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনাও নেই।

এর আগে, ২০২৪ সালের আগস্টের শেষ দিকে ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজানের পানির ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি সর্বোচ্চ বিপদসীমায় পৌঁছায়। তখন ১০৮ দশমিক ৬৯ এমএসএল পানি সংরক্ষিত হয় কাপ্তাই হ্রদে। সে সময়ে হ্রদের পানির ভারসাম্য ঠিক রাখতে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি স্লুইস গেট বা স্প্রিলওয়ে (জলকপাট) খুলে দেওয়া হয়। আগস্টের শেষ দিকে ৫ ইঞ্চি করে স্লুইস গেট খোলা রাখা হলেও সেপ্টেম্বরে হ্রদের পানি বাড়ায় সর্বোচ্চ ৫ ফুট পর্যন্ত খুলে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাঁচ ইউনিট দিয়ে উৎপাদন হতো গড়ে ২১৫–২২০ মেগাওয়াট।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) মাহামুদ হাসান বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে একটি ইউনিট দিয়ে উৎপাদন রাখা হয়েছে। এক ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৪০ মেগাওয়াট। কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকায় আপাতত আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ নেই।

ষাটের দশকে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে গড়ে ওঠে বিস্তীর্ণ কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। পরবর্তী সময়ে ১৯৬২ সালে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া অংশে চালু করা হয় দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

Advertisement

আরমান খান/জেডএইচ/এমএস